মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫,
১৫ মাঘ ১৪৩১
বাংলা English

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: রেলের স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান সরকারের      মাঝরাত থেকে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ট্রেন চলাচল      ড. ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নরেন্দ্র মোদির চিঠি      গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখতে ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ      আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচন চাই: জামায়াত সেক্রেটারি      পুতুলের দুর্নীতি মামলার তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখনো আসেনি: মুখপাত্র      ক্ষমতা আর সংসদের আসনের লোভ দেখিয়ে তরুণদের কেনা যাবে না: হাসনাত       
ইচ্ছেডানা
বোকা বাঘ
উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫, ৮:৫৫ পিএম  (ভিজিটর : ৪৬)

এক রাজার বাড়ির কাছে এক শিয়াল থাকত। রাজার ছাগলের ঘরের পেছনে তার গর্ত ছিল। রাজার ছাগলগুলো খুব সুন্দর আর মোটাসোটা ছিল। তাদের দেখলেই শিয়ালের ভারী খেতে ইচ্ছে হতো! কিন্তু রাজার রাখালগুলোর ভয়ে তাদের কাছে আসতে পারত না।

তখন শিয়াল তার গর্তের ভেতর থেকে খুঁড়তে শুরু করল। খুঁড়ে-খুঁড়ে সে তো ছাগলের ঘরে এসে উপস্থিত হলো, কিন্তু তবু ছাগল খেতে পেল না। রাখালের দল তখন সেখানে বসেছিল। তারা শিয়ালকে দেখতে পেয়েই ধরে বেঁধে ফেলল। তারপর তাকে খোঁটায় বেঁধে রেখে তারা চলে গেল। যাওয়ার সময় বলে গেল, ‘কাল এটাকে নিয়ে সবাইকে তামাশা দেখাব, তারপর মারব। আজ রাত হয়ে গেছে।’

