শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষায় ছিন্নমূল মানুষদের জন্য মিলে না বিশ্রামের বা ঘুমের জায়গা। যেখানেই জায়গা পান সেখানে শুয়ে একটু আরাম করে নেন তারা। কখনো বাসস্ট্যান্ডে কখনওবা রেলওয়ে স্টেশনে কিংবা রাস্তার ফুটপাতে মাথা গোঁজার জন্য আশ্রয় নেন।
সারাদেশে প্রতিটি এলাকায় দেখা মিলে অসহায় বাস্তহারা এসব মানুষদের। যাদের দিনশেষে মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলে অন্যের দুয়ারে।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে রাত্রিযাপন করে আসছেন নজরুল ইসলাম নামের এক ভিক্ষুক। স্টেশনের টিকেট কাউন্টারের সামনে বিছানা পেতে আগে ঘুমিয়ে রাত কাটালেও এখন জিআরপি পুলিশের অমানবিক অত্যাচারে এই তীব্র শীতে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে।
ভিক্ষুক নজরুল জানায়, আমরা ভিক্ষা করে খাই থাকার জায়গা নাই। সারাদিন ভিক্ষা করে রাতে স্টেশনে ঘুমাই একটু আরামের আশায়। গত কয়েকদিন ধরে স্টেশনের টিকেট কাউন্টারের সামনে ঘুমাতে গেলে পুলিশ সদস্যরা পানি ঢেলে দেয় যেন ঘুমাতে না পারি।
নজরুলের মতো একই অভিযোগ নূর ইসলামের তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের ঘুমাতে দেয় না থাকার জায়গায় পানি ঢেলে দেয়। মানুষের কাছে ভিক্ষা করে জীবন কাটাই আমাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।এই শীতে স্টেশনের ছাদের নিচে একটু ঘুমের জায়গাটুকুও পুলিশের অত্যাচারে মিলে না।
চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিতে ঘুম একটি বাধ্যগত অংশ। প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন ঘুম যে কোনো মানুষের মেধা কার্যকর রাখে। প্রয়োজনীয় ঘুম মানুষের শরীর সুস্থ রাখে। ঘুম শারীরিক অঙ্গগুলোকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখে। আর সঠিক মাত্রায় ঘুম না হলে ব্লাড প্রেসার, সুগার বেড়ে যেতে পারে। ঘুমের অভাবে মাথাব্যথা ও চোখের হাজারো সমস্যা দেখা যায়। নিয়মিত সঠিক মাত্রায় ঘুম না হলে, একজন মানুষ ক্রমাগত নানা সমস্যায় আক্রান্ত হবেন। যার কারণে একটি সুন্দর জীবনও বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।
সখিনা ও নূর জাহান জানায়, আগে স্টেশনে ঘুমাতে পারতাম কিন্তু পুলিশ পানি ঢেলে দিলে আর থাকতে পারি না। এখন সামনের রাস্তায় বিছানা করে থাকি এখানেও পুলিশ এসে তাড়িয়ে দেয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনে থাকছি কোনো সময় সমস্যা হয়নি, পুলিশ আরো আমাদের থাকার জন্য নানান ব্যবস্থা করে দিত কিন্তু এখন আমাদের পানি ঢেলে উঠিয়ে দেয়।
এবিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন বলেন, অসহায় ছিন্নমূল মানুষ আমাদের সমাজের অংশ রাষ্ট্রের নাগরিক। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব। পুনর্বাসন হওয়ার আগ পর্যন্ত অসহায় ছিন্নমূল মানুষদের থাকার জন্য সাময়িক ভাবে যেন বাসযোগ্য স্থান তারা ব্যবহার করতে পারে সে বিষয়ে সকলে সহযোগিতা করা।
অভিযোগ অস্বীকার করে রেলওয়ে ওসি মো: লিটন মিয়া বলেন, স্টেশনের অভ্যন্তরে থাকতে নিষেধ করা হয়েছে। টিকেট কাউন্টারের সামনে থাকলে তাদের নিষেধ করা হয় না তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
কেকে/এআর