সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। অভিযানে স্থলবন্দরে নানা অসঙ্গতির সত্যতা মিলেছে। দুদক বলছে তামাবিল স্থলবন্দরে প্রতি মাসে ৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব বেশি ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুদকের চার সদস্যের একটি দল এ অভিযান চালায়। দুদক সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদার ও তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান অভিযানের নেতৃত্ব দেন।
লোড আনলোডের তথ্য জাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, ৫ টনের ট্রাকে আসছে ১০ থেকে ১২ টন পণ্য। প্রতি ট্রাক ৫ থেকে ৬ টন পণ্য বেশি আসছে। এ স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫শ ট্রাক আসছে। সে হিসেবে দিনে ১৫ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আর মাসে হারাচ্ছে ৩ কোটি ৩২ লক্ষা টাকা। পাশাপাশি হুসনে আরা এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লোড-আনলোডের কোনো কাজ না করেই গত অর্থ বছরে (২৩-২৪) প্রায় দশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সত্যতাও পায় অভিযানিক দলটি। এসব বিষয়ে অধিকতর তদম্ত শেষে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানায় দুদক।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আমদানিকারকদের কাছ থেকে অভিযোগ পায়নি তারা। পাশাপাশি পণ্য পরিবহণে অতিরিক্ত ওজন থাকলে কাস্টমস নিয়মিত মামলা দায়ের করছে বলে দাবি তাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা নিজেদের শ্রমিক দিয়েই পণ্য লোড-আনলোড করে আসছে। আবার এ জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রতি টনে তাদের প্রায় ১৪৬ টাকা ফি দিতে হচ্ছে। স্থল বন্দরের হিসাব অনুযায়ী শুধুমাত্র ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ১৫ লাখ টন পাথর আমদানি থেকেই লেবার হ্যান্ডলিং ফি বাবদই ২২ কোটি টাকা স্থলবন্দরকে পরিশোধ করেছে ব্যবসায়ীরা।
২০১৭ সালে স্থল বন্দর কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই এমন কাণ্ড চলমান থাকলেও এতদিন কেউ মুখ খোলেনি। কারণ হিসাবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, তামাবিল পাথর আমদানি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলী। তার সঙ্গে ঠিকাদারের আঁতাত থাকায় কেউ কথা বললেই নানাভাবে নাজেহাল করা হতো।
দীর্ঘদিন ধরে এই স্থলবন্দরে ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ী নাসির আহমদ। তিনি খোলা কাগজকে জানান, কোনোদিনই ঠিকাদার বা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো লোড-আনলোড সেবা পাননি। অথচ বন্দরে ট্রাক ঢুকলেই টনপ্রতি ১৪৬.৩৪ টাকা আগে জমা দিতে হয় ব্যাংকে। যে সেবার জন্য টাকা জমা দেন সেই সেবা নিতে পুনরায় নিজস্ব শ্রমিক নিয়োগ করে নগদ অর্থ দিতে হয়। সেক্ষেত্রে লোড-আনলোডে দিগুণ খরচ বহন করতে হচ্ছে তাদের।
তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান খোলা কাগজকে বলেন, অনেক স্থলবন্দরেই ঠিকাদার সেবা দিচ্ছে। তিনি বলেন, পাথরের ক্ষেত্রে লেবার হ্যান্ডলিং চার্জ থাকবে কিনা তা ইতঃমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান খোলা কাগজকে জানান, তিনিও বিষয়টি জানেন। ঠিকাদার ইস্যুতে শ্রম আইন ও স্থলবন্দর আইনের বাধ্যবাদকতায় কিছু করা যাচ্ছে না। তবে তিনি বলেন, এসব ফি স্থলবন্দরের আয়ের উৎস।
কেকে/এজে