ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে আসা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি 'অশোভন' আচরণের অভিযোগ এনে সড়ক অবরোধ ও পরে ড. মামুন আহমেদের বাসভবন ঘেরাও করতে এলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘাত বাঁধে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিল করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের অফিসে দেখা করতে আসেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো - ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিল করা; শ্রেণিকক্ষের ধারণক্ষমতার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি না করানো; শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বিবেচনায় শিক্ষার্থী ভর্তি করানো; ভর্তি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্ক যুক্ত করা এবং সাত কলেজের ভর্তি ফিয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে, মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাবি ব্যতিত নতুন একটি অ্যাকাউন্টে ভর্তি ফি'র টাকা জমা রাখা৷
শিক্ষার্থীদের এই দাবিগুলোকে সমাধান করতে না পেরে উল্টো শিক্ষার্থীদের সাথে বাজেভাবে আচরণ করেন উপ-উপাচার্য ড. মামুন আহমেদ। অথচ অধিভুক্তির মতো জটিল বিষয়গুলো নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড নিয়াজ আহমেদ খান এর আগে সাত কলেজের সাথে কাজ শুরু করেছেন কোনো ধরনের সংঘাত ছাড়াই।
উপ-উপাচার্য ড. মামুন আহমেদের কার্যালয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে 'অশোভন' আচরণের অভিযোগ এনে পরে এর প্রতিবাদে এ ঘটনায় অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদকে ক্ষমা চাওয়া ও পদত্যাগের দাবিতে সন্ধ্যায় সায়েন্সল্যাব, টেকনিক্যাল ও তাঁতিবাজার সড়ক অবরোধ করে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সড়ক অবরোধ শেষে ঢাবি উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) বাসভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে সংঘাত ও উত্তেজনা শেষে এটি সর্বশেষ সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে দুপক্ষের অন্তত পাঁচজন শিক্ষার্থী আহত হন।
সংঘর্ষের নেপথ্যে স্বয়ং উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) ড. মামুন আহমেদ রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এবিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলছেন অনেকেই।
এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী যোবায়ের হোসেন বলেন, রবিবার বিকালে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল তাদের দাবি নিয়ে কথা বলতে মামুন আহমেদের কক্ষে যান। এসময় আন্দোলনকারীদের সাথে মামুন আহমেদের আক্রমণাত্নক কথা বলেন। তিনি আন্দোলনকারীদের মব করছেন বলে উল্লেখ করেন। এসময় সেখানে উপস্থিত আন্দোলনকারীরা মামুন আহমেদকে তাদেরকে মবের সাথে তুলনা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ এখান থেকেই মূলত আজকের আন্দোলন ও সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটেছে। এর দায় উপ-উপাচার্য মামুন স্যারের৷ তিনি এর দায় এড়াতে পারেননা।
উপ-উপাচার্য ড. মামুন আহমেদ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের রিফাত হোসেন নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, উনি চাইলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নিতে পারতেন। তা না করে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে সাত কলেজকে ঢাবির বিপক্ষে এবং ঢাবিকে সাত কলেজের বিপক্ষে নিয়ে গেছেন।
এদিকে সাত কলেজের পাঁচ দফা দাবি যৌক্তিক ছিলো, সেগুলোকে সুন্দরভাবে সমাধান করা যেতো বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষার্থীরা। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর বলেন, তাদের দাবিগুলোতো অযৌক্তিক না। এর আগেও তো তারা আন্দোলন করেছে কিন্তু এত বড় সংঘাত বাঁধেনি। মামুন স্যারে অপরিণামদর্শীতার কারণে এমনটি হয়েছে।
এদিকে সূত্র জানায়, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়া শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রবিবার রাগ দশটা থেকে অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদকে দুঃখপ্রকাশ করে একটি ভিডিওবার্তা দিতে বললেও সেটি দিতে তিনি গড়িমসি করেন। পরে রাত দেড়টার কিছু সময় আগে তিনি ভিডিও বার্তাটি দেন।
এবিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ড. মামুন ঘটনার শুরুতে যদি কোনো বিবৃতি দিয়ে দিতেন তবে ঘটনা এতদূর গড়াতো না। এক্ষেত্রে ড. মামুন বেশ অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সময় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলেও উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান তাদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত রাখেন। কিন্তু এবারই প্রথম প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ খান সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার কথা বলার কিছু সময় পরেই এই সংঘাত শুরু হয়।
কেকে/এইচএস