রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ও লক্ষিটারী ইউনিয়নের চরাঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অনিয়মের কারণে উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হলেও থামছেনা বিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম। অনিয়মেই এখানে নিয়মে পরিণত হওয়ায় বিদ্যালয়গুলোতে ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা, দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
সেমবার (২৭ জানুয়ারি) সরজমিনে চরাঞ্চলের মটুকপুর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর মটুকপুর উত্তর বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর চিলাখাল উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শংকরদহ পুরাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে বিভিন্ন অনিয়মের সত্যতা মিলেছে।
মটুকপুর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম এর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়মিত স্কুল ফাঁকি দেয়াসহ নানান অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা শিক্ষা অফিস তাকে কয়েক দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন। তবুও তা কাজে আসেনি।
সোমবার দুপুর একটার দিকে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের সংখ্যা ৩ জন। সে সময় তিনটি শ্রেণীর ক্লাস চলছিল। প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল হাকিম অফিসিয়াল কাজের কথা বলে বিদ্যালয় থেকে সাড়ে বারোটার দিকে চলে গেছেন বলে জানান উপস্থিত ২ শিক্ষিকা পল্লবী রানী ও নাজিয়া নুজহাত। প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম সকাল দশটায় এসে সাড়ে বারোটায় স্কুল থেকে বেরিয়ে গেলেও হাজিরা খাতায় তিনি সকাল ৯ টায় উপস্থিত ও বিকেল ৪ টা ১৫ মিনিটে বিদ্যালয় থেকে প্রস্থান দেখিয়েছেন।
এ সময় শিক্ষিকাদ্বয় দুটি ক্লাস নিলেও আরেকটি শ্রেণীতে শিক্ষার্থীরা এলোমেলো বসে হইচই করছিল।
স্থানীয়রা জানান, হাকিম স্যার অধিকাংশ সময়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন। যেদিন স্কুলে আসেন সেদিনও সকাল দশটার আগে আসেন না। আবার দুপুর একটার মধ্যেই চলে যান।
তারা আরো জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দায়িত্বহীন হাকিম স্যারের পরিবর্তে বিদ্যালয়ের অন্য স্যারকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিলে এ সমস্যা অনেকটাই সমাধান হবে।
এ বিষয়ে কোলকোন্দ ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারি শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন জানান, ওই প্রধান শিক্ষকের আজ কোন প্রশিক্ষণ বা অফিসিয়াল কাজ নেই। তার স্কুলে থাকার কথা, বিষয়টি আমি দেখছি।
একই দিন দুপুর ২টার দিকে চর চিলাখাল উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৩ জন শিক্ষক ও ৭ জন শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে। তখন তৃতীয় শ্রেণীর কক্ষে কোন শিক্ষার্থী না থাকায় দরজায় তালা ঝুলছিল। চতুর্থ শ্রেণীতে ৩ জন ও পঞ্চম শ্রেণীতে ৪ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান জানান, এলাকায় জনবসতি কম থাকায় স্কুলের শিক্ষার্থী কমে গেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজনের অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যথাসময়ে ও নিয়মিত উপস্থিত না হওয়া এবং যথাযথ শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের সন্তানদেরকে কিন্ডার গার্টেন স্কুলে দিয়েছি।
ওই দিন দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে চর চিলাখাল উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) দেবাশীষ রায়কে বিদ্যালয় অফিস কক্ষে দেখা গেছে। অপর কক্ষগুলো ছিল তালা বন্ধ। আর কোন শিক্ষার্থী বা শিক্ষককে পাওয়া যায়নি।
এ সময় স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বিদ্যালয়টিতে স্যারেরা দেরিতে আসেন ও দুপুর হতেই চলে যান। লেখাপড়া ঠিকমতো না হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও স্কুলে আসে না।
একই দিন বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে লক্ষিটারী ইউনিয়নের শংকরদহ পুরাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে বিদ্যালয়টি বন্ধ দেখা গেছে। পাওয়া যায়নি কোন শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে।
এ সময় স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন বিকেল ৪টার এক-দেড় ঘন্টা আগেই স্কুলটি ছুটি হয়।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাগমা শিলভীয়া খান অভিযোগগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে একাধিকবার আব্দুল হাকিম সহ অন্যান্য শিক্ষকদেরকে শোকজ করা হয়েছে। পুনরায় তাদেরকে শোকজ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিষয়টি আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, বিদ্যালয়গুলোর যাবতীয় অনিয়ম দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কেকে/এইচএস