ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার শেষ মুহূর্তে বেড়েছে বেচাকেনা। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর চলছে পূর্বাচলে।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে মেলা ঘুরে দেখা যায়, কানায় কানায় পূর্ণ দর্শনার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত। ভেতরে সবকটি স্টলে যেন কেনাকাটার ভিড়। অনেকেই ভিড় করেছেন আস্ত বাড়ি দেখতে। কেউ-বা আইসক্রিম কোম্পানির প্যাভিলিয়নে ভিড় করছেন।
কথা হয় গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা তানজুমা আইজি ইকরার সঙ্গে। তিনি বলেন, বাড়ির সঙ্গে ছবি তুলে স্মৃতিধারণ করে রেখে দিলাম। তবে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় এমন বাড়ি কতটুকু টিকবে তা দেখার বিষয়। আর দামটাও বেশি। তবে মডেল অসাধারণ। তবে খাবারের মাঝে আইসক্রিম ছাড়া কোনোটারই দাম হাতের নাগালে মনে হয়নি। সবকিছুরই দাম বেশি।
এদিকে মেলায় থাকা ব্যবসায়ীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ লক্ষনীয়। কথা হয় হাজী বিরিয়ানি বিক্রয়কর্মী আবু তালেবের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার মেলাটিতে ২৪-এর ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পলাতক। মূলত তাদের হাতে কাঁচা টাকা ছিল। যারা পণ্য ক্রয় করা, বিনোদনে খরচ করতো অঢেলা। কিন্তু যারা মেলায় আসছেন তাদের সেই বিনোদন, ক্রয়ে অতিরিক্ত খরচের মন-মানসিকতা কম।
ব্লেজার ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, এবারের মেলায় বিক্রি কম হয়েছে। স্টল প্রস্তুত করতে সময় লেগেছে। আবার মাসের শুরুতে শৈত্য প্রবাহ থাকায় লোক সমাগম কম হয়েছে। এতে মেলার কাঙ্ক্ষিত বিক্রি সম্ভব হয়নি। এখন আবার শীত কম আমাদের পণ্য অবিক্রিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই লোকসান কমাতে ন্যূনতম ৭ দিনের সময় বাড়ালে উপকৃত হব।
মেলায় আসা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, এবছর দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ১ জানুয়ারি মেলা শুরু হলেও এক প্রকার হতাশায় ছিলেন সাধারণ লোকজন। নিরাপত্তা ভয়ে ঘর থেকে বের হননি অনেকে। তাই মেলায় ক্রেতাসমাগম কম ছিল। সরকারি ছুটির দিনে দর্শনার্থী থাকলেও ক্রেতা ছিল কম।
আবার অনেকেই সময় মতো স্টল প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করতে পারেনি। যে টাকায় বরাদ্দ নিয়েছে সে টাকা তুলতে না পারার আশঙ্কা রয়েছে। লোকসান হবেই। তাই বিবেচনা করে সময় বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
গৃহসজ্জা সরঞ্জাম ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির বলেন, সময়সূচি, শীতের শেষ এবং রমজান সন্নিকটে থাকায় মেলায় বিক্রি কম। আবার নানা খরচসহ এক মাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো ১০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়নি।
মধুখালীর বাসিন্দা মোক্তার হোসেন বলেন, মেলায় দর্শনার্থী বেশি বিক্রি কম, শীত প্রায় শেষ বলে এখন আর কেউ শীতের পোশাক কিনছেন না।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, স্যুট, শাল ও কোটির দোকানদাররা এক রকমের অলস সময় কাটাচ্ছেন। এদিকে রমজান ঘনিয়ে আসায় অনেকে ঈদের কালেকশনের জন্য অপেক্ষা করছেন। এতে এবারের মেলায় বিক্রেতারা না শীতের ক্রেতা ধরতে পেরেছেন, না ঈদের। ফলাফল বেচাকেনা খারাপ হয়েছে।
পাঁচাইখা থেকে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী জুনাইদ বলেন, মানুষ এখন হাতে টাকা ধরে রাখতে চাচ্ছে। রোজা-ঈদ মিলিয়ে সামনে বড় খরচ আছে। তবে অনেকেই এখান থেকে ঈদের কেনাকাটা সারছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইপিবি সচিব বিবেক সরকার বলেন, এবছর মেলার সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রতিবছরই শেষ সপ্তাহে সময় বাড়ানোর দাবি ওঠে। এ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়নি। এবার ব্যাপক সাফল্য এসেছে মেলা থেকে। তারপরও এ বিষয়ে সরকার যা সিদ্ধান্ত দেয় তাই হবে ।
সচেতন মহল মনে করছেন, বাইরে দেশের অর্থনীতি এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণেও মেলায় কম বিক্রি হওয়ায় কারণ হতে পারে। আগে বাণিজ্য মেলার জন্য মানুষ আলাদা বাজেট করে রাখত। এটি ছিল রাজধানী ও আশপাশের জেলার লোকজনের উৎসবের মতো। এখন তা দেখি না। অনেকে মনে করেন বাণিজ্য মেলায় এমন অনেক পণ্য পাওয়া যেত, যা সাধারণ বাজারে সচরাচর পাওয়া যায় না। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাধারণ বাজারে বৈচিত্র্য আসলেও বাণিজ্য মেলার পণ্য সেই সেকেলে রয়ে গেছে। নিউ মার্কেট বা গুলিস্তানের বঙ্গবাজার মনে হয়।
কেকে/এএম