গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তার শাখা নদীর উপর স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সাঁকো নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। দুই পাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের যোগাযোগ সমস্যার সমাধান হবে এ উদ্যোগের মাধ্যমে। স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতা ও শ্রমেই নির্মিত হচ্ছে কাঠের এই সাঁকো।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের জিগাবাড়ী খেয়াঘাটে সাঁকো নির্মাণের উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজির হোসেন।
সাঁকো নির্মাণ কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা জামায়াতের আমির শহিদুল ইসলাম সরকার মঞ্জু।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, বেলকা ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি একেএম নাজমুল হুদা, সেক্রেটারি ওহেদুজ্জামান মিয়া, ইউপি সদস্য রেজাউল আলম, জবেদ আলী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজহার আলী, মাওলানা আতাউর রহমান, মাওলানা আব্দুল আজিজ, আবু ইউসুফ, বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম, ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী, স্থানীয় মফিদুল ইসলাম প্রমুখ।
তিস্তার শাখা নদী জিগাবাড়ী ঘাটে নির্মিত সাঁকোটি প্রায় ১৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮ মিটার প্রস্থের হবে। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা, যা পুরোপুরি স্থানীয়দের অর্থায়নেই সম্পন্ন হচ্ছে। স্থানীয়রা আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি স্বেচ্ছাশ্রমেও অংশ নিচ্ছেন। সাঁকো নির্মাণে স্থানীয় যুবকরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন।
কাঠের এই সাঁকো নির্মাণ হলে চরাঞ্চলের মানুষের সাথে উপজেলা শহরের সংযোগ স্থাপন হবে। এছাড়াও কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে। ফলে শিক্ষার্থী, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হবে। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ছিল খেয়া নৌকা, যা বর্ষাকালে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠত। এখন অপেক্ষা সাঁকোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার। স্থানীয়দের আশা, এটি বাস্তবায়িত হলে তাদের জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত হবে।
স্থানীয় কৃষক মফিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ফসল বাজারে নিতে অনেক কষ্ট হয়, বিশেষ করে বর্ষাকালে। নৌকা থাকলেও তা সবসময় পাওয়া যায় না। এই সাঁকো হলে আমাদের ভোগান্তি অনেক কমবে, কৃষকদের জন্য এটি বড় পাওয়া।
একই কথা বলেন শিক্ষার্থী মারিয়াম আক্তার। তিনি বলেন, ‘স্কুলে যেতে প্রতিদিন নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বর্ষাকালে অনেক সময় নৌকা থাকে না, আবার থাকলেও পারাপারে ঝুঁকি থাকে। সাঁকো হয়ে গেলে আমরা নিশ্চিন্তে স্কুলে যেতে পারব।
স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, সাঁকো নির্মাণ হলে যাতায়াত সহজ হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং কৃষকরা সহজেই তাদের পণ্য বাজারে নিতে পারবেন।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, আমাদের এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ সমস্যায় ভুগছেন। বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া নদী পারাপারের কোনো উপায় ছিল না। এই কাঠের সাঁকো নির্মাণ হলে দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে, শিক্ষার্থীদের কষ্ট কমবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যও সম্প্রসারিত হবে। এটি শুধু একটি সাঁকো নয়, বরং মানুষের স্বপ্ন ও প্রয়োজনে গড়া এক অনন্য উদ্যোগ। সবাই মিলে এটি সম্পন্ন করতে পারলে আমাদের এলাকার উন্নয়নে বড় অবদান রাখবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজির হোসেন বলেন, জনগণের স্বেচ্ছাশ্রমে এমন মহৎ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এটি স্থানীয় উন্নয়নের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ কাজে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
কেকে/এএম