দ্রুততম সময়ের মধ্যে জরুরি সংস্কার সম্পন্ন করে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন সিলেটের বিভিন্ন দলের রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। তারা বলেছেন, ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন, তবে নির্বাচনকে আটকে রেখে নয়।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে সিলেটে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্সস্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা এমন দাবি জানিয়েছেন
সংলাপে অতিথি আলোচক ছিলেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদুল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন অধ্যাপক কামাল আহমেদ চৌধুরী।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আইনজীবী, শিল্প উদ্যোক্তা, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমকর্মী, আধিকারকর্মী, ক্ষুদ্রউদ্যোক্তা, নারীসংগঠক, সেচ্ছাসেবীসহ বিভিন্নক্ষেত্রের পেশাজীবীরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সংস্কার বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত জানান।
এতে অ্যাডভোকেট এমাদুল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের পক্ষে মানুষের মৌলিক অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদানেরমত সক্ষমতা ছিল না। কিন্তু এখন তো বাংলাদেশ আগের চেয়ে অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ভাবে সক্ষম একটি দেশ। দেশ পুনর্গঠনের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা– এ অধিকারগুলোকে মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করে রাষ্ট্র থেকে তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
এছাড়াও তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবে আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগকে আলাদাভাবে ক্ষমতা প্রদান করা প্রয়োজন।
অধ্যাপক কামাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংবিধান থাকলেও কখনই সাংবিধানিক শাসন ছিল না। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন করলেও ১৯৭৫ এ এসে সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সেই সংবিধানের মূল স্পিরিটকে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
জিল্লুর রহমান বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশের মানুষ বহুবার গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে রাজপথে নেমেছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে প্রতিবারই তাদের আন্দোলনকে রাজনৈতিকদলগুলো নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে আন্দোলনের স্পিরিটকে নষ্ট করেছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরেও এখন নানা পক্ষের দিক থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের প্রচেষ্ঠা লক্ষ করা যাচ্ছে।
তিনি বর্তমান পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, দেশ এখন একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশে সংস্কারআগে নাকি নির্বাচন আগে, এ নিয়ে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বাক-বিতন্ডা চলছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমাদের যেই জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল, তা থেকে কি আমরা দূরে সরে যাচ্ছি?
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান দুই মাসের আন্দোলন নয়, এটি প্রায় ১৫ বছরের আন্দোলনের ফসল।
তিনি নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান সরকারকে বিএনপি প্রথম থেকেই সমর্থন জানিয়ে এসেছে এবং এখনো সমর্থন অব্যাহত আছে। সুষ্ঠু গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে আমরা চাই এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক।
সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিৎ।
এছাড়াও সবার আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা উচিৎ। এ সরকার বেশিদিন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চাইলে তারা মানুষের সমর্থন হারাবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট জেলার মুখপাত্র মালেকা খাতুন সারা বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রথম কাজ হতে হবে দেশে অর্থনৈতিক সমতা ও প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা।
তিনি আরো জানান, বিগত সরকার গত ১৫ বছরে দেশের সামাজিক, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খাতকে ধবংস করে ফেলেছে। এ খাতগুলোয় প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করেই পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা উচিৎ।
এছাড়াও জাতীয় নাগরিক কমিটি, গণঅধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস, এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী), যুব উন্নয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, গনসংহতি আন্দোলন, পাত্র সম্প্রদায় কল্যান পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং আইনজীবী, শিক্ষক, উদ্যোক্তা, সাংস্কৃতিককর্মী, এক্টিভিস্ট ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা সংলাপ অনুষ্ঠানে দেশ পুনর্গঠনের বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করেন।
কেকে/এএম