রাখালরা চলে গেছে, শিয়াল মাথা হেঁট করে বসে আছে, এমন সময় এক বাঘ সেখান দিয়ে যাচ্ছে। শিয়ালকে দেখে বাঘ ভারী আশ্চর্য হয়ে বললে, ‘কী ভাগ্নে, এখানে বসে কী করছো?’
শিয়াল বলল, ‘বিয়ে করছি।’
বাঘ বলল, ‘তবে কনে কোথায়? লোকজন কোথায়?’
শিয়াল বলল, কনে তো রাজার মেয়ে! লোকজন তাকে আনতে গেছে।’
বাঘ বলল, তুমি বাঁধা কেন?’
শিয়াল বলল, আমি কিনা বিয়ে করতে চাইনি, তাই আমাকে বেঁধে রেখে চলে গেছে, পাছে আমি পালাই।’
বাঘ বলল, ‘সত্যি নাকি। তুমি বিয়ে করতে চাচ্ছো না?’
শিয়াল বলল, ‘সত্যি মামা। আমার বিয়ে করতে একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না।’
তা শুনে বাঘ ভারী ব্যস্ত হয়ে বলল, ‘তবে তোমার জায়গায় আমাকে বেঁধে রেখে তুমি চলে যাও না।’
শিয়াল বলল, ‘এক্ষুনি। তুমি আমার বাঁধন খুলে দাও, তারপর আমি তোমাকে বেঁধে রেখে যাচ্ছি।’
তখন বাঘের আনন্দ আর দেখে কে। সে অমনি এসে শিয়ালের বাঁধন খুলে দিল। শিয়ালও আর দেরি না করে, তাকে ভালো মতো খোঁটায় বেঁধে বলল, ‘এক কথা, মামা। তোমার শালারা এসে তোমার সঙ্গে হাসি-তামাশা করবে। তাতে তুমি চটো না যেন?’
বাঘ বলল, ‘আরে না। আমি তাতে চটি? আমি বুঝি এতই বোকা।’ এ কথায় শিয়াল হাসতে-হাসতে চলে গেল। বাঘ ভাবতে লাগল, কখন কনে নিয়ে আসবে।
সকালবেলায় রাখালের দল এসে উপস্থিত হলো। বাঘ তাদের দেখে ভাবল, ‘ওই আমার শালারা এসেছে। এক্ষুনি হয়তো ঠাট্টা করবে। আর তাহলে আমাকেও খুব হাসতে হবে।’
রাখালরা এসেছিল শিয়াল মারতে। এসে দেখল, বাঘ বসে আছে। অমনি তো ভারী একটা হইচই পড়ে গেল। কেউ-কেউ পালাতে চায়, কেউ-কেউ তাদের থামিয়ে বলল, ‘আরে, বাঁধা রয়েছে দেখছিস না? ভয় কী? কুড়ুল, খন্তা, বল্লম নিয়ে আয়।’
তখন একজন একটা মস্ত ইট এনে বাঘের গায়ে ছুড়ে মারল।
তাতে বাঘ বলল, ‘হিঃ, হিঃ, হিহি, হিহি।’
আর একজন একটা বাঁশ দিয়ে গুঁতো মারল।’
তাতে বাঘ বলল, ‘হিঃ, হিঃ, হিহি, হিহি।’
আর একজন একটা বল্লম দিয়ে খোঁচা মারল।
তাতে বাঘ বলল, ‘উঃ হু, হুঃ। হোহো হোহো হোহো।
—বুঝেছি তোমরা আমার শালা।’
আবার তারা বল্লমের খোঁচা মারল।
তাতে বাঘ বেজায় রেগে বলল, ‘দুত্তোর! এমন ছাই বিয়ে আমি করব না।’ বলে সে দড়ি ছিঁড়ে বনে চলে গেল।
বনের ভেতরে এক জায়গায় করাতিরা করাত দিয়ে কাঠ চিরত। একটা মস্ত কাঠ আধখানা চিরে রেখে, সেখানে গোঁজ মেরে করাতিরা চলে গিয়েছে। একই সময় বাঘ বনের ভেতর এসে দেখে, শিয়াল সেই আধচেরা কাঠখানার ওপর বিশ্রাম করছে।
শিয়াল তাকে দেখেই বলল, ‘কী মামা, বিয়ে কেমন হলো?’
বাঘ বলল, ‘না ভাগ্নে, ওরা বড্ড বেশি ঠাট্টা করে। তাই আমি চলে এসেছি।’
শিয়াল বলল, ‘তা বেশ করেছো। এখন এসো, দুজনে বসে গল্পস্বল্প করি।’
বলতেই বাঘ লাফিয়ে কাঠের ওপর উঠেছে, আর বসেছে ঠিক যেখানটায় কাঠটা খুব হাঁ করে আছে, সেখানে। তার লেজটা সেই ফাঁকের ভেতরে ঢুকে ঝুলে রয়েছে।
শিয়াল দেখল, এবার কাঠ থেকে গোঁজটি খুলে নিলেই বেশ তামাশা হবে। সে বাঘকে নানা ভাষায় ভোলাচ্ছে, আর একটু-আধটু করে গোঁজটিকে নাড়ছে। নাড়তে-নাড়তে এমন করছে যে, এখন টানলেই সেটা খুলে যাবে, আর কাঠ বাঘের লেজ কামড়ে ধরবে। তখন সে ‘মামা, গেলুম!’ বলে সেই গোঁজশুদ্ধ মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি দিতে লাগল।
