জামালপুর শহরের দড়িপাড়া বাইপাস এলাকায় দি রেনেসাঁ হাসপাতালে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একই হাসপাতালের নার্স ধর্ষণ অপচেষ্টা, শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন থানায় ও সিভিল সার্জনের বরাবরে ভুক্তভোগী নার্স।
এ ঘটনায় গত ২৩ জানুয়ারি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সদর থানার পুলিশ। ভুক্তভোগী নার্সের অভিযোগ গত ২৯ ডিসেম্বর প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন ডা. মো. শাহাদত হোসেন তাকে একা পেয়ে দস্তা দস্তি শুরু করে এক পর্যায়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। তাৎক্ষণিক সে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার দাবি করেন। কিন্তু হাসপাতাল কতৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা না নিতে নিষেধ করেন। বিচারের নামে কালক্ষেপণ করে যাচ্ছেন রেনেসাঁ হাসপাতাল কতৃপক্ষ। বেশকিছু দিন অতিবাহিত হলে বাধ্য হয়ে সুবিচার না পেয়ে থানা ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানান ভুক্তভোগী নার্স।
অসহায় ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযোগ করে বলেন, অভিযুক্ত ডাক্তারের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং আমাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিচ্ছেন।
জামালপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দি রেনেসাঁ হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাদত হোসেনের নিবন্ধনকৃত চিকিৎসক সনদ বাতিল করাসহ ঐ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নার্স মুন্নি একটি আবেদন করেছেন।
অপরদিকে ২৯ জানুয়ারি বুধবারে দি রেনেসাঁ হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে রিসিপশনিস্ট এবং চিকিৎসক নেই। রোগীরা কাক ডাকা ভোর থেকে ডাক্তারদের জন্য দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন, কিন্তু কোনো চিকিৎসকে খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
পরে চিকিৎসকের ভিজিটিং কার্ডের মাধ্যমে জানা যায়, প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন ডা. মো. শাহাদত হোসেন। তিনি এমবিবিএস, এমসিপিএস, গাইনী অ্যান্ড অবস্ বর্তমানে তিনি মমিনসিংহ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল কর্মরত আছেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত দি রেনেসাঁ হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখেন।
অভিযুক্ত চিকিৎসক ডাক্তার শাহাদাত হোসেনের মুঠোফোনে হাসপাতালের নার্স ধর্ষণের অপচেষ্টা ও শ্রীলতাহানি ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুন্নি কোনো প্রশিক্ষিত নার্স না। তাই অপারেশন থিয়েটার (ওটিতে) একটা চাইলে আর একটা দেয়। এজন্য রাগ করে একটি থাপ্পর দিয়েছি মাত্র। প্রশিক্ষিত নার্স ছাড়া ওটিতে কিংবা হাসপাতালে রোগী চিকিৎসা কীভাবে করাচ্ছেন জানতে চাইলে তার কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়ী আমি নই।
নার্স ধর্ষণের চেষ্টা ও শ্লীলতাহানির বিষয়ে হাসপাতাল মালিক ডাক্তার এ কে আজাদ এর কাছে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটু দূরে আছি। হাসপাতালে কর্মরত আব্দুল জলিল আছে তার সাথে যোগাযোগ করুন।
আব্দুল জলিলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানায়, হাসপাতালের লাইসেন্স নং- HSM 4314548,প্যাথলজি লাইসেন্স নং- HSM 4514549। কিন্তু হাসপাতালে লাইসেন্স নবায়ন আছে কিনা এবং পরিবেশ অধিদফতর কোনো ছাড়পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো কাগজপত্র না দেখিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন ।
অপরদিকে হাসপাতলে চারজন নার্স প্রশিক্ষিত সনদ প্রাপ্ত কিনা এ সংক্রান্ত বিষয় জানতে চাইলে তাদের বৈধ সনদপত্র না দেখিয়ে বলেন, তারা প্রত্যেকেই শিক্ষানবিশ নার্স। যেখানে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা সেখানে প্রশিক্ষিত নার্স ব্যাতিরেকে শুধুমাত্র শিক্ষানবিশ নার্স দ্বারা চিকিৎসা দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ কিনা এর কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে জামালপুর সিভিল সার্জনের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, মুন্নি আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে আমি তার অভিযোগ গ্রহণ করেছি এবং ডা. মো. শাহাদত হোসেন বিরুদ্ধে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/এএম