সাজ সাজ রব পড়েছে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত যশোরের সাগরদাঁড়িতে।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকাল ৪টা থেকে এখানে অনুষ্ঠিত হবে মধুমেলা। যা চলবে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। কবির ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই মেলার আয়োজন করেছে যশোর জেলা প্রশাসন।
প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন মধুমেলা উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব ও কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রাজনারায়ণ দত্ত, মা জাহূবী দেবী। মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক।
তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্য। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি- দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলী, হেকটর বধ ইত্যাদি।
১৮৭৩ সালের ২৯ জুন দুপুর ২টায় মারা যান মহাকবি মধুসূদন দত্ত। মধুমেলা উদ্যাপনে মেলার মাঠে কঠোর নিরাপত্তা বলয় থাকছে। মেলাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে থাকছে যাত্রা, সার্কাস, জাদু, পুতুল নাচ, মৃত্যুকুপসহ ১৫৭টি বড় স্টল।
এছাড়া বিভিন্ন খাবারের দোকানসহ শত শত ছোট ছোট বিভিন্ন পসরার দোকান। হস্ত শিল্প ও শিশুদের বিনোদনের সকল ব্যবস্থা রাখাও হয়েছে। প্রায় ৪৪ লাখ টাকায় মেলার মাঠ ইজারা পেয়েছেন সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম হোসেন খান। মূলত সারা বছর কবিকে নিয়ে আলোচনা বা গবেষণা না থাকলেও মাঘ মাসের শুরুতেই জন্মে কবির প্রতি ভালোবাসা। তাই এ সময় দেশ বিদেশের পর্যটক ও অস্যখ্য পিকনিক পার্টিসহ দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার কবি প্রেমীর আগমন ঘটে থাকে মধুকবির নিভৃত পল্লী সাগরদাঁড়িতে।
প্রতিদিন মধুমঞ্চে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির জীবনীর ওপর আলোচনা। এবারের সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার মধুমঞ্চে কবির জীবনীর উপর আলোচনায় কেশবপুরের কোনো সাংবাদিককে না রাখায় স্থানীয় সাংবাদিকদের ভেতর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, কবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলার সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। গত বছরে মানুষের ভিড়ের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিকল্প একটি নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। মেলায় পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি এবারের মধুমেলায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে।
মধুমেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি যশোর জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী দিনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যশোর পুলিশ সুপার মো. জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ, যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কেশবপুর উপজেলা সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যশোর জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, যশোর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট ইসহক, যশোর ইন্সটিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু, যশোর প্রাচ্যসংর্ঘের প্রতিষ্ঠাতা লেখক গবেষক বেনজীন খান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেশবপুরের আমির অধ্যাপক মো. মোক্তার আলী ও যশোর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব জেসিনা মুর্শিদ প্রাপ্তি প্রমুখ।
কেকে/এএম