সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,
১২ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলা English

সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: তুরস্কের রাজনীতিতে যোগ দিলেন জার্মানি ফুটবলার ওজিল      কক্সবাজারে বিমান ঘাঁটিতে দুর্বৃত্তদের হামলা      দেউলিয়া হওয়ার পথে ৫০ শতাংশ ভারতীয়        নিজেকে কারাগারে পাঠানোর আর্জি, জামায়াত আমিরের      ১৬ বছর পর আবারও সম্প্রচারে আসছে চ্যানেল ওয়ান      পদত্যাগ করতে রাজি জেলেনস্কি      বড় রদবদলেও গতি নেই প্রশাসনে      
গ্রামবাংলা
তিন কর্মকর্তার কোটি টাকার দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে দুদক
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ৬:২৩ পিএম  (ভিজিটর : ২৪৪)
কক্সবাজার পৌরসভা

কক্সবাজার পৌরসভা

কক্সবাজার পৌরসভার তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকার দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুদক কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অনিক বড়ুয়ার নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে এসব তথ্য উদঘাটন করে।

কক্সবাজার পৌরসভা বিগত সরকারের আমলে এককভাবে আওয়ামী সরকারের দখলে থাকার কারণে বিভিন্ন উন্নয়ন বাজেটে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে দুদকের এ অভিযানে।

দুদক জানিয়েছে, পৌরসভায় উন্নয়ন বাজেট, সড়ক বাতি ও সিসিটিভি প্রকল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার এবং টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়া ভুয়া মাস্টাররোল, প্রকল্পের মিথ্যা ব্যয় দেখানো এবং কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দুদকের অভিযানে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে পৌর নির্বাহী রাসেল চৌধুরী, নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীনের নাম। অভিযোগ রয়েছে, এ তিন কর্মকর্তা সিন্ডিকেট করে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি, প্রকল্পের বরাদ্দ আত্মসাৎ এবং দৈনিক রাজস্ব আয়ের অর্থ গায়েব করেছেন।

দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অনিক বড়ুয়া বলেন, স্থানীয় ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় কক্সবাজার পৌরসভা ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন সময়ে সড়ক বাতি ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছে। তবে নিম্নমানের বাতি ও ক্যামেরা লাগিয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ, টেন্ডার প্রক্রিয়াও অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। এ জন্য আরো অনুসন্ধানের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র আগামী ২৬ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের কার কতটুকু দায়িত্ব তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা জানিয়েছেন, দুদক তাদের কাছে জানতে চেয়েছে শহরের সড়কে বাতি না জ্বলার কারণ এবং প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট নথি। তবে তিনি দাবি করেছেন, দুর্নীতির বেশ কিছু প্রকল্প তার যোগদানের আগের।

দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ জানান, শুরুতেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর কত টাকার দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে তা বলা যাবে। এই সিন্ডিকেটটি সর্বত্র ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিল।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির এই কর্মকর্তাদের মর্জিমতোই চলছিল সব কাজ। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত এই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত সরকারের আমলে রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও অংশ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই তিন কর্মকর্তা সিন্ডিকেট করে ভুয়া প্রকল্প বিল ভাউচার, মাস্টাররোল বানিয়ে প্রকল্প তৈরি, মাস্টাররোলে কর্মচারী দেখানোসহ ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন বাণিজ্য, দৈনিক রাজস্ব আয় থেকে টাকা গায়েব এবং অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চাকরির হুমকি দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে রাখার অভিযোগও ছিল।

সাবেক মেয়রদের ভুয়া বিল পাস করে, বেনামি মাস্টাররোলে কর্মচারী নিয়োগ করে এবং পেছনের তারিখ দিয়ে সাবেক মেয়রের চেক স্বাক্ষর করিয়ে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এরা। তাদের লাগামহীন এই অনিয়ম-দুর্নীতির দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ছিল ভুক্তভোগীদের। পরে এই নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে সর্বশেষ আজ কক্সবাজার পৌরসভায় অভিযান চালায় দুদকের একটি টিম।

