জুলাই-গণঅভ্যুত্থানে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান দলটির প্রথম সারির অনেক নেতা। পালাতে গিয়েও গ্রেফতার হন দলটির বহু নেতাকর্মী। ফলে দলটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে এক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা সেটা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে ইতোমধ্যে কঠোর বার্তা দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকারে থাকা ছাত্র উপদেষ্টারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন নেতৃত্বশূন্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো ও কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে ভেঙে পড়েছে। দলের অনেক শীর্ষ নেতা গ্রেফতার কিংবা গোপনে থাকার কারণে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়াও হবে বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘যারা বাংলাদেশপন্থি তাদের মধ্যে নির্বাচন হবে। বাংলাদেশবিরোধী আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে না।’
গতকাল শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে ছাত্র-জনতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে এক পথসভায় তিনি এ কথা বলেন। মাহফুজ আলম বলেন, বিএনপি-জামায়াতসহ যত রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, শ্রমিক, নারী, আলেম-ওলামা আছেন, যারা বাংলাদেশপন্থি, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আগামীর শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে বৈষম্যহীন ইনসাফমূলক একটি শাসনব্যবস্থা কায়েম করবেন। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের অগ্রাধিকার রয়েছে খুনিদের বিচার করা, গুম-খুন-ধর্ষণের বিচার করা, সংস্কার করা এবং অবশ্যই বাংলাদেশপন্থি সব রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া, যেটি গত ১৬ বছরে সম্ভব হয়নি।
যদিও এর আগে নির্বাচন কমিশনের থেকে বলা হয়েছিল ‘সরকার বা আদালত যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করেন, তাহলে দলটির নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই।’
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে গত ৩০ ডিসেম্বর ‘ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন এ কথা বলেছিলেন। সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জাবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, ‘এটা মূলত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হবে। এটাও শোনা যাচ্ছে যে কেউ কেউ মামলা করেছে কোর্টে। এ দল যাতে নির্বাচনে না আসতে পারে, সেটার আদেশ চেয়ে। কোর্ট যদি রায় দেন, যেভাবে রায় দেন, সেভাবে ব্যবস্থা নেব।’ আর না হলে এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এ সময় তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তো আমাদের এখানে একটা রেজিস্টার্ড দল, বিধিবিধান অনুযায়ী। নির্বাচন করা না করার সিদ্ধান্ত মূলত তাদের।’
এদিকে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ আছে কিনা এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক খোলা কাগজকে বলেন, ‘যেসব দলের নিবন্ধন আছে এবং রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি, আইনগতভাবে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে। যে আওয়ামী লীগ গণগত্যার জন্য দায়ী, যারা ১৬ বছরের গুম-খুন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং যাদের বিরুদ্ধে সীমাহীন লুটপাটসহ অসংখ্য অভিযোগে আছে; তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। এর বাইরে যাদের বিরুদ্ধে কোনো গণহত্যা কিংবা অন্য অপরাধের অভিযোগ নেই; তারা কীভাবে রাজনীতি কিংবা নির্বাচনে অংশ নেবে, সেটা অবশ্যই আলাপ-আলোচনার বিষয়। তারা যদি আওয়ামী লীগের পরিচয়ে অংশগ্রহণ করতে চান এবং তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ না থাকে তাহলে আইনগতভাবে তাদের বাইরে রাখার কোনো সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের প্রধান নেতৃত্ব গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এ পর্যন্ত গণহত্যার জন্য কোনো ক্ষমা প্রার্থনা করেননি, এমনকি এ অপরাধের জন্য তাদের কোনো অনুশোচনা কিংবা আত্মধিক্কার নেই মন্তব্য করে সাইফুল হক বলেন, ‘তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। ফলে তাদের ব্যাপারে রাজনীতি কিংবা নির্বাচনে অংশগ্রহণেরও কোনো সুযোগ আছে বলে দেখছি না।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অন্যায় ও সন্ত্রাস করেছে। তাদের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা নেয়নি, এটা দুঃখের বিষয়। আওয়ামী লীগ দেশে যখন সরকার গঠন করেছে, তখনই দেশকে দুর্বৃত্তায়ন ও অপরাধের দিকে ধাবিত করেছে। যার জন্য সব সময় দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা চাই এদের সবারই বিচার হোক। আওয়ামী লীগ ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারবে কি পারবে না, সেটা জনগণ বিচার করবে।’
গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বগুড়া শহরের দত্তবাড়িতে শহিদ জিয়াউর রহমান শিশু হাসপাতালে বিনা মূল্যে চিকিৎসা শিবিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু।
কেকে/এআর