শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,
১০ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলা English

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশমালা হস্তান্তর      জুলাই বিপ্লবের কৃতিত্ব জানালেন মির্জা ফখরুল      তাড়াশে গাছে গাছে আমের মুকুল ম-ম ঘ্রাণে মুখরিত       সশস্ত্র বাহিনী প্রধানকে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প      মুসলিম উম্মাহ’র শান্তি কামনার মধ্য দিয়ে চরমোনাই মাহফিল সমাপ্ত      সুনামগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১৪৪ ধারা জারি       ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চাওয়া ছাত্ররাই এখন রাজনীতিতে      
মুক্তমত
আদিবাসী, উপজাতি ও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী প্রসঙ্গে
উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গ্যা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫, ৭:২১ পিএম  (ভিজিটর : ১৩৩)
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বাংলাদেশে বৃহত্তর বাঙালি জাতি ছাড়াও রয়েছে ৫০টির অধিক আলাদা জাতিসত্তার বসবাস। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের তিন পার্বত্য জেলা— রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। যেখানে বসবাস করে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, পাংখোয়া, খিয়াং, ম্রো, লুসাই, খুমী, চাক। পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত এ জাতিগুলোকে পাহাড়ি নামেও ডাকা হয়।

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাংশে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের গারো, হাজং, কোচ এবং বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে খাসি ও মণিপুরিদের বসবাস করতে দেখা যায়। এ ছাড়াও কক্সবাজার, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় বাস করে রাখাইনরা।

অপরদিকে উত্তর-পশ্চিমাংশের দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা প্রভৃতি এলাকায় বসবাস করে সাঁওতাল, ওঁরাও, মাহালি মুন্ডা, মাল পাহাড়ি, মালো। বাংলাদেশে আরো কয়েকটি জাতির বসবাস করতে দেখা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাতি হলো— ডালু, হদি, পাত্র, রাজবংশী, বর্মণ, বানাই, পাহান, মাহাতো, কোল প্রভৃতি। যারা বৃহত্তর সিলেট, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলায় বসবাস করে আসছে।

বাংলাদেশে এসব আলাদা জাতীগুলোর নির্দিষ্ট একটি সাংবিধানিক নামের হ-য-ব-র-ল অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৩ (ক)’তে বলা আছে, বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী। এখন উপজাতি শব্দের অর্থ আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। একটি জাতি থেকে আরেকটি জাতির উৎপত্তিকে উপজাতি বলা যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের ৫০ টির অধিক জাতিসত্তাগুলোর নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে। যারা যুগযুগ ধরে বিভিন্ন পথ পরিক্রমায় এখনো টিকে আছে।

শেখ হাসিনা সরকারের চাপিয়ে দেওয়া এ উপজাতি, ক্ষুদ্র- নৃগোষ্ঠী শব্দগুলো সংশোধনের জন্য বছরের পর বছর দাবি উত্থাপন করা হলেও এর সূরাহা এখনো মেলেনি। রাজনৈতিক বেড়াজালে শব্দগুলো নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্কের শেষ এখনো চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যায়নি। একটি জাতি সংখ্যায় কম হতে পারে তবে ক্ষুদ্র বলাটা মানানসই নয় বলে নিজেদের আদিবাসী বলে দাবি করে আসছে। আদিবাসী ও ট্রাইবাল জাতিগোষ্ঠী কনভেনশন, ১৯৫৭ (নং ১০৭) অনুযায়ী, ক) স্বাধীন দেশগুলোর আদিবাসী এবং ট্রাইবাল সদস্যদের বেলায়, যাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা জাতীয় সমষ্টির অন্যান্য অংশের চেয়ে কম অগ্রসর এবং যাদের মর্যাদা সম্পূর্ণ কিংবা আংশিকভাবে তাদের নিজস্ব প্রথা কিংবা রীতি-নীতি অথবা বিশেষ আইন বা প্রবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

আদিবাসী ও ট্রাইবাল জাতিগোষ্ঠী কনভেনশন, ১৯৮৯ (নং ১৬৯) অনুযায়ী, খ) স্বাধীন দেশগুলোর জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে, যাদের আদিবাসী হিসেবে গণ্য করা হয় এ বিবেচনায় যে, তারা রাজ্য বিজয় কিংবা উপনিবেশ স্থাপনের কালে অথবা বর্তমান রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণের কালে এ দেশে কিংবা যে ভৌগোলিক ভূখণ্ডে দেশটি অবস্থিত সেখানে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠীর বংশধর এবং তারা তাদের আইনগত মর্যাদা নির্বিশেষে তাদের নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অক্ষুণ্ন রাখে। কিন্তু ‘আদিবাসী’ নিয়ে বিতর্কের সমাধান দেওয়া হয়েছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে। সংবিধানের ৬-এর ২ ধারা মতে, জাতি হিসেবে বাঙালি ও নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশি বলে বিবেচিত হবে। এছাড়া বাঙালি ব্যতীত অন্যান্য যারা আছে তারা উপজাতি, নৃ-গোষ্ঠী বলে পরিচিত হবে।

