মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শব্দদূষণ নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা হয়ে উঠেছে, যা শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজানো, মাইকের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং একাধিক অনুষ্ঠানে শব্দদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্কুল, কলেজ ও হাসপাতালের আশেপাশে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ থাকলেও তা অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। বিশেষত, স্কুল ছুটির সময় বা হাসপাতালের আশেপাশে যানজট সৃষ্টি হলে হর্নের আওয়াজ এবং অতিরিক্ত মাইক ব্যবহার পরিবেশকে দুর্বিষহ করে তোলে।
এছাড়া, শহরের বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠানের জন্য বহুসংখ্যক মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে, যা মানুষের ঘুম ও পড়াশোনার ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে গভীর রাত পর্যন্ত চলা অনুষ্ঠানগুলোতে উচ্চ শব্দে মাইক ব্যবহারের কারণে আশেপাশের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গলের স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে না। শহরতলীর মুসলিমবাগ এলাকায় গত এক মাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত মাইক ব্যবহৃত হয়েছে, যা জনগণের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, অত্যধিক শব্দে আমার পরিবারের ছোট শিশুসহ এলাকার মানুষের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। রোগীরা, বৃদ্ধরা এমনকি হৃদরোগে আক্রান্ত লোকেরা শব্দদূষণের ফলে প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছে।
শহরের বাসিন্দা আবু সুফিয়ান রায়হান জানান, মাইকের উচ্চ শব্দে রাতের বেলা ঘুমানো খুব কষ্টকর। সম্প্রতি ধর্মীয়-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের নামে চলছে বেশি নৈরাজ্য। গভীর রাত পর্যন্ত চলা এসব প্রচারণা ও অনুষ্ঠানে মাইকের উচ্চ শব্দ নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োগ চাই।
কালিঘাট রোডের ব্যবসায়ী রুহুল আমিন রুবেল জানান, উচ্চ শব্দের কারণে দোকানে বসে কাজ করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। রুবেল আরও বলেন, সকাল থেকে শুরু হয় মাইক ব্যবহার, বিকাল থেকে আবার হর্নের আওয়াজ। এতে আমাদের কাজকর্ম সবই ব্যাহত হচ্ছে।
৫০ শয্যাবিশিষ্ট শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. বিশ্বজিৎ দেব জানাচ্ছেন, শব্দ দূষণের কারণে শিশুদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন, শব্দ দূষণ বিশেষ করে নবজাতকদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি শ্রবণশক্তি হ্রাস, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং মানসিক অসুখ সৃষ্টি করতে পারে।
শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসন যদিও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে, কিন্তু এখনো তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, সড়কে উচ্চ শব্দে অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজালে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেই। এছাড়া শহর বা আবাসিক এলাকায় কোনো অনুষ্ঠান থেকে অতিরিক্ত মাইক ব্যবহার ও উচ্চ শব্দে কারো ব্যাঘাত ঘটছে এধরণের কোনো খবর পেলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এর ১৮ নম্বর ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শব্দ দূষণ করলে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। সুতরাং, সকল নাগরিককে সচেতন হতে হবে এবং আইন মানতে হবে।
কেকে/এএম