আর বাঘের যে কি হলো, সে আর বলে কী হবে? কাঠ লেজ কামড়ে ধরতেই তো সে বেজায় চেঁচিয়ে এক লাফ দিল। সেই লাফে ফটাং করে লেজ ছিঁড়ে একেবারে দুইখান। তখন বাঘও শিয়ালের সঙ্গে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগল।
বাঘ বলল, ‘ভাগ্নে গেলুম! আমার লেজ ছিঁড়ে গিয়েছে।’
শিয়াল বলল, ‘মামা গেলুম! আমার কোমড় ভেঙে গিয়েছে!’
এমনি করে দুজনে গড়াগড়ি দিয়ে এক কচুবনে ঢুকে শুয়ে রইল। বাঘ আর নড়তে-চড়তে পারে না। কিন্তু শিয়াল বেটার কিচ্ছু হয়নি, সে আগাগোড়াই বাঘকে ফাঁকি দিচ্ছে।
সেই কচুবনের ভেতর ঢের ব্যাঙ ছিল, শিয়াল শুয়ে শুয়ে তাই ধরে পেট ভরে খেল। বাঘ বেদনায় অস্থির, সে ব্যাঙ দেখতেই পেল না-খাবে কি! কিন্তু তার এমনি খিদে পেয়েছে যে, কিছু না খেলে সে মরেই যাবে! তখন সে শিয়ালকে জিগ্যেস করল, ‘ভাগ্নে, তুমি কিছু খেয়েছো নাকি?’
শিয়াল বলল, ‘আর কী খাব? একটু কচুই খেয়েছি। খেয়ে আমার পেট বড্ড ফেঁপেছে।’
বাঘ আর কী করে। সে কচুই চিবিয়ে খেতে লাগল। তারপর গলা ফুলে, মুখ ফুলে, সে যায় আর কি!
তা দেখে শিয়াল বলল, ‘কী মামা, কিছু খেলে?’
বাঘ বলল, ‘খেয়েছি তো ভাগ্নে, কিন্তু বড্ড গলা ফুলেছে। তোমার তো পেট ফেঁপেছে, আমার কেন গলা ফুলল?’
শিয়াল বলল, আমি কিনা শিয়াল, আর তুমি কিনা বাঘ, তাই।’
লেজের ব্যথায় আর গলার ব্যথায় বাঘ ষোলো দিন উঠতে পারল না। এই ষোলো দিন কিছু না খেয়ে সে আধমরা হয়ে গিয়েছে।
এমন সময় সে দেখল, শিয়াল গা-ঝাড়া দিয়ে দিব্যি চলে যাচ্ছে। তাতে সে আশ্চর্য হয়ে জিগ্যেস করল, ‘কী ভাগ্নে, তোমার অসুখ কী করে সারল?’
শিয়াল বলল, ‘মামা, একটি ভারী চমৎকার ওষুধ পেয়েছি। আমি আমার হাত-পা চিবিয়ে খেলুম আর তক্ষুনি আমার অসুখ সেরে গেল। তারপর দেখতে-দেখতে নতুন হাত-পা হলো।’
বাঘ বলল, ‘তাই নাকি? তবে আমাকে বলনি কেন?’
শিয়াল বলল, ‘তুমি কি আর তোমার হাত-পা চিবিয়ে খেতে পারবে? তাই বলিনি।’
এ কথায় বাঘ ভীষণ রেগে বলল, ‘তুই শিয়াল হয়ে পারলি, আর আমি বাঘ হয়ে পারব না।’
শিয়াল বলল, ‘তুমি দুটো ঠাট্টার ভয়ে অমন বিয়েটা ছেড়ে এলে! এখন যে হাত-পা চিবিয়ে খেতে পারবে, তা আমি কী করে জানব? তখন বাঘ বলল, ‘পারি কি না এই দেখ!’ বলে সে নিজের হাত-পা চিবিয়ে খেল। তারপর তিন-চার দিনের মধ্যেই ভয়ানক ঘা হয়ে সে মারা গেল।

কেকে/এএম

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

কেন্দ্রীয় যুবদল নেতার সংর্বধনা সভায় বিশাল মিছিল
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে গণবিজ্ঞপ্তির রেজাল্ট প্রকাশিত
ক্ষেতলালে দুই ছিনতাইকারীকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ
জুলাই বিপ্লবে আহত ইমামের পাশে জেলা প্রশাসক আশরাফুল
‘কৃষি কাজে ভালো করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সম্পর্ক রাখতে হবে’

সর্বাধিক পঠিত

সীমান্তে ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিল বিএসএফ
কাউনিয়ায় পুত্রবধূকে ধর্ষণ চেষ্টায় শশুর আটক
মাঝরাত থেকে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ট্রেন চলাচল
বাঁশ তুলতে দেরি হওয়ায় টোল প্লাজায় বৈষম্যবিরোধীদের হামলা
সিলেটে চাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী নেতাকে শোকজ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