সোমবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫,
১৪ মাঘ ১৪৩১
বাংলা English

সোমবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: ঋণ বিনিয়োগে করুণ হাল, রফতানি-রেমিট্যান্সে স্বস্তি       ৭ কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাবি উপাচার্যের জরুরি সভা আজ      পবিত্র শবে মেরাজ আজ      ঢাকা শহর অবরোধের ঘোষণা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের      ৪ ঘন্টা পর থামলো ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ      ঢাবি-সাত কলেজ সংঘর্ষের নেপথ্যে যত ঘটনা!       সংঘর্ষের দায়ভার হাসিনা ও আরেফিন সিদ্দিকীর: ছাত্রদল সেক্রেটারি      
সোশ্যাল মিডিয়া
শেখ রাসেলের হত্যাকাণ্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন রাশেদ চৌধুরী
খোলা কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ৮:৩৭ পিএম  (ভিজিটর : ১৬৪)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। বাংলাদেশের ইতিহাসের বাঁক বদলে যাওয়ার দিন। এই দিনে এক সামরিক অভ্যুত্থানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের প্রায় সকল সদস্যদের। সেদিন সকাল থেকে রেডিওতে ঘোষণা হচ্ছিল, শেখ মুজিব ইজ ডেড। কেনো শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর ক্যু, কেনোইবা তাকে সপরিবারে হত্যা করা হলো, শিশু শেখ রাসেলও কেনো হত্যাকাণ্ডের শিকার হলো? সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের লাইভে এই বিষয়ে প্রথমবার মুখ খুললেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এম রাশেদ চৌধুরী (বীর প্রতীক)।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে লাইভে যুক্ত হন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা রাশেদ চৌধুরী। এই আলোচনায় তিনি জানান, কীভাবে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড কেন ঘটালেন? জানতে চাইলে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা রাশেদ চৌধুরী বলেন, যুদ্ধের পর দেশের অবস্থা দেখে তারা হতাশ হন। ১৯৭২-৭৫ সালের দুর্ভিক্ষ ও লুটপাটের পরিস্থিতি ইয়াং অফিসারদের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। পরিবর্তনের উপায় নিয়ে গোপনে আলাপ চললেও সিনিয়ররা তা প্রকাশ করতেন না। ১৯৭৫ সালের ঘটনাটি আগে থেকেই কল্পনা করা হলেও বাকশাল গঠনের পর চিন্তাভাবনা আরও গভীর হয়। তবে তিনি মূল পরিকল্পনার অংশ ছিলেন না, শুধু আলাপ-আলোচনা করতেন।


বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ চৌধুরী জানান, ১৫ আগস্টের অপারেশনের নেতৃত্বে ছিলেন ফারুক, আর রশিদের দায়িত্ব ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তিদের একত্রিত করা। শেখ মুজিবের বাসা, সেরনিয়াবাদ, রেডিও স্টেশন ও শেখ মনির বাসাকে টার্গেট করা হয়। মেজর ডালিম রেডিও স্টেশন ও সেরনিয়াবাদ বাসার দায়িত্বে ছিলেন, আর রাশেদ চৌধুরী ছিলেন রেডিও স্টেশনে ডালিমের অধীনে। তিনি বলেন, ভোরের দিকে রেডিও স্টেশন টেকেন ওভার করে ভাষণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করেন, এবং পরে ডালিম এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, "উই হ্যাভ ডান ইট।"

অপারেশনে যাওয়ার আগে বিস্তারিত ব্রিফিং করা হয়নি জানিয়ে রাশেদ চৌধুরী বলেন, মুজিবের ভাগ্য কী হবে তা তারা জানতেন না। তার কথায়, মুজিবকে বাসায় মারার কোনো প্ল্যান ছিল না; পরিকল্পনা ছিল তাকে অ্যারেস্ট করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে এসে সামারি কোর্ট মার্শাল করা। রশিদ ও ফারুক ছিলেন অরিজিনাল প্ল্যানার। এরপর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রশিদ খন্দকার মোশতাককে নিয়ে রেডিও স্টেশনে আসেন এবং গার্ড অব অনার দেওয়া হয়, কারণ তিনি তখন বাংলাদেশের নতুন প্রেসিডেন্ট। এরপর রেডিও স্টেশনটি নতুন সরকারের হেডকোয়ার্টার হয়ে ওঠে।

রাশেদ চৌধুরী বলেন, মুজিবের বাসভবনে কী ঘটেছিল তা তিনি সরাসরি দেখেননি, তবে পরবর্তীতে জানতে পারেন। তার বইয়ে মেজর বজলুল হুদার স্টেটমেন্টে উল্লেখ রয়েছে, তিনি সৈন্য নিয়ে ভোরে মুজিবের বাসভবনে পৌঁছে সুবেদারকে জানান, "আর্মি হ্যাজ টেকেন ওভার, মুজিব ইজ নো মোর ইন পাওয়ার।" এরপর শেখ কামাল স্টেনগান নিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে নিচে আসেন এবং তার স্ত্রী সুলতানা অটোমেটিক রাইফেল দিয়ে দোতলা থেকে নিচে গুলি করতে শুরু করেন। এতে এক সিপাহী নিহত হন, কয়েকজন আহত হন, যা দেখে অন্যান্য সিপাহীরা ক্ষেপে যান।

