দুই বছর আগে কৃষি শ্রমিক হিসেবে মানুষের বাড়ীতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছিল সাহাবুল। হটাৎ করেই আলাদিনের চেরাগ ধরা দিল তার হাতে। ভিসা প্রতারণা করে বাড়ী গাড়ীসহ অগাধ সম্পত্তির মালিক এখন তিনি। একটি কার ও একটি হা্ইএইচ গাড়ী নিয়ে প্রতিদিন তাকে পাহাড়া দেয় কিছু কতিথ সাংবাদিকসহ মান্তানরা। তবে এই দুই বছরে এক টাকাও দেননি তিনি ইনকাম ট্যাক্স।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের নিতাই কাচারী পাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদ। বেলতলি নামক বাজারে ফুটপাতে বসে করতো কাঁচামালের ব্যবসা। এতে যা আয় হতো তা দিয়ে কোন রকমে চলত দুই মেয়ে এক ছেলেসহ পাঁচ পরিবারের সংসার। অর্থনৈতিক দৈন্য দশার কারণে কাউকে পড়ালেখা শিখাতে পারেন নি আব্দুর রশিদ। বড় ছেলে সাহাবুল সংসারে কষ্ট লাঘবে তিনিও শুরু করেন মানুষের বাড়িতে কৃষি শ্রমিকের কাজ। এভাবে চলত তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসার।
কিন্তু হঠাৎ করেই সাহাবুল পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। জড়িয়ে পরে ভিসা প্রতারণার সঙ্গে। ডলার দিয়ে মধ্য প্রাচ্যের ইমু নম্বর কিনে মোবাইলে সেটাপ দেন। ফেসবুক পেজে ভিডিও বুষ্ট দিয়ে প্রবাসীদের মাঝে থাই গেমের উইন নম্বর ও ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বের ভিসা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রবাসীদের ইমু ও হোয়াট’সঅ্যাপ নম্বর যোগাযোগ করতে বলেন। এতে বাংলাদেশী প্রবাসীরা যোগাযোগ করলে তাদেরকে নানা প্রলোভন দিয়ে জাল পাসপোর্ট ও ভিসা দিয়ে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। টাকা নেয়া শেষ হলে তাদের নম্বর ব্লক করে দেয়া হয়। সাহাবুল এভাবে প্রতারণার জাল বিস্তার করে হাজারো প্রবাসীকে নিঃস্ব করেছেন। এছাড়াও তিনি কোন কোন সময় ভুয়া ডিবি পুলিশ সেজে ছোট শিশুদের অপহরণ করে মুক্তিপণ হাতিয়ে নেয়। ২০২১ সালে ২ সেপ্টেম্বর বসুনিয়া পাড়ার লাল মিয়ার শিশু পুত্র রিফাতকে ডিবির পরিচয়ে অপহরণ করতে গিয়ে এলাকাবাসী তাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপার্দ করে। এ ঘটনায় লাল মিয়া সাহাবুলকে প্রধান আসামী করে আরোও অজ্ঞাতনামা তিন জনের নামে থানায একটি অপহরণ মামলা করে। যার মামলা নং ১/১২০। সাহাবুল উপজেলা আওয়ামী তাঁতীলীগের রাজনীতি করায় তার সাথে ছিলো প্রভাবশালী নেতাদের সখ্যতা।
নিতাই ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য ডাবলু মিয়া সাংবাদিকদের পরিচয় পেয়ে জানান, সাহাবুল ভিসা প্রতারনা, থাই গেম প্রতারনা ও শিশু অপহরণসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তার দাপটে এলাকার কেউ টু শব্দটিও করতে পারেনা। তার উপর কেউ কথা বললে নেমে আসে নির্যাতনের খরগ। ওই সদস্য বলেন, সাহাবুল যে বাড়াটি নির্মাণ করেছেন তৎকালীন খুলনা শীর্ষ সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের স্বর্ণ কমলকেও হার মানাবে।
নিতাই ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান মোত্তাকিনুর রহমান আবু বলেন, গত দুই বছর আগে সাহাবুল মানুষের বাড়িতে দিন মজুরী কাজ করতো। কিন্তু দুই বছরের মধ্যে তিনি নানা প্রতারণার কাজ করে ২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার নেতৃত্বে তারমত অপরাধীদের এলাকায় এখন দৌরাত্ম বেড়েছে কয়েকগুন। এ ধরনের প্রতারণার কাজকে তারা বৈধ পেশা হিসেবে বেচে নিয়েছে। প্রশাসন তাদের টিকিটিও ছুতে পারছেনা।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, থাই গেমে শুধু প্রবাসীরা প্রতারণার শিকার হয়ে স্বর্বশান্ত হচ্ছে না, থাইগেমাররা এলাকার পরিবেশও নষ্ট করে দিয়েছে। অসম অর্থের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। মুল্যবান এবং সম্মানিতো লোকজনদের তুচ্ছ তাচ্ছিলো করা হচ্ছে , সব জায়গায় অর্থের অহংকার দেখানো, সামাজিক অবক্ষয় শুরু হয়ে গেছে। এটা নিমূল করা অতি জরুরী হয়ে পড়েছে। প্রশাসনকে অবশ্যই তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারে মূখোমুখী করতে হবে এবং এদের স্বমূলে নির্মূল করতে হবে।
এ ব্যাপারে ভিসা প্রতারক সাহাবুলের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের মামলায় ফাঁসানো হুমকি দিয়ে বলেন- আমি কি করি , আমার আয়ের উৎস কি তা আপনারা খুঁজে বের করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম ওহিদুন্নবী বলেন- থাই ও ভিসা প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান অবাহত আছে। তথ্য পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেকে/ এমএস