১৯৮২ সালের আগস্ট মাসে জাতিসংঘে বিশ্বের আদিবাসীরা তাদের মানবাধিকার, অধিকার ও স্বাধীনতা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সভা করেন। বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশে আদিবাসীদের জনসংখ্যা প্রায় ৩৭ কোটি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ থেকে ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালনের স্বীকৃতি পায় ৪৯/২১৪ বিধিমালায়। এরপর থেকে প্রতি বছর ৯ আগস্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক দিবসটি পালন করে থাকেন আদিবাসীরা। বিশ্বের সব আদিবাসী তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, অধিকার ও নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করেন। বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন জাতীসমূহ নিজেদের আদিবাসী বলে ২০০১ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছে। আবার অপরদিকে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই মনে করছে তারা আদিবাসী নয় বাঙালিরাই এই দেশের আদিবাসী।

আদিবাসী বলতে আদিকাল থেকে বসবাস করে আসছে বলে এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের মতে। কিন্তু নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ভাষা, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে জাতিসংঘের আদিবাসী ঘোষণাপত্র অনুযায়ী আদিবাসীর ক্যাটাগরির মধ্যে পরিগণিত হয়। বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তুকে আদিবাসী, উপজাতি ও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শব্দের জগাখিচুরির সংমিশ্রণ লেখা প্রায়ই দেখা যায়। আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দিয়ে হাসিনা সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে উপজাতি, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা নামে অভিহিত করেন। সাম্প্রতিক জুলাই বিপ্লবের পর দেশ সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। যেখানে পাহাড় থেকে সমতলের আনাচে-কানাচে দেশ সংস্কারের জোয়ারে দেওয়ালে গ্রাফিতি ছিল শিক্ষার্থীদের একটি  কর্মসূচি। সারা দেশের এ কর্মসূচিতে ‘আর নয় বৈষম্য প্রতিষ্ঠা পাক সাম্য’ লেখনীতে একটি গ্রাফিতি অংকন করা হয়। যেখানে পাতা ছেড়া নিষেধ বলেও বৃক্ষের পাশে লেখা হয়।

বৃক্ষের পাঁচটি পাতার মধ্যে আদিবাসী নামক একটি পাতা স্থান পায়। যেটি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে পিছনের কাভারে আদিবাসী শব্দযুক্ত গ্রাফিতি সংযুক্ত করে। গত ১২ জানুয়ারি ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেনিটি’ আদিবাসী শব্দের বাতিলের দাবিতে এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করলে রাতারাতি অনলাইন ভার্সনের পাঠ্যপুস্তক থেকে আদিবাসী শব্দটি বাতিল করা হয়। আদিবাসী জনগোষ্ঠীরা আশা করেছিল যে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের নতুন শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাম্প্রদায়িক এ সিদ্ধান্ত বাতিলপূর্বক আদিবাসীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সংবিধান সংস্কারের সঠিক ইতিহাস ও পরিচিতি তুলে ধরাসহ রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে আদিবাসীদের স্বীকৃতি সুনিশ্চিত করবে। কিন্তু বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ বির্নিমাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাষ্ট্রের নতুন শাসকগোষ্ঠী তার কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা বললেও পাহাড় ও সমতলে বসবাসরত আদিবাসীদের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপগুলোতে সেটির যথাযথ ও সঠিক প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

শুধু লেখালেখি, পাঠ্যপুস্তকে নয় বরং সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে আদিবাসী শব্দ সংযোজনের মাধ্যমে দেশের জাতিসত্তাসমূহের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ দূর করতে হবে। বৃহত্তর জাতির চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে সরে এসে সঠিক সংস্কারই আমরা আশাবাদী। ফ্যাসিবাদী কায়েম, শাসন-শোষণ, বঞ্চনার ইতিহাস জেনেও সেই একই পথে পা দেওয়া প্রগতিশীল ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মনে আঘাত হানে। সম্প্রীতির বিনির্মাণে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সব বৈষম্য দূরীকরণে সুস্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

লেখক : সমাজকর্মী।

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

জমি নিয়ে সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ২০
শালিখায় কালের সাক্ষী মুঘল আমলের মসজিদ
ভালুকায় পিকআপ-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে সিএনজি চালক নিহত
প্রেস ক্লাব সভাপতির পিতার ইন্তেকাল
কিশোরগঞ্জে ময়ূখ খেলাঘর আসরের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন

সর্বাধিক পঠিত

ভূঞাপুরে যুবদল নেতাকে কুপিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা
শহিদ দিবসের ফুল আনতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী
মহিলা জামায়াত নেত্রীকে ছুড়িকাঘাতে হত্যা
দেশে চলমান নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে নোবিপ্রবিতে মশাল মিছিল
গঙ্গাচড়ায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা মিস্টার গ্রেফতার

মুক্তমত- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