সোমবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫,
১৪ মাঘ ১৪৩১
বাংলা English

সোমবার, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: রেলের স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান সরকারের      মাঝরাত থেকে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ট্রেন চলাচল      ড. ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নরেন্দ্র মোদির চিঠি      গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখতে ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ      আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচন চাই: জামায়াত সেক্রেটারি      পুতুলের দুর্নীতি মামলার তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখনো আসেনি: মুখপাত্র      ক্ষমতা আর সংসদের আসনের লোভ দেখিয়ে তরুণদের কেনা যাবে না: হাসনাত       
গ্রামবাংলা
পর্যটকদের কাছে চাহিদা বেড়েছে শুটকির
মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার
প্রকাশ: রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ৪:৫৭ পিএম  (ভিজিটর : ৯৭)
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে  ঘুরতে আসলে সমুদ্র দেখার পাশাপাশি সেই সমুদ্রের নুনা পানির মাছ শুটকি নিতে কেউ ভুল করেন না। দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা যাওয়ার সময় শুটকির দোকানে গিয়ে নিজের পছেন্দ মতো সামুদ্রিক মাছের শুটকি নিতে চলে যান শহরের বিভিন্ন শুটকি মার্কেটে। ঠিক এভাবে প্রতিদিন পৌছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কক্সাবাজারের ঐতিহ্যবাহি শুটকি। শুধু তাই নয় দেশ পেরিয়ে এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে এই শুটকি।

ভোজন রসিকদের কাছে খুবই মজার ও আকর্ষণীয় এক খাবার শুটকি। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও জনপ্রিয় খাবার শুটকি। আগে দামে সস্তা থাকায় শুটকিকে গরিবের খাবার হিসেবে তাচ্ছিল্য করা হতো। কিন্তু এখন শুটকির দামের বৃদ্ধির পাশাপাশি বদলেছে অবস্থানও। এখন শুটকি দেশের ধনীদের অন্যতম নিয়মিত একটি খাবার মেন্যু। এমনকি দেশের বিভিন্ন নামি-দামি রেস্টুরেন্টসহ বিলাসবহুল হোটেলেও শুটকির কদর বেড়েছে।

কক্সবাজারের শুটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হচ্ছে বর্হিবিশ্বে। বিভিন্ন দেশে নিয়মিত রফতানি করা হচ্ছে শুটকি। অনেকেই ডাকবিভাগ, কুরিযার সার্ভিসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিনিয়ত শুটকি বিদেশে পাঠাচ্ছেন। বাংলাদেশে উৎপাদিত শুটকির একটি বড় অংশ উৎপাদন হয় কক্সবাজারে।

শহরতলীর নাজিরারটেক, ফদনারডেইল, নুনিয়াছরা, সমিতিপাড়াসহ উপকূলীয় কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার আবাল বৃদ্ধ বনিতা শুটকি উৎপাদনে মহা ব্যস্ত। গভীর সাগর থেকে অসংখ্য ট্রলারে মাছ আহরণ করে নাজিরারটেক ও ফদনারডেইল ঘাটে ভিড়ছে। এসব ট্রলার আসা বিভিন্ন কাঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে শুটকি করা হচ্ছে। বাঁকখালী নদীর তীরের বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার বসত ঘরের ছাদে ও উঠানে মাচা বানিয়ে তৈরি হচ্ছে শুটকি।

শীতের শুরুতে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে কাঁচা মাছকে রোদে শুকিয়ে ‘শুটকি মাছ’ উৎপাদনের ধুম পড়েছে। আগামী মে পর্যন্ত টানা চলবে শুটকির উৎপাদন। এ বছর শুটকি বিক্রি করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। শুটকির পাশাপাশি কক্সবাজারে মাছ ও মুরগির খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত শুটকি গুঁড়ার উৎপাদন বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ পণ্য সরবরাহ করে প্রচুর অর্থ আয় করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

