ফরদাবাদ ড.রওশন আলম কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মুফতি কামাল উদ্দিন। সাদামাটা মানুষটি গতকাল (সোমবার) হিজড়াদের হামলার স্বীকার হন।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের কল্যানপুরে জামায়াতে ইসলামের নেতা ও শিক্ষকের বসবাস।
মুফতি কামালের মেয়ে ৬ মাস আগে সন্তান প্রসব করে বাবার বাড়িতে। এ সংবাদ চলে যায় হিজড়াদের কাছে। গত ২৫ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবী করে হিজড়াদের সংঘবদ্ধ চক্র। তিনি দিতে রাজি না হওয়ায় মঙ্গলবার দুপুরে এই শিক্ষকের বাসার কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে উলঙ্গ হয়ে নাচানাচি ও হেনস্তা করতে থাকে। এরপর, এলাকাবাসী এসে হিজড়াদের পিটুনি দিয়ে এলাকা ছাড়া করে। এলাকা ছাড়ার সময় হুমকি দেয় "পরবর্তীতে দেখে নেয়ার"।
জানা গেছে, শিক্ষক মুফতি কামাল সামাজিক কারণে থানা বা পুলিশমুখো হননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সর্বত্র হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার টাকা তারা চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে এই এলাকায় তারা চাঁদাবাজি করছে। তাদের (হিজড়া) এ অত্যাচার দেখেও অনেকে না দেখার ভান করছেন।
হিজড়াদের প্রধান টার্গেট হলো সদ্য সন্তান প্রসব করা নারী ও বিয়ে বাড়ি। দল বেঁধে বিয়ে বাড়িতে গিয়ে অবস্থান বুঝে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দাবি করে তারা। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা শরীর থেকে জামা-কাপড় খুলে অশোভন আচরণ করে এবং নানা অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে। পরে মানসম্মানের ভয়ে ওদের চাহিদা পূরণ করে বিদায় করতে হয়।
জানা যায়, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন আনাচে-কানাচে আছে তাদের বিচরণ। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তাদের এজেন্টও আছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ওই এজেন্টরা এলাকার কোনো বিয়ে, জন্ম ও বিবাহবার্ষিকীতে তাদের খোঁজ দিয়ে থাকেন। সময় মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হানা দেয় তারা।
এ ছাড়া বিভিন্ন হাট-বাজারে একেক দিন একক গ্রুপ গিয়ে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করছে। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে অপমান করে তারা। তাই সম্মান বাঁচাতে বাধ্য হয়েই চাঁদা দেন সাধারণ মানুষ।
দিনের বেলায় চাঁদাবাজি করলেও রাতে বিভিন্ন বাসায় বিভিন্ন অপকর্ম হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কয়েকজন হিজড়া মাদকসহ ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটে জামিনে আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার চকবাজারের বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, হাটের দিনসহ প্রায়ই এসে হিজড়ারা টাকা তোলে। টাকা না দিতে চাইলে বিভিন্ন গালমন্দসহ মারধরও করে ব্যবসায়ীদের।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, কোন দেশে বাস করি জানি না, এটা যেন মগের মুল্লুক চলছে।
পৌর এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী বাহার উদ্দিন জানান, বাঞ্ছারামপুরে হিজড়াদের চাঁদাবাজিকে কথিত ভদ্রলোকেরা নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেন। বাসা ভাড়ার আড়ালে হিজড়ারা নানা অপকর্মে লিপ্ত বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বাঞ্ছারামপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, আসলে হিজড়াদের উৎপাতে সব জায়গার মানুষ অতিষ্ঠ। সরকার এদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘যদি অভিযোগ করে তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
হিজড়াদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে প্রশাসনের আশু দৃষ্টি কামনা করছে সচেতন মহল।
কেকে/এআর