হবিগঞ্জের সাবেক এমপি মো. আবু জাহির। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে স্ত্রী সন্তানসহ রয়েছেন পলাতক। এরই মধ্যে বের হতে শুরু করেছে তার অবৈধ সম্পদের তথ্য। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে তার নামে বেনামে থাকা সম্পদের হিসাব। যার তেমন কিছুই তার নির্বাচনী হলফনামায় উল্লেখ নেই। জেলাজুড়ে আলোচিত হয়ে উঠে কত সম্পদের মালিক আবু জাহির।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) সিনিয়র স্পেশাল জজ জেসমিন আরা বেগম এ আদেশ দেন।
দুদকের হবিগঞ্জের পিপি অ্যাডভোকেট শামসুল হক আবু জাহিরের স্থাবর অস্থাবর
সম্পদ ক্রোক ও জেলা প্রশাসককে রিসিভার নিয়োগের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত
করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন হবিগঞ্জ সমন্বিত কার্যালয়ের সরকারি আইনজীবী মো. সামছুল হক বলেন, দুদক বেশ কিছু দিন ধরেই মো. আবু জাহিরের সম্পদ অনুসন্ধানে কাজ করছিল। ইতিমধ্যে যেসব সম্পদের হিসাব পাওয়া গেছে তা ক্রোকের আদেশ চেয়ে বুধবার হবিগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আবেদন জানালে বিচারক তা জব্দের নির্দেশ দেন।
দুদকের দেওয়া আবেদনে জানা যায়, আবু জাহিরের নামে ঢাকার গুলশানে একটি এপার্টমেন্ট যার মূল্য ১ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, হবিগঞ্জ টাউন হল রোডে একটি ৫তলা বাড়ি যার মূল্য ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, সুলতান মাহমুদপুর মৌজায় ১ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ৭১ শতাংশ জমি, একই মৌজায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ৮৯ শতাংশ জমি, ৮৮ হাজার টাকা মূল্যের ৩১ শতাংশ জমি, ১৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যের ৩২ শতাংশ জমি, ৫ লাখ ৬ হাজার টাকা মূল্যের ১২ শতাংশ জমি, ২৩ লাখ ৭৩ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের ৫৪.৮ শতাংশ জমি এবং ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা মূল্যের ২ শতাংশ জমি রয়েছে।
এছাড়া তার নিজ নামে ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ২৪০ টাকা মূল্যের একটি বিলাশ বহুল জিপ গাড়ি, ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৬ টাকা মূল্যের একটি বিলাশবহুল প্রাইভেট কার আছে। কৃষি ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায় আবু জাহির ও আল-আমিন এর নামে পৃথক দুটি যৌথ একাউন্টে ২৬ লাখ ২১ হাজার ১১৪ টাকা জমা আছে। আমেরিকান লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে তার নিজের নামে ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকার একটি পলিসি আছে।
মো. আবু জাহিরের স্ত্রী আলেয়া আক্তারের নামে হবিগঞ্জ শহরের সুলতান মাহমুদপুর মৌজায় রয়েছে ৮২ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমির একটি বাড়ি, ৬ লাখ ৫০ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের ১৫ শতাংশ জমি। তার নামে আমেরিকান লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে ১৪ লাখ ৪৮ হাজার ৮৪৬ টাকার এবং ৪ লাখ ৪৪ হাজার ২৪২ টাকার পৃথক দু’টি বিমা পলিসি আছে।
তার ছেলে ইফাত জামিলের নামে হবিগঞ্জ শহরের সুলতান মাহমুদপুর মৌজায় ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১৫ শতাংশ জমির উপর একটি বাড়ি, একই মৌজায় ২৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ৬২.০৮ শতাংশ জমি, চুনারুঘাটে গাজীপুর মৌজায় ৩ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ টাকা মূল্যের ৪২ শতাংশ জমি এবং একই স্থানে ২ লাখ ৬৫ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের ৩১.৫ শতাংশ জমি আছে। তার নামে একটি বিও একাউন্টে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩ টাকা, আমেরিকান লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩ টাকার এবং ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৩০১ টাকার পৃথক দু’টি পলিসি আছে।
আবু জাহিরের মেয়ে আরিফা আক্তার মুক্তির নামে হবিগঞ্জ শহরের সুলতান মাহমুদপুর মৌজায় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১৫ শতাংশ জমি। পূবালী ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায় ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬২ টাকা, একটি বিও একাউন্টে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮২৩ টাকা রয়েছে।
তার ভাই বদরুল আলমের নামে শায়েস্তাগঞ্জে শিল্পাঞ্চলে অলিপুরে ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমি, ওই স্থানে ১১ শতাংশ জমির মূল্য ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সেখানে নির্মিত একটি টাওয়ার ২ কোটি ৩৬ লাখ ৮১ হাজার ৭২১ টাকা। আমেরিকান লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে তার নামে ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৮ টাকার পৃথক ৪টি পলিসি আছে। তার আরেক ভাই আল-আমিনের নামে জনতা ব্যাংকের হবিগঞ্জ শাখায় জমা আছে ২৫ লাখ টাকা।
জানা গেছে, অবশ্য দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া সম্পদের প্রকৃত বাজার মূল্য আরও কয়েকগুণ বেশি হবে। এর বাইরেও তার আরও বিপুল পরিমান সম্পদ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া তার নির্বাচনী হলফনামায় স্ত্রীর নামে একটি বিলাসবহুল গাড়ি, স্ত্রী সন্তান এবং নিজের নামে ২৩৮ ভরি স্বর্ণ থাকলেও তা অনুসন্ধানে আসেনি। আবু জাহিরের বিরুদ্ধে ভূমি দস্যুতা, চাঁদাবাজি, সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক। তার এবং পরিবারের নামে আরও সম্পদ রয়েছে কি-না তাও অনুসন্ধান চলছে বলেও আদালতে প্রেরিত দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কেকে/এএম