শুটকী উৎপাদনকারী বাবুল জানান, উৎপাদিত বেশিরভাগ শুটকিতে কোনো কেমিকেল মেশানো হয় না। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে সাগর উপকূলে মাচা তৈরি করে এই শুটকি তৈরি করা হয়। পুরুষরা মাছ সংগ্রহের কাজে জড়িত থাকলেও প্রক্রিয়াকরণে জড়িত থাকেন অধিকাংশ নারী। সাগর থেকে মাছ আহরণ করে জেলেরা ওই সব মহাল ঘাটে (চরে) নিয়ে আসেন। তারপর বাঁশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি ঘেরগুলোতে পসরা সাজানো হয় নানারকম মাছের। এখানে ছুরি, লইট্যা, পোহা, ফাইস্যা, লায়োক্কা, মাইট্যা, রূপচাঁদা মাছসহ বিভিন্ন ধরনের শুটকি উৎপাদিত হয়। মহেশখালীর উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত এ স্বর্ণদ্বীপখ্যাত সোনাদিয়া, শহরের নাজিরারটেক বৃহৎ শুটকি মহাল, খুরুশকুল, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফের বাহারছড়া ও প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের শুটকি মহল কেবল বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয় এগুলো এক একটি পর্যটন স্পটও।

এদিকে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের সোনাদিয়া দ্বীপে শুটকি মাছ উৎপাদনের ধুম পড়েছে। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে মহেশখালী চ্যানেলের মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত সোনাদিয়া বঙ্গোপসাগর ঘেষে অবস্থিত সোনাদিয়ার চর এলাকায় হাজার হাজার জেলে ক্ষনস্থায়ী আবাস স্থান তৈরী করে ফিশিং কৃত মাছ শুকিয়ে, শুটকি মহাল তৈরি করে কোটি কোটি টাকার মাছ বিদেশে রফতানী করে স্বাবলম্বী হচ্ছে।

এখানে ৮০ শতাংশ মানুষ সাগর থেকে আহরিত মাছ রোদে শুকিয়ে শুটকি করে সারাদেশে সরবরাহ করেন। বর্তমানে সোনাদিয়ায় ৩০টির বেশি মহালে এখন শুটকি তৈরি হচ্ছে।

রাজশাহী থেকে আসা পর্যটক রাজিব জানান, আজকে চলে যাবো। কক্সবাজারের শুটকি দেশে প্রসিদ্ধ, যাওয়ার আগে বিভিন্ন ধরনের শুটকি মাছ কিনছি।

মহেশখালীর স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, দেশের ২০ শতাংশ শুটকি এখান থেকে উৎপাদিত হয়। এখানকার শুটকি তরতাজা মাছ কেটে করা হয় এবং এতে কোনো ধরনের ক্ষতিকর কীটনাশক কিংবা পাউডার মেশানো হয় না।

অন্যদিকে, কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকা মহেশখালীর সোনাদিয়া, গোরকঘাটা, তাজিয়াকাটা, কুতুবজোম, কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ, খুদিয়ারটেক, আলী আকবর ডেইল, অংজাখালী, পশ্চিম ধুরুং, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, জালিয়াপাড়া, সদর উপজেলার নাজিরারটেক, খুরুশকুল, সমিতিপাড়া, চৌফলদন্ডিসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় বিপুল পরিমাণ শুটকি তৈরি হয়। এসব শুটকির মধ্যে সামুদ্রিক রূপচাঁদা, ছুরি, লাক্কা, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, চাপিলা, চিংড়ি, বাটা, ট্যাংরা, অলুয়া, পোপা ও সুন্দরী এবং মিঠাপানির মাছের মধ্যে শোল, কাচকি, কুচো চিংড়ি, মলা, গইন্যা, বাইলা, ফাইস্যাসহ প্রায় ৪১ প্রজাতির মাছের শুটকি হয়।

