শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫,
১১ মাঘ ১৪৩১
বাংলা English

শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: হার্ডলাইনে সরকার-বিএনপি, নির্বাচন ইস্যুতে বিরোধ       লন্ডন ক্লিনিক থেকে আজ তারেক রহমানের বাসায় যাবেন খালেদা জিয়া      ২৬ জানুয়ারি গুলশান-২ এলাকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ      ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত থাকতে হবে: মাহমুদুর রহমান       ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে নির্বাচন, ভোট ব্যালটে      বড় বড় কোম্পানি বাংলাদেশে ইনভেস্ট করতে চায়: প্রেস সচিব      ‘নির্বাচন নিয়ে সময়ক্ষেপণ হলে অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠতে পারে’      
খোলাকাগজ স্পেশাল
হার্ডলাইনে সরকার-বিএনপি, নির্বাচন ইস্যুতে বিরোধ
শিপার মাহমুদ
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ১০:৪৭ এএম  (ভিজিটর : ৫৫)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

আগামী জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা সমিকরণ। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিকদল বিএনপি। একই সুরে কথা বলেছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিকদলগুলোও। 

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন পরিকল্পনাকে ‘ভালো চোখে দেখছে না’ কোনো কোনো রাজনৈতিক দল। এমন অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা না থাকায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়েই নির্বাচন হবে। তাদের সেই প্রস্তুতি রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি)  জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় ‘বেশ কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি নিরপেক্ষ না থাকে, তাহলে একটা নিরপেক্ষ সরকার দরকার হবে নির্বাচনের সময়ে। আমি কথাটা বলছি যে, এর কারণ আছে। কারণ হচ্ছে আমরা দেখছি যে, বেশ কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা পালন করতে পারছে না। 

মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যেও পাল্টা জবাব দিয়েছেন সরকারের এক উপদেষ্টা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে এক পোস্টে লিখেন, বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটা ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে। ১/১১-এর বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটা ১/১১ সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে। তার পোস্টে সেনানীবাসের বৈঠকসহ মির্জা ফখরুলের বক্তব্যেও কড়া জবাব দেন।
 
নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এ কথাটা বারবার বলতে চাই, নির্বাচনে কে আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয় কিন্তু জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেটার জন্য আমরা লড়াই করেছি দীর্ঘ ১৫ বছর। সেই কারণে বলেছি যে, আমাদের দরকার সত্যিকার অর্থেই বর্তমান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছেন সেই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। স্বাভাবিকভাবে একটা ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পরেই জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন পর্যন্ত সমাজের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, সেই অবস্থায় কিন্তু আমরা এ ধরনের একটা ব্যবস্থা দেখে এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না যে, দেশের মানুষের প্রত্যাশাগুলো পূরণ হবে।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমাদের আমলাতন্ত্রে আগের যে ব্যবস্থা ছিল, সেই ব্যবস্থায় এখনো সচিবালয় থেকে শুরু করে সব প্রশাসনে তারা একইভাবে তাদের ভূমিকা পালন করছে। কোনো রদবদল হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, স্কুল-কলেজগুলোতে সেই ধরনের লেখাপড়া হয় না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে, এটা অতীত থেকেই এসেছে এবং সেই পরিবর্তন এত অল্প সময়ে সম্ভবও নয়; কিন্তু আমরা সেই পরিবর্তনগুলো চাই। সেই কারণে আমরা বলেছি যে, নির্বাচনটা দ্রুত হওয়া দরকার। নির্বাচন দ্রুত হলে যে দল ক্ষমতায় আসবে তার যে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট টু পিপলস থাকবে সেই কমিটমেন্টগুলো পালন করার জন্য অবশ্যই তারা দায়বদ্ধ থাকবে।

