বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশটির আয়ের এ রেকর্ডে সর্বোচ্চ অবদান গাজায়-ইসরাইল এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের। সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে রেকর্ড ৩১ হাজার ৮৭০ কোটি মার্কিন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা আগের বছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্টের এসব অস্ত্র চুক্তির মধ্যে গাজার গণহত্যায় অভিযুক্ত ইসরায়েলের কাছে ১ হাজার ৮৮০ কোটি ডলারের যুদ্ধবিমান বিক্রির চুক্তিও রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৮০ কোটি ডলারের, যা ২০২৩ সালের ১৫ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতায় সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি ১১ হাজার ৭৯০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছর ছিল ৮ হাজার ৯০ কোটি ডলার।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, অস্ত্র বিক্রি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত চুক্তিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তুরস্কের জন্য ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান এবং উন্নয়ন প্রকল্প, রোমানিয়ার জন্য ২৫০ কোটি ডলারের এম১এ২ আব্রামস ট্যাংক এবং ইসরায়েলের জন্য এফ-১৫ যুদ্ধবিমান।
তবে, অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম প্রোপাবলিকা জানিয়েছে, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সরাসরি সতর্কতা উপেক্ষা করেছিলেন এবং গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে ব্যাপক চাপ সত্ত্বেও অস্ত্র সরবরাহ অনুমোদন করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহার করে গাজায় ৪৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। সেইসঙ্গে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটি; বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি।
মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সাবেক বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এই গণহত্যার পেছনে অর্থায়নেরও অভিযোগ তুলেছেন।
এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্ত্রের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় তা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে মার্কিন অস্ত্র নির্মাতারা। একইসঙ্গে কিয়েভে অস্ত্র পাঠানোর কারণে নিজস্ব মজুত বাড়াতেও উদ্যোগী হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া, বিশ্বের অন্যান্য দেশও নিজেদের অস্ত্রাগার সমৃদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনতে প্রতিযোগিতা করছে।
২০২৪ সালে অনুমোদিত চুক্তিগুলোর কারণে মার্কিন অস্ত্র নির্মাতাদের কাছে বিশাল অর্ডার জমা হচ্ছে। ফলে, আর্টিলারি গোলা, প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র এবং সাঁজোয়া যানসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে তারা।
কেকে/এআর