# চলচ্চিত্র সংস্কারে ১ দফা দাবি এবং ১৮টি প্রস্তাবনা বিএফএসএ’র
# সস্কৃতি সংক্রান্ত সবকিছুকে এক মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার আশ্বাস উপদেষ্টার
# ঘেরাও করে দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান সংস্কৃতি উপদেষ্টার
জাতীয় চলচ্চিত্র সম্মেলন ২০২৫-এ চলচ্চিত্র বিষয়ক স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠনের একদফা দাবি এবং চলচ্চিত্রের সংস্কারের ১৮টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন চলচ্চিত্রের অংশীজনরা। এসময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী অংশীজনদের ঘেরাও করে দাবি বাস্তবায়ন করার আহ্বান করেন।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকাল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বাংলাদেশ ফিল্ম স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (বিএফএসএ) এর আয়োজিত সম্মেলনে এই দাবি উত্থাপন করেন অংশীজনরা।
এসময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীসহ চলচ্চিত্র বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী, প্রযোজক এবং পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেনি বলে জানানো হয়।
এক দফা দাবি নিয়ে সম্মেলনে বক্তারা বলেন, চলচ্চিত্রে বহু খাত,কলা মাধ্যম ও শিল্প জড়িত। তাই কেবল তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলচ্চিত্রের কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। চলচ্চিত্রের সকল অংশিজনের দাবি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চলচ্চিত্রের জন্য স্বতন্ত্র চলচ্চিত্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। এসময় তারা তিন মাসের মধ্যে মন্ত্রনালয় গঠন করার দাবি জানান।
চলচ্চিত্রকে দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক খাত ঘোষণা করা,চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট পেশাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং বিগত সরকারের সময়ে অনুমোদিত চলচ্চিত্রের পথে বাধা প্রদানকারী আইনসমূহ বাতিলসহ মোট ১৮টি প্রস্তাবনা পেশ করেন বিএফএসএ সংগঠনটি।
সম্মেলনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী স্বতন্ত্র চলচ্চিত্র মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না বলে জানান। চলচ্চিত্র জগতের নানা সীমাবদ্ধতা এবং সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে তিনি অংশীজনদের ঘেরাও করে দাবি বাস্তবায়নের আহবান জানান।
তিনি বলেন, যে দেশে বিশাল সংখ্যক মানুষ সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র চায় সে দেশে চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান এখনো ঠিকমতো না দাঁড়ানোর বিষয়টি দুখঃজনক। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে দেশে নানা সংস্কার চলছে। তবে চলচ্চিত্রের কোনো সংস্কারের উদ্যোগ কেউ নিতে পারিনি। এর কারণ, আমরা এখনো রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আছি। এর আগেও চলচ্চিত্র সংস্কারের অনেক প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। এর ব্যর্থতা সরকারের এবং আমরা যারা সরকারে আছি তাদের।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মন্ত্রণালয়ের বণ্টন গুলো সঠিকভাবে করা হয়নি। যেমন তথ্যমন্ত্রণালয় সংস্কৃতি বা চলচ্চিত্র দেখার জন্য তৈরি হয়নি। তারপরও তথ্যমন্ত্রণালয়ের অধীনে এগুলোকে রাখা হয়েছে। পৃথিবীর সব জায়গায় চলচ্চিত্র এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়কে একত্রে রাখা হলেও আমাদের দেশে তা করা হয়নি। চলচ্চিত্র জগতের সকল ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের তথ্য এখন পর্যন্ত এক জায়গায় নেই। ফলে এবিষয়ে সমন্বিত কোনো উদ্যোগও নেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি স্বতন্ত্র চলচ্চিত্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে বলেন, স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রাক্টিকালি হবে না। তবে, আমরা চলে যাওয়ার আগে সংস্কৃতির সবকিছুকে এক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একত্রিত করে যাব এবং মন্ত্রণালয়ে এবিষয়ে কিছু সুপারিশ করে যাব। যাতে ভবিষ্যৎে যেকোনো সরকার সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
তিনি চলচ্চিত্রের অংশীজনদের বলেন, আপনারা চলচ্চিত্রের জগতের সংকটের সমাধান নিয়ে রাস্তায় নামেন, আমাদেরকে ঘেরাও করে কাজ করতে বাধ্য করেন। চলচ্চিত্রের সকল অংশীজনকে নিয়ে আওয়াজ তুলে সবগুলো দাবি বাস্তবায়ন করুন। এছাড়া সমাধান আসবে না। এখন পর্যন্ত চলচ্চিত্র জগতে বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা ব্যক্তি উদ্যোগে হচ্ছে। রাষ্ট্র কখনো কিছু দিতে পারেনি।
সম্মেলনে উপস্থিত চলচ্চিত্র প্রযোজক, শিক্ষার্থী এবং দর্শকগন চলচ্চিত্র জগতের সংস্কারের বিষয়ে নানা পরামর্শ প্রদান করেন। দেশে চলচ্চিত্রের জগতে নানা সীমাবদ্ধতার কথাও তুলে ধরেন তারা।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সার্চ কমিটির আহ্বায়ক মো. আল আমিন রাকিব অংশীজনদের দাবি, প্রস্তাবনা এবং পরামর্শগুলো লিখিত আকারে মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাবেন বলে জানান।
কেকে/এজে