প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কালাইয়ে ৫৪টি বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপন করেও কোনো কাজে আসেনি। সাড়ে ১৩ লাখ টাকায় এসব মেশিন কেনার পর বিদ্যালয়ের দেওয়ালে স্থাপন করা হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘদিন অকেজো মেশিনগুলো দেওয়ালে লাগানো থাকলেও এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না অনেকে বিদ্যালয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উপকরণ কেনার টাকা থেকে হাজিরা মেশিনগুলো স্থাপনা করা হয় ৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইতিআরা পারভীন তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে এসব মেশিন কেনেন।
প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ড থেকে চেকের মাধ্যমে ২৫ হাজার করে মেশিন কেনার টাকা পরিশোধ করেন। যদিও বাজারে এসব মেশিনের মূল্য ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার বেশি নয়। নিয়ম রয়েছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাজার যাচাই করে নিজেদের পছন্দমতো সাশ্রয়ী মূল্যে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কিনবেন। নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মেশিন কেনার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
সরকারি এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্লিপের টাকা আত্মসাতের জন্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব মেশিন কেনেন। প্রথমদিকে ২/১ মাস মেশিনগুলো চালু থাকলেও পরবর্তীতে সেগুলো অকেজো হয়ে যায়। তারপর আর সেগুলো মেরামত করা হয়নি। তাছাড়া অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ডাটাবেজ সংযোগও নেই।
আবার যেসব বিদ্যালয়ে ডাটাবেজ সংযোগ আছে তাদের মধ্যে অনেকে ইচ্ছা করেই এসব মেশিন ব্যবহারও করছেন না। অনেক স্কুলের শিক্ষকরা এই মেশিন ব্যবহার করতেও জানেন না। এরইমধ্যে মেশিনগুলোর ওয়ারেন্টটি-গ্যারান্টির মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। অনেক বিদ্যালয়ে আজও স্থাপন হয়নি পাঁচবছর আগের কেনা হাজিরা মেশিন। এসব মেশিন কেনা নিয়েও রয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ।
কালাই প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে ৫৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হয়। এতে ব্যয় হয় ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের দশম গ্রেড বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাহবুবর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষকদের চাপ প্রয়োগ করে তখন ২৫ হাজার টাকার চেক নেওয়া হয়েছে।
এতে শিক্ষকদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। তারপরেও যদি মেশিনগুলো ভালো মানের হতো এবং সচল থাকতো, তাহলে কোন অভিযোগ ছিল না। এতো টাকা ব্যয়ের এই হাজিরা মেশিনগুলো কোনো কাজে আসছে না।
এইচআর অটোমেশিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী হারুন অর রশিদ বলেন, মেশিন নিয়ে কোম্পানির কোনো গাফিলতি ছিলনা। তাছাড়া অনিয়মও হয়নি। মেশিনগুলো মানসম্পন্ন ছিল। স্থাপনের পর ইন্টারনেট সংযোগ লাগে। এর জন্য ৩ হাজার টাকা রিচার্জ, সার্ভার এবং সার্ভিস চার্জ রয়েছে।
শিক্ষকরা এ টাকা না দেওয়ায় মেশিনগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি। কালাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি যোগদানের আগের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে। তাই মেশিন নিয়ে কোনো কথা বলতে পারবো না।
কেকে/এআর