আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল নয়, গণহত্যাকারী সিন্ডিকেট বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমির ড. শফিকুর রহমান।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে বরিশাল নগরীর হেমায়েতউদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে জামায়াত জেলা ও মহানগরের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, আমাদের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রিতী আছে সামাজিক সম্প্রিতী আছে। কিন্তু একটি গোষ্ঠি বাংলাদেশকে সাড়ে ২৩ বছর শাসন করেছে। তারা বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে দেয়নি। জনগণকে নানান ভাগে বিভক্ত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ, বিপক্ষ, ম্যাজরিটি, মাইনরিটি। তারা নিজেদের জাত হিসেবে ঘোষণা করেছিল। তাদের বাইরে যারা ছিল তারা আর এই জাতির না অন্য কিছু। আমরা সন্তানদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম ফ্যাসিজমকে বিদায় করার জন্য। সাড়ে ১৫ বছর আমরা দফায় দফায় আক্রমণ করেছি, সংগ্রাম করেছি। ফ্যাসিজম বিদায়ের হয়তো আমরা ভিত রচনা করেছি কিন্তু রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিজম বিদায় করতে পারিনি।
তিনি বলেন, শেষ আন্দোলনটি রাজনৈতিক ছিল না। ছাত্র যুব সমাজের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ছিল। তারা কোটা সংস্কারের দাবি করেছিল। সরকার তাদের দমন করার জন্য হাতুড়ে বাহিনী পাঠিয়েছিল। দুনিয়ায় মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য অনেকেই মারা যায়। কিন্তু ডানা মেলে গুলিকে আলিঙ্গন করে মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়া একমাত্র ব্যক্তি হচ্ছে আবু সাঈদ।
“বাংলাদেশে এত এত ঘটনা কেন ঘটলো? একটি দল ও একজন ব্যক্তির রাক্ষসী মানসিকতার কারনে। তারা ক্ষমতার রাক্ষস। তারা অর্থের রাক্ষস। তারা দাম্ভিক ছিলেন। বড় অহংকারী ছিলেন। মানুষকে, বিভিন্ন দলকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতেন। মানুষ বলে কাউকে সম্মান দিতেন না। দুনিয়ার কিছুটা পাওনা তারা পেয়েছেন। কিছুটা বাকি আছে। যেহেতু তারা গণহত্যাকারী ব্যক্তি ও দল। আমরা চাই গণহত্যাকারী দল ও প্রত্যেক ব্যক্তির বিচার হোক। ন্যায় বিচার হোক। বিদ্যমান আইনে তাদের যথাযথ পাওনাটা সঙ্গে দেওয়া হোক।”
তিনি বলেন, বিদেশে যারা পালিয়েছেন তাদেরকে বলি সত্যিই যদি দেশটাকে ভালোবাসেন আসেন, চলে আসেন। অসুবিধা নেইতো। আপনাদের আমলে আমরা দফায় দফায় জেলে গিয়েছিতো। জেলে থেকেছি। আমাদের কেমন রেখেছিলেন এখন আসলে আপনারা নাহয় সেইটা দেখার সুযোগ পেলেন। আপনরা মিথ্যা মামলায় সাজানো আদালতে ফাঁসি দিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দকে খুন করেছেন। কিন্তু আপনারাতো প্রকাশ্য দিবালোকের খুনি। দেশবাসী সাক্ষী, বিশ্ববাসী সাক্ষী। আপনারা লাশ গুম করতে গিয়ে তাড়াহুড়া করে লাশ ট্রাকের ওপর রেখে পেট্রোল দিয়ে আগুন দিয়েছেন। কোথায় ছিল আপনাদের মানবিক সত্ত্বাটুকু? কিভাবে আপনারা তা পারলেন, এই নির্দেশ দিলেন, এই গণহত্যা সংঘটিত করলেন? ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে যাদের খুন করলেন তাদের লাশগুলো গুম করলেন।
জামায়াতের আমির আরো বলেন, কেউ কেউ প্রশ্ন করেন নির্বাচন হলে ওই গণহত্যাকারী দল নির্বাচনে অংম নিতে পারবে কিনা? আমরা বলি আগে গণহত্যার বিচার হোক। ক্ষতিগ্রস্থ লোকেরা আগে তাদের হিসাবটা পাক। জনগণই রায় দিবে আওয়ামী লীগ এইদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে কিনা। রাজনীতির নাম যদি গণহত্যা হয় এমন দল বাংলাদেশের মানুষ বরদাশত করবে না। রাজনীতির নাম যদি জনকল্যান হয় জনগণ যাকে পছন্দ হয় তাকে বরণ করে নিবে।
আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে তারা কোন রাজনৈতিক দল নয়। বরং গণহত্যাকারী একটা সিন্ডিকেট। আমরা আওয়ামী লীগকে আহ্বান জানাবো, আমরা যা বলেছি তা আদালতে গিয়ে মিথ্যা প্রমাণ করুক।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামীকে। নেতৃবৃন্দকে একেএকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। কুরআনের পাখি আল্লামা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। গুম করা হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মীকে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত করা হয়েছে। আমাদের সবগুলো রাজনৈতিক কার্যালয় বন্ধ করে রেখেছে। শেষ পর্যন্ত তাদের রাজনৈতিক আত্মহত্যার চারদিন আগে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছে। যারা আমাদের পয়লা আগস্ট নিষিদ্ধ করলেন মাত্র চারদিনের মাথায় আল্লাহ তাদের মানুষের মনে নিষিদ্ধ করে দিলেন। এখানে আমাদের কোন বাহাদুরি নেই। অনেকে আন্দোলনের কৃতিত্ব দাবি করেন, অনেকে আন্দোলন মানতেও পারেন না। আমরা বলি এর মূল কৃতিত্ব আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের। তিনি জাতির সন্তানদের হিম্মত দিয়েছিলেন বুক সোজা করে দাড়াবার, তাই ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মু. বাবর। বক্তব্য দেন শহিদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর পিতা জাকির হোসেন, অসিম কুমার হালদারসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
কেকে/এজে