জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের বন্দুকের মুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করেছে শিক্ষার্থীরা। এই অভ্যুত্থানের ৬ মাস পার হওয়ার পর অনেক শিক্ষার্থী বলছেন, তাদের চাকরি খুঁজে পাওয়া যেন প্রতিবাদের ব্যারিকেড সামলানোর চেয়েও কঠিন। বার্তা সংস্থা এএফির প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে আরব নিউজ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ রিজওয়ান চৌধুরীর মতো যুবকদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন এখন অনেকটা ম্লান। তিনি বলেন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে তাদের কাছ থেকে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না।
২৫ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী অভ্যুত্থানের সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি এখন বলছেন, মূলত বেকারত্বই ছিল গত বছরের ৫ আগস্টের প্রতিবাদের প্রধান কারণ। তবে বিপ্লবের পর এই সমস্যার সমাধান হয়নি বরং আরও প্রকট হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে চাকরিপ্রত্যাশীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৬০ হাজারে পৌঁছেছে যা তার আগের বছরে ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। বলা চলে, বেকারত্বের সংখ্যা ছয় শতাংশ বেড়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে সতর্ক করে বলেছিল, দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ‘গুরুতরভাবে ধীরগতিতে’ চলছে, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি দ্বিগুণের ঘরে পৌঁছেছে। তারপর ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে তৈরি হলো সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাওয়া। পাশাপাশি ব্যয়ের চাপও দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় অনেকের কাছেই শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির উচ্ছ্বাস এখন ম্লান হতে চলেছে।
পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগ থেকে স্নাতক করা রিজওয়ান বলেন, ‘যদিও ড. ইউনূস তার মন্ত্রিপরিষদে ছাত্রনেতাদের রেখেছেন, তবে আমি মনে করি আমাদের দাবিগুলো উপেক্ষা করা হচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধিরা প্রশাসনে থাকলেও, আমাদের কণ্ঠস্বর তারা শুনতে পাচ্ছেন কিনা সে ব্যাপারে আমি অনিশ্চিত।’
৩১ বছর বয়সী শুক্কুর আলী সাহিত্য থেকে স্নাতক পাস করে তার বৃদ্ধ ও অসুস্থ বাবা-মাকে সাহায্য করার জন্য খণ্ডকালীন চাকরি করছেন। তিনি এএফপিকে বলেন, আমি কর্পোরেট চাকরি, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও আবেদন করেছিলাম কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। এখন যে কাজ পাচ্ছি সেই কাজই করছি শুধুমাত্র আমার ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য।’
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলছে, তারা এই সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই কর সংগ্রহ করে সরকার জনখাতে বিনিয়োগ করবে। এতে বিপুল সংখ্যক চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে।
অনলাইন চাকরির প্ল্যাটফর্ম বিডিজবস- এর প্রধান ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘সরকারি খাত প্রতি বছর সর্বোচ্চ ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ গ্রাজুয়েট নিয়োগ করতে পারে, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক হন। আর বেসরকারি খাত চাকরি দিতে পারে ৮৫ শতাংশ গ্রাজুয়েটকে। তবে সেখানেও আশার আলো কম। ৫ আগস্ট থেকে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে নিয়োগ ধীরগতিতে চলছে।’
ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, তরুণ চাকরিপ্রত্যাশীদের সহায়তায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারকে। এতে তরুণদের ব্যবসা শুরুর জন্য ঋণ প্রকল্প থাকতে হবে।
কেকে/এজে