শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫,
১৮ মাঘ ১৪৩১
বাংলা English

শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫
শিরোনাম: ইজতেমা ময়দানে লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়      ওমরাহ করতে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে দুবাই হাসপাতালে বাবর      তাওহিদী জনতার অন্তরালে কারা      আজও অনশনে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা      যুক্তরাষ্ট্রে হেলিকপ্টার-বিমান সংঘর্ষে সব আরোহীর মৃত্যু      আন্দোলনের নামে বাড়ছে মামাবাড়ির আবদার      যুক্তরাষ্ট্রে হেলিকপ্টার-বিমান সংঘর্ষ, নিহত বেড়ে ৪০      
গ্রামবাংলা
হতদরিদ্রের বরাদ্দের অর্থ ছাত্রদল নেতার পেটে
সুজন মাহমুদ, রৌমারী (কুড়িগ্রাম)
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:০৮ পিএম  (ভিজিটর : ৪৮)
ছবি: প্রতিনিধি

ছবি: প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন খাদের বরাদ্দের (সরকারি) টাকা সমন্বয়ক পরিচয়ে প্রকল্প করে সেই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ওই ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাফিউল আজম জুয়েলের বিরুদ্ধে।

ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য সূত্রে জানা গেছে, রাস্তা মেরামত বাবদ ৮টি প্রকল্প ধরে প্রায় ১৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা সমন্বয়ক পরিচয়ে বরাদ্দ নেয় ছাত্রদলের ওই নেতা। কিন্তু মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সরেজমিনে ঘুরে এবং স্থানীয়দের কথা বলে জানা গেছে ওই সব রাস্তায় নাম মাত্র কাজ করা হয়েছে। কোনো কোনো রাস্তায় ২-৩ গাড়ি মাটি ফেলা হলেও অনেক রাস্তায় ফেলা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে এসব সরকারি টাকা পুরো টাই আত্মসাৎ করেছেন ছাত্রদলের ওই সাংগঠনিক সম্পাদক।

স্থানীয় বাসিন্দা কলিম উদ্দিন, কবির হোসেন ও আজিজুল হক বলেন, এক গাড়ি মাটি এনে যে জায়গায়, যে জায়গায় ভাঙা গর্ত সেখানে একটু একটু করে মাটি দিয়ে চলে গেছে। আমরা চলাচল করতে পারি না। রোগী হাসপাতালে নিতে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। গাড়ি চলে না। বৃষ্টি হলে কাঁদার জন্য হাঁটা যায় না। কয়দিন আগে দুই-তিন গাড়ি মাটি ফেলছে। কিন্তু এটা মাটি ফেলা বলে না।

জুলাই-আগস্টের অন্যতম আন্দোলনকারী রঞ্জু চৌধুরী বলেন, রাজীবপুরে আমরা আন্দোলন করি এবং আমরাই নেতৃত্ব দেই। হুট করে শুনতেছি মোহনগঞ্জে নতুন একজন সমন্বয়ক বের হয়েছে। যে ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন খাদের ১৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা রাস্তা মেরামতের জন্য বরাদ্দ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। এটা শুনে আমরা মোহনগঞ্জ গিয়ে ইউপি সদস্য ও স্থানীয়দের সাথে নিয়ে বরাদ্দের টাকা কোথায় কোথায় খরচ করেছে। কোন রাস্তায় কতটুকু মাটি ভরাট করেছে এসব হিসেব জানতে চাই। প্রথম দিন নানা টালবাহানা করে আমাদের কে হিসেব দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং নাফিউল আজম জুয়েল জানায় পরবর্তীতে তারিখ ঠিক করে সবার সামনে হিসেব দিবে। এর পরিপেক্ষিতে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) আবারও ইউপি সদস্য ও স্থানীয়দের সাথে নিয়ে সবাই বৈঠকে বসে, সেদিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমানও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। হিসেব চাইলে সব মিলিয়ে ৬ লাখ টাকার হিসেব দেয় জুয়েল। পরে বাকী টাকার হিসেব চাইলে উপস্থিত সকলের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সেদিন ওই ঘটনায় বৈঠক পন্ড হয়।

এবিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, সমন্বয়করা দুই-তিন মাস আগে কাজ গুলা করে৷ এর আগে একদিন বসা হয়েছিল সেদিন অনেকেই ছিল, অনেকেই ছিল না। পরে আজকে হিসেব দেওয়ার মতো সবাই উপস্থিত ছিল। সবাই বসছিল আমিও ছিলাম৷ হিসেবের মাঝ খানে বাকবিতন্ডা হয়। পরে আর আমরা পুরা হিসেব টা পাই নাই।

মি. আজিজুর এর কাছে প্রশ্ন ছিল পুরো হিসেবটা নিতে পারেন নি নাকি জুয়েল দিতে পারেন নি কোন টা? জবাবে তিনি বলেন, না মানে হিসেবের মাঝ খানে গিয়ে গ্যানজ্যাম টা লাগে। পরে আর হিসেব টা নেওয়া হয় নাই।

অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এই প্রশ্ন টা করা লাগছিল ইউএনও কে। কাকে বরাদ্দ দিলো কি দিলো না সেটা তারাই ভালো বলতে পারে। চাপ প্রয়োগ করে নিলে এটা আসলে হয় না। এটা তো চেয়ারম্যান-মেম্বাররা করবে৷ তারা জনপ্রতিনিধি। এটা তো কোনো ব্যক্তি করতে পারে না।

মোহনগঞ্জ ইউপি সদস্য ও প্রকল্প সভাপতি গোলাম হোসেন জানান, আমাকে একটি প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছিল। আমার প্রকল্পটি ছিল নয়ার চর বাজার থেকে পূর্ব দিকে বাছেদ ডাক্তারের মোড় পাকা রাস্তার সংযোগ পর্যন্ত গর্ত ভরাট। মোট প্রকল্পের বরাদ্দ ছিলো ১৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

মি. গোলাম বলেন, আমার প্রকল্পের বাজেট ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১৩ হাজর ৭৪৮ টাকা। তবে এ প্রকল্পের কোনো কাজ-ই করা হয় নাই। তিনি আরও বলেন, মাষ্টার রোল থেকে শুরু করে জুয়েল-ই সব কিছু করেছে। এবং বিল তুলতে আমাদের যে সাক্ষর লাগে সেটিও আমাদের কে চাপ প্রয়োগ করে নিয়েছে।

অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে মি. গোলাম আরও বলেন, পরিষদে উন্নয়ন খাদে বরাদ্দকৃত অর্থটা ছিল। আমরা এস্টিমেট করে হতদরিদ্র পরিবারের জন্য সেলাই মেশিন, নলকূপ ও স্প্রে মেশিন বিতরণ করতে চেয়েছিলাম। এর আগে আমরাও ওই খাদের টাকা দিয়ে রাস্তা মেরামত কাজ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ইউএনও বলেছিলো ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন খাদের টাকা দিয়ে রাস্তা মেরামতের কাজ করা যাবে না। পরে ইউএনও কে বলে উন্নয়ন খাদের টাকা তারা রাস্তার কাজ করার জন্য নেয়।

মোহনগঞ্জ ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, আজকে রাজীবপুরের সমন্বয়করা হিসেব নিতে আসছিল। তাদের কাছে সঠিক হিসেব দিতে পারে নাই। অমকের কাছে ১০ হাজার, কুড়িগ্রাম গিয়েছি ১৫ হাজার এ-ই সেই আবোলতাবোল করে ৬ লাখ টাকার মতো হিসেব দিতে পারছে।

