দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো ঘটনা সহ্য করা হবে না। যারা দলের নীতি ও আদর্শ উপেক্ষা করে স্বার্থান্বেষী কার্যকলাপে লিপ্ত হবেন, তাদের বিরুদ্ধেই নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।’

সম্প্রতি কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল, হুমকি-ধামকি, দুর্নীতি এবং অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দলের ভাবমূর্তি রক্ষা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর সিদ্ধান্তও নিয়েছেন হাইকমান্ড। এমনকি পান থেকে চুন খসলেই নেওয়া হচ্ছে সাংগঠনিক ব্যবস্থা। কারো কারো বিষয়ে পরবর্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দলীয় পদ ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মূল দল থেকে শুরু করে অঙ্গ দলগুলোরও একই অবস্থা। তথ্য বলছে, ৫ আগস্টের পর থেকে ইতোমধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের নানা অভিযোগে সারা দেশে ১২০০ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলটির সিনিয়র নেতারাও জানিয়েছেন ‘যারা দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি প্রয়োজনে বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেও পিছবা হবেন না।’

এক ভার্চুয়াল সভায় তারেক রহমান বলেন, ‘মানুষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওপর আস্থা রাখতে চাচ্ছে। এ আস্থা নষ্ট করার জন্য কেউ যদি কাজ করে, তাকে দলে রাখা সম্ভব হবে না। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না।’ এ ছাড়া দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যে কোনো অনিয়ম বা দলীয় আদর্শ পরিপন্থি কার্যকলাপ দেখা গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে। 

এদিকে গতকাল যশোরে এক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কোনো নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ডের কারণে দলের ওপর থেকে মানুষের আস্থা নষ্ট হলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

এ সময় তিনি বলেন, জনগণ যদি আপনার পেছনে না থাকে, তাহলে আপনি কীসের নেতা। মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রাখতে চাইছে। এ আস্থা নষ্ট করার জন্য যদি কেউ কোনো কাজ করে, তাহলে তাকে আমি টানব না। এখানে দলকে স্বার্থপর হতেই হবে। কোনো ব্যক্তি, কর্মী বা নেতার কারণে যদি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়, তাহলে আমরা তাকে নিজের করতে পারব না।

তিনি আরো বলেন, আমরা বহু অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যদিয়ে আজকে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। কেউ নিজের স্বার্থের জন্য দলের স্বার্থ নষ্ট করলে তাকে আমাদের পক্ষে টানা সম্ভব নয়। কেউ কেউ বলে যে, যারা অপরাধ করেছে, ভুল করেছে তাদের সঙ্গে দলের সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। এতে কি হবে? কী হবে সেটা পরের বিষয়। কিন্তু আমার অবস্থান পরিষ্কার, সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। যখন যেটা জানব ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করছি।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, কেউ যদি বলে, আপনি দল থেকে বের করে দিলেন, এতে কি হবে? সমাজে ভালো-মন্দ সব ধরনের মানুষ আছে। আমরা খারাপ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাই না। অন্তত এ বিষয়ে আমরা পরিষ্কার। মুখে বলব একটা, কাজে করব আরেকটা, তা হবে না। আমরা যা মুখে বলছি, তা কাজে প্রমাণ করার চেষ্টা করব। তার প্রতিফলন থাকবে। তিনি আরো বলেন, একটি রাজনৈতিক দল, সংগঠন হিসেবে যাতে সর্বোচ্চ করতে পারি, আমরা সেটাই করছি। আমরা যদি সরকারে থাকতাম, তাহলে যেটা করতে পারতাম, দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি দেশের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম। এ মুহূর্তে আমরা সেই অবস্থানে নেই। কাজে সেই অবস্থানে যদি আমাদের যাওয়ার সুযোগ হয়, আজকে যেমন শুধু দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করে দিচ্ছি। তেমনি সরকারে থাকলে অন্যায়কারী যেই হোক না কেন, আমরা মুখে যেটা বলি, কাজেও সেটির প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করব।

৫ আগস্ট থেকে দলের নেতাকর্মীদের শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা যদি জনবিচ্ছিন্ন হয়, জনগণের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাহলে কি পরিণতি হয়, আমরা ৫ আগস্ট দেখেছি। ৫ আগস্ট থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। জনগণকে সঙ্গে রাখতে হবে। জনগণ থেকে যদি দূরে সরে যাই, তাহলে ৫ আগস্টের পরিণতি আমাদের হবে।

এর আগে গত মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির আয়োজনে খুলনা-সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় বিএনপির কর্মশালায় ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। সেখানে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি শীর্ষক ওই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় খুলনা জেলা, মহানগর, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার নেতারা অংশ নেন। ‘মানুষ বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চায়, বিএনপির কাছে মানুষের অনেক প্রশ্ন আছে’ এমন মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘সামনে নির্বাচন হলে বিএনপির সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা সরকার গঠন করার। সরকার গঠন করলে বিএনপি মানুষের জন্য, দেশের জন্য কিছু করতে পারবে বলে মানুষের আস্থা বা বিশ্বাস আছে। অনেকে অনেক কথা বলবেন, অনেকের অনেক রকম থিওরি আছে, অনেক রকম বক্তব্য আছে, থাকাটাই স্বাভাবিক। আমরা সেটা আশাও করি। প্রত্যেকে প্রত্যেকের মনোভাব তুলে ধরবেন। প্রত্যেকে প্রত্যেকের কথা বলবেন। এটাই গণতন্ত্রের বিউটি। কিন্তু দিন শেষে একজন বেকার জানতে চাইবেন, তার বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচানোর জন্য আপনি কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন বা করতে চান। একজন মা-বাবা দিন শেষে জানতে চান, তার সন্তানের লেখাপড়ার বিষয়ে আপনি, বিএনপি দল হিসেবে কী পদক্ষেপ নেবে। পরিবারের সদস্যরা জানতে চাইবেন, বিএনপি যদি দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়, তারা চিকিৎসাসেবার জন্য কী পদক্ষেপ নেবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিকভাবে কার সঙ্গে যাব, কাকে গ্রহণ করব, কাকে গ্রহণ করব না, কার সঙ্গে সম্পর্ক করব, কার সঙ্গে সম্পর্ক রাখব না, এসব মানুষ দেখবেন; তবে মানুষ তার দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান সম্পর্কে জানতে চাইবেন। এ মুহূর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল, নুন এসব জিনিসের দাম বাড়ছে। মানুষের আয় বাড়ানো বা দাম সহনশীল করার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এগুলো মানুষ জানতে চান, দেখতে চান।’

কেকে/ এমএস