কক্সবাজার পৌরসভা থেকে অবসরে যাওয়ার পরও প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তা রনজিৎ দে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পাননি বলে জানা গেছে। তিনি জানান, জীবন-যৌবন শেষ করেছি পৌরসভায় চাকরি করে। আমাদের কোনো পেনশন নেই। চাকরির বেতন থেকে কেটে রাখা টাকা এবং পৌরসভা থেকে দেওয়া একটি অংশের টাকার জন্য তিন বছর ধরে ঘুরছি। ক্লান্ত হয়ে গেছি। এখন আর যেতে ইচ্ছে করে না। মূলত পৌরসভায় তিন জনের সিন্ডিকেট সব কিছু লুটপাট করছে। ফলে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির নেতারা বলেছেন, এখনো কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন হয়নি। অথচ এক সপ্তাহ আগে ঠিকাদারের ৪ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। কারণ ঠিকাদারের বিল দিলে তিন জনের সিন্ডিকেটে কমিশন বাণিজ্য থাকে। ইতিমধ্যে পৌরসভায় সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে আন্দোলনের যাওয়ার একটি পরিকল্পনা করেছে।

ঠিকাদার নজরুল ইসলাম ও নুরুল ইসলাম মূলত সাবেক মেয়রদের ক্ষমতাকে পুঁজি করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। তারই অংশ হিসাবে বর্তমানে ৬ মাস বা ১ বছর এমনকি ২ বছর আগে করা কাজের বিল দিচ্ছে, তাও পুরাতন মেয়রের সাক্ষরে। পুরাতন কাজগুলোর কোনো হদিস না থাকলেও তারা কাগজ-কলমে ঠিক করে বিল তুলে নিজের কমিশনসহ বেশির ভাগ টাকা আত্মসাৎ করছে।

এ ব্যাপারে পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, পৌরসভার অবস্থা খুবই নাজুক। প্রতিষ্ঠানটির রন্ধ্রে বস্ত্রে দুর্নীতি-অনিয়ম। এমনকি দৈনিক বিভিন্ন ফরম, সনদ, লাইসেন্স থেকে আয় হওয়া টাকা পৌরসভার অ্যাকাউন্টে জমা না করে তিন কর্মকর্তা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। সচিব রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগ থাকার পরও কীভাবে তিনি বহাল তবিয়তে থাকেন সেটাই প্রশ্ন।

জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন চৌধুরি বলেন, নিয়ম মেনে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। পৌরসভার আয়ের উপর বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য কিছু নির্ভর করে থাকে। কমিশন বাণিজ্য বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ঘুষ হিসেবে নয়, কেউ খুশি মনে কিছু দিলে নিয়ে থাকি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সচিব রাসেল চৌধুরী সব সময় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিত। দলীয় স্বার্থে কাজ করেছে। তাদের রেখে কোনোভাবেই পৌরসভার উন্নয়ন সম্ভব নয়। আসুন, আমরা পৌরবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে সিন্ডিকেট ভেঙে ওদের কক্সবাজার থেকে বিতাড়িত করি।

কেকে/এএম

আরও সংবাদ   বিষয়:  দুর্নীতি   দুদক   কক্সবাজার পৌরসভা  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সমাবেশ সফল করতে মির্জাগঞ্জে বিএনপির প্রস্তুতি সভা
তুরস্কের রাজনীতিতে যোগ দিলেন জার্মানি ফুটবলার ওজিল
কক্সবাজারে বিমান ঘাঁটিতে দুর্বৃত্তদের হামলা
বই মানুষের মনের ক্ষুধা মেটায়
দেউলিয়া হওয়ার পথে ৫০ শতাংশ ভারতীয়

সর্বাধিক পঠিত

পুত্র সেজে ভাতিজা তোলেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, জড়িত ইউপি সচিব
সায়ান রিসোর্টের আড়ালে নারী ও মাদক ব্যবসা
আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে পাবিপ্রবির ক্রিকেট ফাইনাল বন্ধ
শ্রীমঙ্গলে সাতপীরের ভুয়া মাজার নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ
শ্রীমঙ্গলে লাইব্রেরি ও শিশু উদ্যান দখলমুক্ত করার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