ওই ইউপি সদস্য আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন খাদের টাকা আমরা মেম্বাররা ভাগাভাগি করে সেলাই মেশিন, নলকূপ স্থাপন ও স্প্রে মেশিনের প্রকল্প দাখিল করছিলাম। ইউএনও বলল পাকা রাস্তার কাজ ছাড়া কাঁচা রাস্তার কাজ করা যাবে না। পরে তো এটা ছাড়া আর কাজ নাই পরে আমরা সেলাই মেশিন, নলকূপ আর স্প্রে মেশিনের প্রকল্প দাখিল করি। হঠাৎ করে সরকার যখন পতন হলো তখন জুয়েল সমন্বয়ক সেজে এসে আমাদের কে চাপ প্রয়োগ করলো। আর হুমকি দিলো, সরকার হটাইতে লাগছে ১৪ দিন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের হটাইতে লাগবে না ১৪ সেকেন্ড। জুয়েল পরিষদে এসে এই বক্তব্য দিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করলো।

মি. মাসুদ এর দাবি, নাফিউল আজম জুয়েল কে উন্নয়ন খাদের টাকা দিতে মেম্বারদের কে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আহমেদও। তিনি বলেন, আমরা যখন প্রকল্প নিবো রাস্তার কাজ-ই করবো। রাস্তার কাজ করলে একটু লাভ বেশি হয়, এজন্য আমরা রাস্তার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ইউএনও বলল কাঁচা রাস্তার কাজ করতে পারবেন না, এটা নিয়মে নাই৷ করলে পাকা করতে হবে। পরে আমরা বাঁধ্য হয়ে সেলাই মেশিন, নলকূপ আর স্প্রে মেশিনের প্রকল্প দাখিল করি। সেই কাজ ইউএনও সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া জুয়েল কে কিভাবে দিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, কি জানি, সেটা তো জানি না। ওই যে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ১৪ সেকেন্ডও লাগবে না সরাইতে এসব কথাবার্তা বইলা আমাদের থেকে প্রকল্প নিল৷ পরে আমরা বলেছি যে, রাস্তার কাজ করা যাবে না। পাকা কাজ করতে হবে। পরে ওরা ইউএনও এর কাছে গিয়েছিল ইউএনও বলছে যে করা যাবে৷ এর পর তো আর ৭ লাখ টাকার কোনো হিসেব নাই।

প্রকল্প কিভাবে নিলেন, কি পরিচয়ে নিলেন এবং কোন ক্ষমতাবলে নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাফিউল আজম জুয়েল বলেন, এখানে ক্ষমতার কিছু নাই। আমি ইউনিয়নের বাসিন্দা, আমি ছাত্র, আমি জুলাই আন্দোলনের একমাত্র নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি। ছাত্র আন্দোলন করার পর যখন দেখলাম আমার ইউনিয়নের অবস্থা এই রকম। তখন বন্যা পরবর্তী সময়ে রাস্তা ঘাটে চলার অবস্থা থাকে না। প্রতিদিন ভ্যান গাড়ি উল্টে যায়। পরে ইউএনও এর কাছে যাই যাওয়ার পরে বলি যে কোনো প্রকল্প বা কোনো ভাবে যদি মাটি ফেলানো যায়। তো তখন ইউএনও বলে যে এরকম তো প্রকল্প নাই। একটা বরাদ্দ আছে যেটা আমি দিতে পারি। এই বিষয়ে পরে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের সাথে কথা হয়। কথা হওয়ার পরে আর কি এটা হয় আর কি। এর পর ইউএনও দিয়ে দিল। মেম্বাররাও বলল হ্যা এটা করা যেতে পারে। এখানে ক্ষমতার কিছু নেই। আমি একজন ছাত্র, আমি একজন জনতা।

অভিযোগ রয়েছে আপনি ইউপি সদস্যদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে বরাদ্দ নিয়েছেন এবং বরাদ্দ না দিলে ইউপি সদস্যদের অপসারণের কথা বলেছেন এবিষয়ে আপনার মতামত কি? অভিযোগ টা আসলে কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নের জবাবে নাফিউল জানান, আমি অপসারণ করতে চাইলে কি আর চাইলে কি অপসারণ হবে নাকি! আমি কে? এখানে চাপের কি আছে। এখানে ইউএনও নিজে সরাসরি হ্যান্ডেল করছে। কিছু একটা করা দরকার। তিনি নিজে এসে সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে তেমন একটা কাজ করেন নাই এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এখানে কিছু বিষয় আছে, ইন্টারনাল কিছু বিষয় আছে কি। কাজ টা হইছে তিনভাগে। প্রথম মেম্বাররা করে গেছে এর পরে আমি ১ লাখ ৯৪ হাজার টাকার কাজ আমি করছি। বাদবাকি কাজ করছে আরেকজন। ওই পাশে চর নেওয়াজী রোডটা ওইটা কন্টাক্টে দেওয়া ছিল। বলছিলাম যে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বাজেট ওইটা তোমরা করে নিও। ওই খানে যাওয়া হয় নাই আমাদের। তো এখন ১ লাখ ২৬ হাজার টাকার মতো আমার কাছে আছে।

