ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সদরসহ ১৩টি ইউনিয়নের বাজার, জনপদে গড়ে উঠেছে শত শত ওষুধের দোকান। রাস্তার পাশে কিংবা অলিগলির মোড়ে গড়ে ওঠা এসব দোকানের অধিকাংশেরই নেই ড্রাগ লাইসেন্স ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন। এমনকি ওষুধের ব্যবসার আড়ালে অনেক ফার্মেসিতে নেশার নিষিদ্ধ ট্যাবলেট, সিরাপ বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে।
এসব ফার্মেসিতে পর্দার আড়ালে ছোট কক্ষে বসে রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন দোকানদার নিজেই। নিরীহ দরিদ্র ও অজ্ঞ মানুষদের বিশ্বাস ও আস্থাকে পুঁজি করে তাদের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতারণা করে আসছে এসব অর্থলোভী দোকানদারেরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সদরে প্রায় অনেকেরই ড্রাগ লাইসেন্স থাকলেও, ইউনিয়ন বা গ্রাম পর্যায়ে সেই চিত্র ভিন্ন। সেখানে বিক্রি হচ্ছে নিম্ন মানের বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ।
বাঞ্ছারামপুর একটি নদীবেষ্টিত হাওর উপজেলা। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অধিক। ফলে বহু মানুষ অসুস্থ হলেই আর্থিক সঙ্গতির অভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে প্রথমেই তারা ছুটে যান স্থানীয় এসব ওষুধের দোকান ও হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে। ওই সমস্ত ওষুধের দোকানিরা রোগীদের সমস্যা শুনে আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে দিয়ে থাকে ওষুধ। এতে প্রায়ই রোগীরা সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ, উজানচর, ফরদাবাদ, মানিকপুর, তেজখালি, সোনারামপুর, দরিয়াদৌলত, মরিচাকান্দির বিভিন্ন এলাকার ওষুধের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, দোকান মালিকরা নিজেরাই ডাক্তার সেজে আন্দাজের ওপর ভর করে রোগীদের কাছে ওষুধ বিক্রি করছে। ওষুধের মূল্য সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সঠিক ধারণা না থাকায় তারা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করছে।
গ্রামের লোকজনের সরলতার সুযোগে কিছু মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ ও সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ওষুধ দেদারছে বিক্রি করছে। ফলে এসব ওষুধ সেবন করে রোগ মুক্তির বদলে রোগী আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অপর দিকে, ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ঘুমের ওষুধ কিংবা নিষিদ্ধ নেশার ট্যাবলেট ও সিরাপ বিক্রি হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বহু অবৈধ ফার্মেসী মালিকরা প্রকাশ্যে নিম্নমানের ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বিক্রি করছেন।
এবিষয়ে রোববার (২৬ জানুয়ারি) বাঞ্ছারামপুর ফার্মেসী মালিক সমিতির সভাপতি মোবারক হোসেন ও সাধারণত সম্পাদক মো. মাসুম মিয়া বলেন, সদর পৌর এলাকায় প্রায় সব ফার্মেসীরই ড্রাগ লাইসেন্স থাকলেও প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে সেটি না-ও থাকতে পারে। ইউনিয়ন পর্যায়ের ফার্মেসীগুলো আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ না করার কারণে উপজেলায় কতগুলো বৈধ ফার্মেসী রয়েছে, তা বলা মুশকিল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নোমান মিয়া জানান, লাইসেন্স ও নিম্নমানের ওষুধের বিষয়টি দেখবে ওষুধ প্রশাসন। এটি আমাদের এখতিয়ারে নেই।
রোববার জেলা ওষুধ প্রশাসনের উপপরিচালক ফরা ইয়াসমিন মুঠোফোনে বলেন, যারা লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসী চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় কতটি বৈধ লাইসেন্সধারী ফার্মেসী আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ‘দেখছি’ বলে ফোন কেটে দেন এবং বার বার চেষ্টার পরও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
কেকে/এজে