 
বজলুল হুদার মতে, শেখ কামাল ও সুলতানা প্রথমে গোলাগুলি শুরু করেন। শেখ কামাল সিঁড়ি দিয়ে নিচে আসছিলেন, গুলি করতে করতে চিৎকার করছিলেন। দোতলা থেকে গুলি এসে এক সিপাহী মারা গেলে, একজন গালি দিয়ে বলেছিলেন, "শালার গোষ্ঠীসুদ্ধু মেরে দে।" শেখ মুজিবের বাসার চাকরও স্বীকার করেছে যে গোলাগুলি প্রথমে তারা শুরু করেছিলেন। পরে সিপাহীরা গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়, আর হুদা লোকজন নিয়ে প্রবেশ করেন। সে সময় শেখ কামাল মারা যান।

হুদার বক্তব্যে রাশেদ চৌধুরী বলেন, তিনি কয়েকজনকে নিয়ে উপরে গিয়ে শেখ মুজিবকে নামানোর চেষ্টা করেন, মেজর মহিউদ্দীনও সঙ্গে ছিলেন। শেখ মুজিব ঘর থেকে বের হলে, শেখ জামাল ও সুলতানা আবার উপরে থেকে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়েন। এক গুলিতে মুজিবের পেছনে থাকা সিপাহী পড়ে যায়। মুজিব দাঁড়িয়ে থাকলেও, হুদা আর মহিউদ্দীন ডাক করে নিজেদের বাঁচান। গুলির শব্দে লাঞ্চারের লোকজনও এসে পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে মুজিবের গায়ে গুলি লাগলে তিনি পড়ে যান।

শেখ রাসেলকে কেন হত্যা করা হলো জানতে চাইলে রাশেদ চৌধুরী বলেন, সবাই দোতলার একটা রুমে বন্ধ ছিল। শেখ মুজিব পড়ে গেলে উপরে থেকে জানালা দিয়ে গোলাগুলি শুরু হয়। বজলুল হুদার মতে, কয়েকজন সিপাহী জানালা দিয়ে গ্রেনেড ড্রপ করে। ওই গ্রেনেড বাস্ট করে বাকি সবাই একসঙ্গে মারা যায়। রাসেল নিচে আসেনি। শুধু শেখ কামাল নিচে মারা যায়। মুজিবের মৃত্যুর পর ফরেনসিক করলে হয়তো দেখা যেত তারা কীভাবে মারা গেছে, গুলিতে না গ্রেনেড বিস্ফোরণে।    

ততক্ষণে রেডিওতে ঘোষণা হচ্ছে, শেখ মুজিব ইজ ডেড, লাইভে বলছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ চৌধুরী (বীর প্রতীক)।

‘ঘুম থেকে উঠে দেখি মেজর ডালিম হয়ে গেছি’‘ঘুম থেকে উঠে দেখি মেজর ডালিম হয়ে গেছি’
পরবর্তী প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানারও সেদিন নাই হয়ে যাওয়া উচিত ছিল এমন মনে হয়েছিল কি না-ইলিয়াস হোসেনের এই প্রশ্নের উত্তরে রাশেদ চৌধুরী সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তিনি বলেন, সবাই বলে মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে, তবে তিনি মনে করেন মুজিবের মৃত্যু তার নিজের কারণেই হয়েছিল। মুজিবের ৪৪ মাসের শাসনে দেশের যে অবস্থা হয়েছিল, তার কারণেই তার মৃত্যু অনিবার্য ছিল। মুজিবকে জীবিত রেখে কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব ছিল না।

রাশেদ চৌধুরী মুজিবের মৃত্যুর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, মুজিবের মৃত্যু এবং রাজনৈতিকভাবে নির্দোষদের মৃত্যু দুঃখজনক। তবে এমন ক্যুতে কিছু লোকের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত নয়।

রাশেদ চৌধুরী বলেন, শেখ মুজিব ১৯৭২ সালে ঢাকা ফিরে আসার পর জনগণের বিপুল ভালোবাসা পেয়েছিলেন, যা অন্য কোনো নেতা পায়নি। শেখ মুজিব একাত্তরের আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে তার শাসনভঙ্গি পরিবর্তিত হয়। তিনি তখন গণতন্ত্রের পক্ষে না হয়ে, স্বৈরাচারী হয়ে উঠেন, যা ছিল খুবই আশ্চর্যজনক।

কেকে/এইচএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  শেখ রাসেল   হত্যাকাণ্ড   রাশেদ চৌধুরী  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ঋণ বিনিয়োগে করুণ হাল, রফতানি-রেমিট্যান্সে স্বস্তি
কার্নিসে ঝুলে থাকা শিক্ষার্থীকে গুলি, সেই পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতার
৭ কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাবি উপাচার্যের জরুরি সভা আজ
পবিত্র শবে মেরাজ আজ
ঢাকা শহর অবরোধের ঘোষণা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরে লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ফার্মেসী, নজরদারি নেই প্রশাসনের
সিরাজগঞ্জে বাস চাপায় শিক্ষকসহ নিহত ২
সমন্বয়কদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় ৩৩ জনের নামে মামলা
নীলক্ষেত নিউমার্কেট এলাকা রণক্ষেত্র, আহত ২৩
ঢাবি-সাত কলেজ সংঘর্ষের নেপথ্যে যত ঘটনা!

সোশ্যাল মিডিয়া- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