মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫,
১৮ চৈত্র ১৪৩১
বাংলা English

মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫
শিরোনাম: চীন সফর শেষে দেশে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে ঈদ রোববার      দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চরমোনাই পীর      ঈদের দিন বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল      অস্ট্রেলিয়ায় ঈদুল ফিতরের তারিখ ঘোষণা      ঈদের ছুটিতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত মৌলভীবাজার      রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত চীনের      
ইচ্ছেডানা
বিলুপ্তপ্রায় শালিখা নামকরণের সেই শালিক পাখির
মাসুম বিল্লাহ, শালিখা (মাগুরা)
প্রকাশ: বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫, ১:৩০ পিএম  (ভিজিটর : ২৩৮)
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

মাগুরা জেলার অন্যতম একটি উপজেলার নাম শালিখা যা ছিল এক সময়কার অসংখ্য শালিক পাখির আবাস ভূমি। শালিক পাখি থেকে শালিখা উপজেলার নামকরণের গল্প থাকলেও গল্পের শালিক পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। শালিখার নামকরণের পিছনে শালি ধানের গল্প থাকলেও কথিত রয়েছে এক সময় শালিখায় অগনিত শালিক পাখির আনাগোনা ছিল। শালিক পাখির বিচরণে শালিখার প্রত্যন্ত অঞ্চল ছিল মূখরিত। শালিকের কলকাকলিতে ঘুম ভাঙ্গতো এখানকার মানুষের। সেই মনোমুগ্ধকর শালিক পাখি থেকেই মূলত শালিখার নামকরণ করা হয়েছে। 

গ্রাম-বাংলার অতি চেনা শালিক পাখিদের মধ্যে অন্যতম কাঠ শালিক। মাঝারি আকারের বৃক্ষচর পাখি শালিক। শালিকের মাথা, পিঠ, লেজ ধূসর রূপালী রংয়ের। গলার নিচ থেকে বুক ও লেজের গোড়া পর্যন্ত হালকা খয়েরি রংয়ের। গলায় রয়েছে মালার মতো অতিরিক্ত ধূসর পালক। বসন্তের শুরু থেকে বর্ষা পর্যন্ত এদের প্রজনন ও ছানা লালন পালনের মৌসুম। এসময় মা পাখি ৩-৪ টি ছোট লম্বাটে হালকা নীল রঙের ডিম পাড়ে। এরা দলবদ্ধ ভাবে থাকা এই শালিক পাখি লাজুক স্বভাবের। মানুষের কাছাকাছি কম ঘেঁসে। এরা গাছের কোটরে গর্ত করে বাসা বানায়। শালিকের জীবনকাল ৫ থেকে ৭ বছর হয়ে থাকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নয় বছরও বাঁচে।

অন্যসব পাখিদের মত শালিকপাখিও সর্বভূক। শহর, গ্রাম, প্রান্তর, ডাস্টবিন সর্বত্রই এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, শুঁয়োপোকা, কেঁচো, ফল, শস্যদানা, বীজ, ছোট সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী এবং মানুষের ফেলে দেওয়া খাবার ও উচ্ছিষ্ট। সুযোগ পেলে এরা মরা ছোটখাটো প্রাণীও খায়। ২০ সেন্টিমিটার লম্বাটে এ পাখির গায়ে ছিটছিটে কালচে পালক রয়েছে। বছরের কোন কোন সময়ে এটি খানিকটা সাদা রঙের হয়। এদের ঠোঁটের রং গাঢ় কমলা-হলুদ, আর চোখের মনি হালকা হলুদ রঙের। ঝুঁটি শালিকও সাদা-কালো, তবে তার মাথায় একটা সুন্দর ঝুঁটি আছে। উজ্জ্বল বড় বড় চোখ ও পা লালচে বর্ণের হয়। চোখে ধূসর বৃত্তের মাঝখানে কালো ফোঁটা। ঠোঁটের গোড়ার অংশটি সুরমা ও আগার অংশ হলুদ বর্ণের।  

শালিক পাখি প্রজননের সময় অন্য পাখির বাসায় ডিম দেয়। পুরনো ও বড় গাছ এবং জঙ্গল কেটে ফেলায় তারা আশ্রয় হারাচ্ছে। শালিখার গ্রামের মাঠে-ঘাটে, ঝোঁপঝাড় ও বন বাদাড়ের গাছে-গাছে ঘুঘু, চড়ুই, ময়না, টিয়া, জাতীয় পাখি দোয়েলসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি দেখা গেলেও কালের বিবর্তনে এখন আর চিরচেনা শালিক পাখির দেখা মেলে না। ভোর বেলা পাখির কলরবে মুখরিত গ্রাম এখন প্রায় পাখি শূন্য। বন-জঙ্গলের অপরূপ দৃশ্যপট এখন বদলে গেছে। 

পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, পাখির বিচরণ ক্ষেত্র, খাদ্য সঙ্কট, পাখির অভয়াশ্রম না থাকা ও জলবায়ুর পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে প্রায় বিলুপ্তির পথে শালিক পাখিসহ নানাবিধ দেশীয় প্রজাতির পাখি। এখন আর শোনা যায় না শালিক পাখির কিচিরমিচির শব্দে শিহরণ জাগানো সেই সুর। 

সরেজমিনে শালিখা উপজেলার ধনেশ্বরগাতী, গঙ্গারামপুর, বুনাগাতী, শতখালী , শালিখাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, শতখালী ও গঙ্গারামপুরের কিছু এলাকার ঝোপঝাড়ে কিছু পাখি আছে তবে তা আগের তুলনায় অপ্রতুল। 

শতখালী ইউনিয়নের বইরা গ্রামের ছান্টু মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় আগে শালিক, দোয়েল , ময়নাসহ অসংখ্য দেশি পাখি ভরপুর ছিল কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশ ও খাদ্যসংকটের কারণে তা এখন অনেক কমে গেছে । গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামের মাজেদুল ইসলাম বলেন, এখনতো বাগানের সংখ্যা কম তাই দেশি পাখির সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। 

জানা যায়, শালিক পাখি  ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসল রক্ষা করার পাশাপাশি মলত্যাগ করে জমির উর্বতা বৃদ্ধি করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  আড়পাড়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের ধলা কাজী, শুকুর বিশ্বাসহ গ্রামের কয়েকজন পাখিপ্রেমীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাঁশের ঝাড়, আমের বাগান, বাড়ির ছাদে যেসব পাখি সব সময় দেখা যেত, ওই পাখি এখন আর চোখে পড়ে না। তবে কম সংখ্যক ঘুঘু, কাক, মাছরাঙ্গা ইত্যাদি পাখি গ্রামে বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও শালিক পাখি তেমন আর চোখে পড়ে না। 

দেশীয় পাখি কমে যাওয়ায় জুম জেনারেশনের লোকেরা পাখির গান ও কলকাকলি থেকে বঞ্চিত থাকায় তারা অনেক পাখিই চেনে না। দিন দিন শিকারিদের দৌরাত্ম্য ও বন বাগান কেটে বসতি স্থাপন করায় পাখিশূন্য হয়ে যাচ্ছে পুরো এলাকা। এছাড়াও পাখির আবাসস্থল ধ্বংস, ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, বনাঞ্চল উজাড়সহ নানাবিধ কারণে শালিখা খ্যাত শালিক পাখিসহ অনেক পাখিই এখন বিলুপ্তির পথে।

শ্রী ইন্দ্রনীল গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, পাখি শিকারসহ জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারনে দোয়েল পাখি বর্তমানে সচরাচর চোখে পড়ে না, বর্তমানে অনেকটা প্রায় বিলুপ্তের পর্যায়, পাখি শিকার ও ছোট খাল বিল নদী নালা ভরাট বন্ধ করা সহ সামাজিক ভাবে মানুষকে সচেতন করতে পারলে শালিক পাখি সহ সকল প্রকার দেশীয় পাখির প্রজনন বাড়বে। পাখি শিকার বন্ধ ও পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল পাশাপাশি পক্ষীকূল সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  শালিখা   শালিক পাখি   বিলুপ্তপ্রায়  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭১৯
মিয়ানমারে দ্বিতীয় দফায় ত্রাণ ও ওষুধ প্রেরণ বাংলাদেশের
ভাঙ্গায় ইভটিজিংয়ে বাধা দেওয়ায় ৫ জনকে কুপিয়ে জখম
নীলফামারীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ চেকপোস্ট
বাঞ্ছারামপুরের রুপসদীতে বালু উত্তোলন, ধ্বংস হচ্ছে আবাদী জমি

সর্বাধিক পঠিত

লোহাগাড়ায় বাস সংঘর্ষে নিহত ৫
পবিত্র ঈদুল ফিতরে ইসলামী আন্দোলনের খাদ্য বিতরণ
সুন্দরগঞ্জে ঈদ পুনর্মিলনী, ঐক্য, আনন্দ ও সংস্কৃতির মিলনমেলা
নীলফামারীতে উৎসবমুখর ঈদুল ফিতর উদযাপিত
খালেদা জিয়ার পরিবারের ঈদের ছবি পোস্ট করে যা বললেন আসিফ নজরুল
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close