শিক্ষার্থীদের অধিকার সুরক্ষিত এবং ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়কে সামনে রেখে ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া উচিত বলে মনে করছেন জাবি শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (জাকসু) রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) জাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে আয়োজনের লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে ‘পরিবেশ পরিষদ’। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধি শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসারে গত ১০ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা, ২৪ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে ২৫ জানুয়ারি নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রণয়নের কথা থাকলেও তা হয়নি। এছাড়া আগামি ১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে সভায় উপস্থিত থাকা বেশ কয়েকজন বিভাগীয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া রোডম্যাপ অনুসারে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। এই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া রোডম্যাপ অনুসারে ১ ফেব্রুয়ারিতে তফসিল ঘোষণার উপরও জোর দিয়েছেন বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি বিভাগের প্রতিনিধিরা জোর দিয়েছেন নির্বাচনকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর।
মতবিনিময় সভায় বিভাগীয় প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জামান প্রীতি। তিনি বলেন, জাকসু আমাদের সবার প্রত্যাশার প্রতীক, তবে এটিকে কেন্দ্র করে কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যেন বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি করে একাডেমিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাতে না পারে তার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। এজন্য নির্বাচনের আগে কঠোর নিয়ম-কানুন প্রণয়ন ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। জাকসুকে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এটি এমন একটি সংগঠন হতে হবে যেখানে কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে। এর জন্য কঠোর নিয়ম-কানুন এবং শাস্তির ব্যবস্থা চালু করা আবশ্যক।
আইন অনুষদের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আসিফুল হাসান অমিত সভায় অংশ নিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা দাবি জানিয়েছি পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করতে হবে এবং তফসিল ঘোষণার ২১ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। সভায় উপস্থিত অন্যান্য বিভাগ ও ইনিস্টিউটের প্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। পাশাপাশি আমারা ছাত্রসংসদে কিছু কাঠামোগত সংস্কারের প্রস্তাব করেছি। বর্তমানে জাকসুতে দপ্তর সম্পাদক ও আইন সম্পাদক পদ নেই, যা সংযুক্ত করার দাবি জানিয়েছি। তবে উপাচার্য জানান, গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধি প্রয়োজন। তাই জাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর এই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।
ইতিহাস বিভাগের প্রতিনিধি মুজাতাহিদ হোসেন বলেন, জাকসু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সবার যে প্রতীক্ষা, নানান আলোচনা যে জাকসু হবে হবে কিন্তু হচ্ছে না। এরফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাকসু নির্বাচন করে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার অবসান করা। সংস্কারের যে প্রস্তাবনাগুলো আসছে সেগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে স্বল্প সময়ের মাঝে যৌক্তিক সংস্কার করা এবং যে রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে সেটার মধ্যেই সবকিছু বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা।
মতবিনিময় সভায় দর্শন বিভাগ ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে বিভাগীয় প্রতিনিধিরা একটি স্মারকলিপির মাধ্যমে কিছু দাবি তুলে ধরেন। স্মারকলিপির উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো, জাকসু নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও নারী নেতৃত্ব সুনিশ্চিত করতে তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসন বরাদ্দ রাখতে হবে। জাকসুর অপূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে হবে। এতে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির উপর জোর দেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৪৯তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সিথি নাবিলা বলেন, আমরা সেখানে বলেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষিত সময়ের মধ্যেই যেন জাকসু কার্যকর করা হয়। সম্ভব হলে তা যেন রমজানের ছুটির আগেই কার্যকর হয়। প্রশাসনের কাছে আমরা আবেদন করেছি যাতে করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণার গাইডলাইন প্রদান করা হয়। আমরা সংরক্ষিত নারী আসনের ব্যাপারেও প্রশাসনকে অবগত করেছি। যেনো যে কোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকে।
প্রসঙ্গত, মতবিনিময় সভায় প্রত্যেকটি বিভাগ থেকে একজন ছাত্র ও একজন ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ২টা থেকে শুরু হওয়া এই সভা বিকেল পাঁচটার দিকে শেষ হয়।
কেকে/এজে