টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী-বারোমারী সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এখনো। বিধ্বস্ত হওয়ার তিন মাস পেরুলেও মেরামত করা হয়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগের দুই লেনের এ সড়কটি। ফলে দুর্ভোগে ওই সড়কে চলাচলকারী ছোট, মাঝারি ও ভারিসহ সবধরনের যানবাহন ও পথচারীরা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ অক্টোবর স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলের বন্যার মুখোমুখি হয় ভারত সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুর। ওই বন্যার ভয়াবহতায় পানির তোড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী-বারোমারী সড়ক। এতে দুই লেন সড়কের দুইটি স্থানে বড় আকারে ভাঙনসহ সড়কের দুইপাশে অন্তত ৩০০ মিটার ভেঙে গেছে। এতে যানচলাচল বন্ধসহ ভোগান্তিতে রয়েছে এলাকাবাসী। এমতাবস্থায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করে জনদুর্ভোগ কমাতে দ্রুত রাস্তা মেরামতসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী ভুক্তভোগীদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নন্নী উত্তরবন্দ এলাকায় দু’টি স্থানে দুই লেনের এ সড়কটি এতোটাই গভীর ও ভয়াবহভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে যে পায়ে হেঁটে মানুষ পারাপারের জন্য স্থানীয়ভাবে তৈরি করতে হয়েছে বাঁশের সাঁকো। রাস্তার দুটি অংশে ৬৫ মিটার দীর্ঘ গভীর খাদ ছাড়াও প্রায় এক কিলোমিটারজুরে রাস্তার দুইপাশে ধ্বসে খাদে পরিণত হয়েছে।
তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সড়কটি পরিদর্শন করার পর বরাদ্দ এসেছে৷ দ্রুত দুইটি কালভার্ট নির্মাণসহ সড়কটি মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে সড়কের এই বেহাল দশায় নাকুগাঁও স্থলবন্দর, বারোমারী মিশন,বারোমারী বাজার, নন্নী উচ্চ বিদ্যালয়, নন্নী পোঁড়াগাও মৈত্রী কলেজ, নন্নী ইউনিয়ন পরিষদ, নন্নী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পৌছতে ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের। তবে বন্যায় সড়কটি বিধ্বস্ত হওয়ার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও মেরামত তো দূরের কথা, এক মুঠো মাটিও ফেলেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কর্তৃপক্ষ। যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে তৈরি করেনি বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও তৈরি করেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এদিকে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়াও ছোট-বড় সবধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে এ সড়কে। স্থানীয় বাসিন্দাসহ ওই পথে চলাচলকারী অন্যান্য এলাকার মানুষ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত পোহাচ্ছেন ভোগান্তি। ভাঙা সড়কের দুইপাশে বারবার যানবাহন পরিবর্তন করতে গিয়ে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় আমাদের যাতায়াত খুব সমস্যা হচ্ছে। বারবার অটোরিক্সা পরিবর্তন করে চলাচল করায় ভাড়াও বেশি লাগছে। সন্ধ্যা হয়ে গেলে এখন গাড়িও পাওয়া যায় না। এতে প্রতিদিন কলেজে যাওয়াই এখন কষ্টের।
কৃষক ইউসুফ আলী বলেন, ভারী কোন জিনিস নিয়ে এখন এই পথে যাতায়াত করতে পারি না। বাঁশের সাঁকো দিয়ে এই ভাঙা পথ পার হয়ে চলাচলে খুবই কষ্ট হয়। সড়কটি দ্রুত মেরামত করা হলে আমাদের খুব উপকার হত।
অটোচালক হারেজ আলী বলেন, দীর্ঘ ভাঙা সড়কের দুই পাশে আমরা অটোরিক্সা নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকি। এই পথে কোনো পণ্য নিয়ে যাতায়াত করা যায় না। এতে যাত্রীও কমে গেছে, আমাদের আয়ও কমে গেছে। তাই বাধ্য হয়েই আমরা ভাড়া কিছুটা বাড়িয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বিধ্বস্ত সড়কটি পরিদর্শন করে যাওয়ার পর আমরা সম্প্রতি বরাদ্দ পেয়েছি। ভাঙা অংশে দুটি কালভার্ট নির্মাণসহ নকশা করে বিধ্বস্ত সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।