শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫,
১৮ মাঘ ১৪৩১
বাংলা English

শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: ওমরাহ করতে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বাবর      তাওহিদী জনতার অন্তরালে কারা      আজও অনশনে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা      যুক্তরাষ্ট্রে হেলিকপ্টার-বিমান সংঘর্ষে সব আরোহীর মৃত্যু      আন্দোলনের নামে বাড়ছে মামাবাড়ির আবদার      যুক্তরাষ্ট্রে হেলিকপ্টার-বিমান সংঘর্ষ, নিহত বেড়ে ৪০      ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা শুরু, দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ আজ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
আন্দোলনের নামে বাড়ছে মামাবাড়ির আবদার
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫, ১০:১৩ এএম আপডেট: ৩১.০১.২০২৫ ১১:২৫ এএম  (ভিজিটর : ৫১)
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

মহাখালীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে চোখের টিউমারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে শিশু অর্পিতাকে নিয়ে ফিরছিলেন তার বাবা-মা। পথে যানজটে ঘণ্টাখানেক বাসে আটকে থাকার পর বাস থেকে নেমে অর্পিতাকে কোলে নিয়ে আগারগাঁওয়ের বাসার উদ্দেশে হাঁটতে শুরু করেন তারা। এ দম্পতির মতো গতকাল দিনভর দুর্ভোগ পোহাতে হয় হাজারো মানুষকে। আর এই দুর্ভোগের কারণ সরকারি তিতুমীর কলেজের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি। স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করাসহ সাত দফা দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এতে কলেজের সামনের সড়কের দুই পাশে (আমতলী থেকে গুলশান ১ এবং গুলশান ১ থেকে আমতলী) যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
 
শুধু তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্র্থী নয়, কয়েদিন আগে বিভিন্ন দাবিতে মাঠে নামেন রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর আগে গত ২৮ ও ২৯ অক্টোবর শিক্ষার্থীরা ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। ৬ নভেম্বর উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি স্থগিত করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে পুলিশ, আনসার, ব্যাটারিচালিত অটোচালকসহ অনেকেই আন্দোলনে নামেন। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই এ আন্দোলনের প্রবণতা বাড়তে থাকে। এ আন্দোলন কখনো কখনো সহিংস রূপ ধারণ করে। এতে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়তে হয় রাজধানীবাসীকে। এতে ক্ষোভ বাড়ছে জনমনে। প্রশ্ন উঠেছে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়েও। 

গত বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে বলা হয়, ৬ মাসে ১৩৬টি আন্দোলন হয়েছে দেশে। তাতে আরো বলা হয়, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে ৬ মাসের কম সময়ে এত আন্দোলন মোকাবিলা করার নজির নেই আর কোনো সরকারের। 

এদিকে বিগত সরকারের আমলে অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের পুনর্বহালের দাবিতে আবারো আন্দোলনে নেমেছেন তারা। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তারা একটি পদযাত্রা বের করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে পদযাত্রাটি সচিবালয়ের দিকে যায়। এতে সচিবালয় এলাকার সামনের রাস্তায় ব্যপক যানজটের সৃষ্টি হয়। তারা আগে মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবিতে গত সোমবার মধ্য রাত থেকে কর্মবিরতিতে যান রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এতে পরবর্তী দীর্ঘ ২৮ ঘণ্টা সারা দেশে রেল চলাচল বন্ধ থাকে। জিম্মি হয়ে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে বলেন, যে কেউ প্রতিবাদ-আন্দোলন করতে পারে, কিন্তু মানুষের চলাচল ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটি মাথায় রাখা দরকার। আর যে কোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে হুট করে রাস্তায় নামার আগে সরকারের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রাখা উচিত।

এ বিষয়ে ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, কত রকম যে বঞ্চিত। যাকে আমি সারা জীবন জানতাম আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী, সেও এসে কেঁদে দেয় আমিও বঞ্চিত।নানা দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় নানা সীমাবদ্ধতার কারণে যৌক্তিক দাবিও অনেকে প্রকাশ করতে পারেননি। গণঅভ্যুত্থানের পর তারা মনে করলেন, দাবি প্রকাশের একটি সুযোগ এসেছে। তবে কারো কারো আন্দোলনের পেছনে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। আবার সরকারকে বিব্রত করতে কেউ কেউ আন্দোলন করছে বলেও অনেকে মনে করছেন। 

অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ১৩ দিন পর, গত ২১ আগস্ট চাকরি স্থায়ী করার দাবি নিয়ে রাজপথে নামে সাধারণ ও অঙ্গীভূত আনসারের সদস্যরা। সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আনসার সদস্যরা এসে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তারা সড়ক আটকে দেন। দিনভর আন্দোলনের এ পর্যায়ে রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান আনসার সদস্যরা। সচিবালয়ের সামনে দুপক্ষের সংঘর্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ অন্তত ৪০ শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় কয়েকজন আনসার সদস্য আহত হন। পরে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে রাত পৌনে ১০টার দিকে সচিবালয় এলাকা ত্যাগ করেন আনসার সদস্যরা। 

গত ২৬ আগস্ট সকালে হঠাৎ শাহবাগ এলাকার সড়ক অবরোধ করেন প্যাডেলচালিত শত শত রিকশাচালক। তাদের দাবি, ব্যাটারিচালিত রিকশা ঢাকার সড়কে চলতে পারবে না। সেদিন শাহবাগের পাশাপাশি ঢাকার আরো কিছু এলাকার সড়কে নেমেছিলেন প্যাডেলচালিত রিকশাচালকরা। এ ঘটনার আড়াই মাস পর গত ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টের এক নির্দেশনার বিরোধিতা করে ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে নামেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে শুরু করেন আন্দোলন। ওই আন্দোলনের মধ্যে ২১ নভেম্বর ঢাকার মহাখালীতে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। 

এদিকে গত ১৭ ডিসেম্বর রাত ৩টায় বিশ্ব ইজতেমা মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে মাওলানা যোবায়ের ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় তিনজন নিহত ও শতাধিক মুসল্লি আহত হন। তার আগে সেপ্টেম্বর মাসজুড়েই সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া, বেতন বৃদ্ধি ও বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করে পোশাক শ্রমিকরা। আন্দোলনের সময় পুলিশ ও পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে এবং তিনজন পোশাক শ্রমিকও নিহত হন।

গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে দিনে ১৪-১৫টি সংগঠনও রাজপথে নানা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। ১৯ আগস্ট ঢাকার বিভিন্ন সড়কের মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে অন্তত ১৭টি সংগঠন। এর মধ্যে যমুনার সামনে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছিলেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের নারীরা। সেদিন নানা আন্দোলনকারীর ভিড়ে বিডিআর থেকে চাকরিচ্যুত সদস্যদের একটি দল প্রেস ক্লাবের সামনে জায়গা না পেয়ে এর বিপরীত পাশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভবনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

এর মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান নেয় সরকারি কর্মকর্তাদের দুটি দল। একটি দলে রয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। অন্য দলে আছেন প্রশাসন বাদে অন্য ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ নামে ২৫ ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা উপসচিব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল, নিজ নিজ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব পদে দায়িত্ব দেওয়া এবং সব ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

এ ছাড়া সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা নিয়েও আন্দোলনে নামে চাকরিপ্রত্যাশীরা। এ দাবিতে ১৫ আগস্ট থেকে জোরদার আন্দোলন শুরু করে চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি অংশ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারীরা সংগঠিত হয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের সামনে অবস্থানের চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘আয়নাঘরে’ বন্দিদের মুক্তি দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর আবাসন নিশ্চিতের দাবি, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের কারণ নির্ণয়সহ নানা দাবিতে বিভিন্ন সংগঠনকে মাঠে নামতে দেখা গেছে। চাকরিতে বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে আরো অন্তত ৬টি ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছিলেন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের দাবিতে সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটও আন্দোলনে নেমেছিল। এইচএসসি পরীক্ষা না দেওয়ার আন্দোলন, আবার পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের ঘটনাও দেখা গেছে। অটোপাসের ফলাফল বের হওয়ার পর যারা পাস করতে পারেননি, তারা নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে আন্দোলন করেছেন। 

আন্দোলন নিয়ে সরকারকে সতর্ক করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন চলছে বিভিন্ন স্থানে। যদি তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, নতুন সংকট তৈরি করবে ভবিষ্যতে। একটি নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত সংকট বাড়বে।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ওমরাহ করতে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বাবর
শাবিতে ‘পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগ’র দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু
রংপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাহিত্যে গভীর দেশপ্রেম উজ্জীবিত
হতদরিদ্রের বরাদ্দের অর্থ ছাত্রদল নেতার পেটে

সর্বাধিক পঠিত

কুবি শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে লিখিত অভিযোগ
নামাজ থেকে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ ইউপি সদস্য, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ
চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু, ডাক্তারের নামের পাশে ভুয়া পদবি
আক্কেলপুরে নারী ফুটবল ম্যাচের আগে ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি আল ফারুক ও আল মাসুদ সাধারণ সম্পাদক

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