বর্তমানে প্রতিকেজি রূপচাঁদা ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা, মাইট্যা ৭শ’ থেকে ১ হাজার টাকা, কোরাল ৯শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা, পোপা ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা, চিংড়ি এক হাজার থেকে ২ হাজার টাকা, লইট্যা ৪শ’ থেকে ৮ শ’ টাকা, ছুরি ৬শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা, অন্যান্য মাছ ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শুটকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, শহরের নুনিয়াছরা এলাকার ১৬টিসহ জেলার ৪১টি উৎপাদনকারী শুটকি মহলে পোপা শুটকি রফতানি করে গত বছর প্রায় ১৮৬ কোটি টাকা আয় করে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে এ বছর শুটকি রফতানি থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আয়ের আশা করা হচ্ছে। শীত মৌসুমের প্রায় চার মাসে কক্সবাজারে অন্তত ১৫ লাখের অধিক পর্যটক ভ্রমণে আসেন। পর্যটকদের কাছে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে শুটকির। এর মধ্যে শতকরা ৭০জন পর্যটক ফেরার সময় শুটকি নিয়ে যায়।

অন্যদিকে, কক্সবাজারে মাছ ও মুরগির খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত শুটকি গুঁড়ার উৎপাদন বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ পণ্য সরবরাহ করে প্রচুর অর্থ আয় করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। স্বল্পসুদে ঋণসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া গেলে এ বাণিজ্য আরো বিকশিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভোলা চিংড়ি, কাঁকড়া, কুঁচিয়া, চামিলা, টেকচাঁদা, নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ও পোকামাকড় দিয়ে শুটকি গুঁড়া উৎপাদন করা হয়। প্রতি মণ কাঁচা মাছ কিনতে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। প্রকারভেদে প্রতি কেজি শুটকি গুঁড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত। উৎপাদিত শুটকি গুঁড়া ঢাকা, বগুড়া, নরসিংদী, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হয়। পোলট্রি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে এর চাহিদা বেশি। এ ব্যবসা প্রসার লাভ করায় কর্মসংস্থানও বাড়ছে।

কক্সবাজারের সচেতন নাগরিকগণ জানান, কিছু অসাধু শুটকি উৎপাদনকারিরা কীটনাশক মিশিয়ে শুটকি উৎপাদন করছে। শুটকিতে প্রয়োগ করা বিভিন্ন কীটনাশক ও বিষ মানব দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান জানান, শুটকির কোয়ালিটি ধরে রাখার জন্য শুটকিতে যেন কোন ধরনের বিষাক্ত কেমিকেল ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য আমরা ১০ ভাগে বিভক্ত করে ৮০ জন করে ৮শ’ জন শুটকি প্রস্তুতকারীদের অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামের মাধ্যমে তাদের জানিয়েছি যেন শুটকিতে বিষাক্ত কেমিকেল মিশানো  না হয়। অন্যদিকে একটি প্রকল্পে ১শ’ জন শুটকি প্রস্তুতকারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যেন অর্গানিক শুটকি তৈরি করতে পারে। এখন আমরা তাদের আমাদের প্রয়োজনীয় বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। যদি তারা তা না মানে তা হলে আইনে বলা হয়েছে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও ৫ বছরের জন্য জেলে দেওয়ার বিধান আসছে। এর আগে তাদের সচেতন করা হচ্ছে। নাজিরারটেক, সোনাদিয়া শুটকির পাশাপাশি শুটকি উৎপাদনেরও বিশাল সম্ভাবনার জায়গা কক্সবাজার। এ ব্যাপারে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়া হবে।

কেকে/এজে
আরও সংবাদ   বিষয়:  পর্যটক   শুটকি  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

হ্যাটট্রিক জয়ে প্লে অফের কাছাকাছি রাজশাহী
মহসিন উদ্দিন দুদু মিয়া
রেলের স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান সরকারের
পঞ্চগড়ে আলোয়াখোয়া ইউনিয়নকে হারিয়ে জয় বলরামপুরের
ফরায়েজি আন্দোলনের মহানায়ক হাজী শরীয়তুল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

সীমান্তে ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিল বিএসএফ
কাউনিয়ায় পুত্রবধূকে ধর্ষণ চেষ্টায় শশুর আটক
হারিয়ে যাচ্ছে ভগবান চন্দ্র রায়ের জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য
শাবিপ্রবির কুমিল্লা স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে তৌহিদ-সাগর
মাঝরাত থেকে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ট্রেন চলাচল

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