সৌদি আরবে অবস্থিত ঐতিহাসিক নগরী তায়েফ। পবিত্র মক্কা নগরী থেকে যার দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এ শহরটি পুরোপুরি পাহাড়ের ওপর গড়ে উঠেছে। মক্কা থেকে তায়েফ যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। মক্কার ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার তুলনায় তায়েফের মনোরম আবহাওয়ায় গড় তাপমাত্রা থাকে মাত্র ২৫-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তায়েফ ইতিহাসের পাতায় আলোচিত নানা কারণে। নবী করিম (সা.)-এর দুধমাতা হযরত হালিমা সাদিয়ার বাড়ি এ তায়েফে অবস্থিত। নবুওয়ত প্রাপ্তির পর রাসূলুল্লাহ (সা.) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে মক্কা থেকে তায়েফ গিয়েছিলেন। তবে তায়েফবাসী ইসলাম গ্রহণ না করে নবীজিকে অত্যাচার ও নিগ্রহ করে। সেখানে তিনি প্রায় ১০ দিন অবস্থান করেন এবং নানা নির্যাতনের শিকার হন। এরপরও নবী করিম (সা.) তায়েফবাসীর জন্য দোয়া করেন।
তায়েফ মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এ শহর বিখ্যাত রবি শস্য এবং ফল-ফলাদির জন্য। আঙ্গুর, কমলা, আনারসহ নানা দামি ফল তায়েফে উৎপন্ন হয়। তায়েফের আঙ্গুর বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এ ছাড়া তায়েফে উৎপাদিত সবজি সৌদি আরবের চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশ পূরণ করে। এসব উৎপাদনে বাংলাদেশি কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তায়েফে অবস্থিত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর মসজিদ শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। তিনি ছিলেন ‘রাইসুল মোফাচ্ছেরিন’ অর্থাৎ তাফসিরবিদদের নেতা। খলিফা হযরত ওমর (রা.) কুরআন ও হাদিসের কোনো জটিলতার ক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করতেন। মসজিদ সংলগ্ন একটি লাইব্রেরি রয়েছে, যেখানে প্রাচীন অনেক কিতাব সংরক্ষিত আছে। তবে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়।
হযরত আলী (রা.)-এর মসজিদ এবং এর সামনের বিখ্যাত বুড়ির বাড়িটিও তায়েফের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। এই বাড়ির পাশেই ছিল একটি বড়ই গাছ, যেখানে নবী করিম (সা.) নামাজ পড়তেন। বুড়ি সেখানে কাঁটা দিয়ে নবীজিকে কষ্ট দিতেন। এই বাড়িটি এখনো ঐতিহ্যবাহী সাদামাটির অবস্থায় সংরক্ষিত। এর পেছনে অবস্থিত পাহাড়ে একটি বিশাল ঝুলন্ত পাথর রয়েছে, যা ফেরেশতারা তায়েফবাসীর ওপর ফেলার প্রস্তাব করেছিলেন।
তায়েফ শহর সাজানো-গোছানো, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। শহরের প্রবেশপথে ওকাজ এলাকায় রয়েছে বিশাল ফলমূলের দোকান, বাচ্চাদের খেলার মাঠ এবং ভাড়ায় উটে চড়ার ব্যবস্থা। এ ছাড়া তায়েফে রয়েছে চমৎকার পার্ক, রিসোর্ট, স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ আল কুহ, মসজিদে আদমসহ বেশ কিছু দৃষ্টি নন্দন স্থান।
বলা যায়— তায়েফ শুধু ঐতিহাসিক স্মৃতির শহর নয়, এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনগুলোর জন্যও বিশেষভাবে পরিচিত।
লিখেছেন : রাজিব আল আরাফাত, তায়েফ (সৌদি আরব) থেকে ফিরে।
কেকে/ এমএস