চাকরি জাতীয়করণসহ ছয় দফা দাবিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় অভিমুখী পদযাত্রা শাহবাগে পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে যায়। এতে ৬ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে শাহবাগ থানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশকে লাঠিপেটা করতে দেখা গেছে। এতে এক নারীসহ ছয়জন আহত হয়েছেন।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে স্বতন্ত্র
ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোট বাস্তবায়ন কমিটি। দাবিতে অবস্থান নেওয়া
ইবতেদায়ি শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এক পর্যায়ে সাউন্ড
গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
এদিকে আহত ব্যক্তিদের ইতোমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহত ব্যক্তিরা হলেন আনোয়ার হোসেন (৩৫), ফরিদুল ইসলাম (৩০), আমিনুল (৩৫), মিজানুর রহমান (৩৫), বিন্দু ঘোষ ও মারুফা আক্তার (২৫)। তারা সবাই ইবতেদায়ি শিক্ষক বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সুপারিশের আলোকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো জাতীয়করণের ঘোষণাসহ ছয় দফা দাবিতে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোট। তারা স্মারকলিপি দিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা করেন।
ইবতেদায়ি শিক্ষকেরা জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছালে পুলিশ জলকামান নিক্ষেপ করে। এরপর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইবতেদায়ি শিক্ষকেরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দেওয়া পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগোতে চাইলে তাঁদের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামান থেকে পানি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
ঢাকা মেডিকেলে ঝালকাঠি থেকে আসা দপদবিয়া শেখবাগল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন বলেন, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে ১৯ তারিখ থেকে প্রেসক্লাবে অবস্থান কর্মসূচি করে আসছিলাম। আজ দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি নিয়ে যাওয়ার পথে শাহবাগ এলাকায় পুলিশ জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠি দিয়ে আমাদের ওপরে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এতে আমাদের এক নারীসহ ছয়জন মাদ্রাসার শিক্ষক আহত হয়। তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
ঢাকা মেডিকেলের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, জরুরি বিভাগের আহত শিক্ষকদের চিকিৎসা চলছে। তবে তাঁদের অবস্থা গুরুতর নয়। শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। শাহবাগ এলাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আন্দোলনকারীরা শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন।
ইবতেদায়ি শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো- ১) স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা নিবন্ধন স্থগিতাদেশ ২০০৮ প্রত্যাহার করা, ২) রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত কোডবিহীন মাদ্রাসাগুলো বোর্ড কর্তৃক কোড নম্বরে অন্তর্ভুক্তকরণ, ৩) স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার আলাদা নীতিমালা, ৪) পাঠদানের অনুমতি, স্বীকৃতি, বেতন-ভাতা, নীতিমালা-২০২৫ অনুমোদন, ৫) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো অফিস সহায়ক নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া ও ৬) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি খোলা অনুমোদনের ব্যবস্থা নেওয়া।
এই শিক্ষকরা বলছেন, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের দাবি আদায়ের ব্যাপারে বার বার ধোকা দিয়েছে। তাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে আর ধোকা খেতে চান না।
কেকে/এজে