নাম উল্লেখ না করে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতার সমালোচনা করে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে পোস্ট করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তিনি তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির কোনো দ্বন্দ্ব না থাকার কথা বললেন অকপটে। অথচ তিনি ভুলে গেলেন, এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। গুম, খুন ও গণহত্যা করে বাংলাদেশকে অরাজকতার শীর্ষ চূড়ায় নিয়ে গেছে।’ হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের কাঠামোগত পরিবর্তন করার সময় ও সুযোগ এলো, অথচ বিএনপি দেশ পুনর্গঠনের এ সুযোগকে অবমূল্যায়ন করে হাজির হলো ১/১১ সরকারের ফর্মূলার আলাপ নিয়ে। ওদিকে অন্তর্বর্তী সরকার যখন দেশ সংস্কারের কাজে নিয়োজিত হলো তখন বিএনপি এসে বলল, এ সংস্কার করার ম্যান্ডেট বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। অথচ বিএনপি এ কথা ভুলে গেল, গণঅভ্যুত্থানের ফলে গঠিত হওয়া সরকারের ম্যান্ডেট ৬০-৭০ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়া রাজনৈতিক দলের চেয়েও বেশি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ‘চরিত্রের দিক থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠন করা হলেও এটি একটি দল নিরপেক্ষ সরকার। দল নিরপেক্ষ সরকারের চরিত্রটা ধরে রাখতে হবে। আমরা সবাই (রাজনৈতিক দলগুলো) এই সরকারকে সমর্থন করছি। সরকারকে এই জায়গটা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। মির্জা ফখরুলের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি আরও অনেক আগেই সরকার নিরপেক্ষতা নিয়ে কথা বলেছি। ছাত্রদের আবেগ আছে, এটা সম্মান জানাই। কিন্তু অতিকথন টোটালি গ্রহণযোগ্য নয়। ছাত্ররা দল এবং রাজনীতি করতে পারেন। প্রশাসনের ছত্রছায়া থেকে বের হয়ে এসে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে হবে। তা না হলে সম্ভাবনাটা শুরুতেই হোচট খাবে। তখনই দূরত্বেও জায়াগটা তৈরি হবে, আমাদেরকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু খোলা কাগজকে বলেন, মির্জা আলমগীর সাহেব যথাযথই বলেছেন। ছাত্র আন্দোলন করেছে ২০/২৫টি রাজনৈতিক সংগঠন। ওখানে থেকে বের হয়ে গেছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য সংগঠনগুলো। এখানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটা সংগঠনের সঙ্গে যখন ড. ইউনূস বৈঠক করেন তখনই সরকারের নিরপেক্ষতা থাকে না। তিনি বলেন, তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) সরকার থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতি করতে পারে। কারণ আন্দোলন কোনো একক ব্যানারে হয়নি। আন্দোলনটা ছিল যৌথ একটা প্লাটফর্মে। সুতরাং নিরপেক্ষ সরকারে থেকে রাজনীতি করার সুযোগ নেই। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন খোলা কাগজকে বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেওয়ার কিছু নেই। ছাত্ররা আসলে তাদের জায়গা থেকে সরল বক্তব্য দিচ্ছে, কিন্তু অবস্থান পরিবর্তন করছে অন্য কেউ। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিএনপির প্রশ তোলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাহলে বিএনপিও নির্বাচন না করুক। কারণ, সরকারে বিএনপির অনেকেই আছে। পাশাপাশি অন্য দলেরও রয়েছে। যদি স্টেকহোল্ডারের কথা আসে সেক্ষেত্রে সকল দলেরই এখানে (সরকারে) অংশগ্রহণ রয়েছে। তবে কী আমরা বলবো আগামী নির্বাচনে সে দলগুলোও অংশগ্রহণ না করুক, এটা বলা কী আমাদের উচিত হবে?’ বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।  

এদিকে বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী নির্বাচন অফিসে ভোটার তালিকা হালনাগাদ-২০২৫ উপলক্ষে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আব্দুর রহমান মাছউদ বলেছেন, আমরা প্রভাবমুক্ত থেকে জাতিকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চাই। কোনোভাবেই প্রভাবান্বিত হওয়ার সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময়ের মধ্যে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসি মাছউদ আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে। সত্যিকার অর্থে আমরা এখন জাতীয় নির্বাচন নিয়েই কাজ করছি। স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে এখনো আমরা ভাবছি না। ২০২৫ সালের শেষের দিকে অথবা ২০২৬ এর শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  হার্ডলাইনে সরকার   বিএনপি   নির্বাচন ইস্যুতে বিরোধ   
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ঈশ্বরদীতে সমন্বয়কের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলা
শেখ হাসিনার আমলের প্রবৃদ্ধির পুরোটাই ভুয়া: রয়টার্সকে ড. ইউনূস
৯ ঘন্টা পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক
মিরসরাইয়ে আনন্দ ভ্রমণের বাস খাদে পড়ে নিহত ১, আহত ১৫
দশম গ্রেডের দাবিতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের সমাবেশ

সর্বাধিক পঠিত

আক্কেলপুরে পৃথক স্থানে দুই নারীর লাশ উদ্ধার
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অর্ধযুগপূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপন
বাড়ী ফেরা হলোনা রাকিবের
হাবিপ্রবি ফিজিক্স ক্লাবের নেতৃত্বে ইশতিয়াক, আরমান
নাগরিক কমিটির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