ছিলেন সিডি ক্যাসেট বিক্রেতা। স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থীকে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জিতিয়ে হয় স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। এই নেতার নাম সাদ্দাম হোসেন। তিনি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর চলে যান সৌদি আরব। সেখান থেকে গত সোমবার দিবাগত গভীর রাতে দেশে ফিরেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেফতার হোন ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে। গ্রেফতারের পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে তাকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করে। গত বছরের ৪ ও ৫ আগস্ট দেবিদ্বার উপজেলা সদরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে বাসচালক রুবেল মিয়া ও শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেনকে গুলি করে হত্যার দায়ে সাদ্দাম এখন কারাগারে। এই ঘটনাসহ তার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যা চেষ্টা, চাঁদাবাজি, গুলাগুলির দায়ে ৮টি মামলা রয়েছে।
সাদ্দাম কারাগারে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেবিদ্বারের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় মানুষের মুখে মুখে ভেসে উঠছে তার অপকর্মের কথা। কে এই সাদ্দাম?
সাদ্দাম হোসেন কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা সদরের পুরাতন বাজার সংলগ্ন মাদ্রাসা পাড়ার জামাল উদ্দিনের মেজ ছেলে। জামাল উদ্দিন ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রি। সাদ্দাম রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আগে তার বড় ভাইয়ের সাথে দেবিদ্বার সদরের কলেজ সড়কে একটি ছোট দোকান নিয়ে বিক্রি করতেন সিডি ক্যাসেট ও সেলাইয়ের সুতা।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ের পর হন এ দলের অনুসারী। এরমধ্যে তার কেটে যায় বহুদিন।
পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধমে দেবিদ্বারের সাবেক এমপি রাজি মোহাম্মদ ফখরুলকে (স্বতন্ত্র) হাতি মার্কায় বিজয় করে এ এমপির আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন সাদ্দাম।
এছাড়াও বিএনপির সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সির বিরুদ্ধে মামলা ও তার ওপর হামলা করেও আওয়ামী লীগ নেতাদের আস্তা অর্জন করেছিল৷ এ সবের পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নাই সাদ্দামকে। সিডি ক্যাসেট ও সেলাইয়ের সুতা বিক্রেতা হয়ে ওঠেন রাজনীতিবিদ।
উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে কথা হয় স্থানীয় লোকজন সাথে। নাম না প্রকাশের শর্তে তারা বলেন, সাদ্দাম হোসেন দেবিদ্বার উপজেলায় ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্কের! ক্ষমতাধর হওয়ায় কর্মী-সমর্থকের অভাব ছিল না তার। আওয়ামী লীগ সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় ঘুম-খুন, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, জমি দখল, ভোট ডাকাতির মত অপকর্মে জড়িত ছিলেন কর্মী-সমর্থকের নিয়ে।
সুধু সন্ত্রাসী কার্যক্রমে শান্ত থাকেননি সাদ্দাম। বিরোধীদলসহ নিজ দলের ভিন্ন মতাদর্শী নেতাকর্মীদের দমন-নিপিরন সভা সেমিনার পন্ড করতে গুলি সে।
সাদ্দামের প্রভাব বেশি পড়েছিল নির্বাচনে। ২০২১ সালে নিজ দলের ভিন্ন মতাদর্শী প্রার্থীকে হারাতে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতার পক্ষে ভোট ডাকাতি এবং একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচন ভোট ডাকাতিতে ছিল তার একক আধিপত্য।
এছাড়াও একই দলের ভিন্ন মতাদর্শী সিনিয়র জ্যেষ্ঠ নেতা ও বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর গুলি ও দলীসভা পন্ড হামলা-মামলা করতেন সে।
এসব মিলিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গড়েছেন কোটি কোটি টাকা ও সম্পত্তি। সর্বশেষ ২০২৩ সালে অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের টয়োটা কোম্পানির ‘নোহা বক্সি’ গাড়িতে চলাফেরা করতে গিয়ে দেখা গেছে তাকে। এর আগে দেবিদ্বার নিউমার্কেট সদরে গড়ে তুলেছিলেন একটি অফিস। এই অফিস থেকে পরিচালনা হতো তার সব অপকর্ম।
দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দিন ইলিয়াস জানান, দেবিদ্বার থানায় সাদ্দামের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা চলমান। এরমধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দুইজনকে গুলি হত্যার দায়ে ৩টি, একজনকে হত্যা চেষ্টার দায়ে একটি ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ের আরো ৪টি মামলা রয়েছে।
কেকে/ এমএস