এই কাজ গুলো করার জন্য জনপ্রতিনিধিরা আছে সে কাজ গুলো করার জন্য আপনাদের কেন দায়িত্ব নিতে হলো? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা ১৪ বছরে কি করছে! ১৪ বছরে তারা একটা মাটিও ফালায় নাই। কাবিখার নামে ২ ইয়া মাটি ফেলে কাজ শেষ। এগুলা খাওয়ার ধান্দা ছাড়া কিছুই না। আমরা শুধু একটা ফেয়ার একটা কাজ চাচ্ছিলাম। এর মধ্যে আমাকে রাজনৈতিক ভাবে হেনেস্তা করার চেষ্টা হচ্ছে। এটা একটা প্রোপাগান্ডা।

এসব বিষয়ে মোহনগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ইউএনও জুয়েল কে বরাদ্দ দিতে বলে৷ আমরা দরিদ্র মানুষের জন্য সেলাই মেশিন, নলকূপ ও স্প্রে মেশিনের প্রকল্প দাখিল করছিলাম। ইউএনও সমন্বয়কদের বরাদ্দ দিতে বলায় সেগুলো বাতিল করে তাকে (জুয়েল) দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের কে বরাদ্দ দিতে প্রথমে রাজি ছিলাম না পরে ইউএনও বলার পর তাদের কে বরাদ্দ টা দিয়ে দিয়েছি।

চেয়ারম্যান-মেম্বারদের চাপ প্রয়োগ করে নাফিউল আজম জুয়েল কে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আহমেদ বলেন, আমি চাপ প্রয়োগ করবো কেন? এটা বললে তো হবে না। আমি তাদের বলতে যাবো কেন? এটা তো তাদের বিষয়। এরকম অভিযোগ করলে তো সমস্যা। আন্দাজে বললে তো হবে না। ওদের কে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন কোথায় সমস্যা। এরকম যদি অভিযোগ আসে আমরা ব্যবস্থা নিবো। সমন্বয়কদের কিভাবে দেওয়া হবে এটা তো ইউনিয়ন পরিষদের কাজ। এসব উল্টা পাল্টা অভিযোগ করলে তো সমস্যা। এমন করলে তো তাদের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিবো৷ রেকর্ড দিয়েন এসব উল্টা পাল্টা বললে তাদের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিবো। সে (জুয়েল) উল্টা পাল্টা করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এখানে ইউএনও কে জড়ানোর কোনো দরকার নাই, কোনো প্রয়োজন নাই৷ আইন আইনের মতো করে চলবে। একজন বলল আর তাই হয়ে গেলো নাকি!

এর আগে সরকার পতনের পর ১০, ১১ ও ১২ আগস্ট নাফিউল আজম জুয়েল মোহনগঞ্জের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমন্বয়ক পরিচয়ে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এবং এর পরেই বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে সরকারি নানা দপ্তর থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে আসছেন তিনি। যা নিশ্চিত করেছেন সেই সময় তার সঙ্গে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সংগঠক ও রাজীবপুর উপজেলা ছাত্র প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম রবিন বলেন, নাফিউল আজম জুয়েল নামের আমাদের কোনো সমন্বয়ক নেই। যিনি সমন্বয়ক পরিচয়ে প্রকল্প নিয়ে তার সাথে আমাদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখা। মুখপাত্র জান্নাতুল তহুরা তন্বীর সাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নাফিউল আজম জুয়েল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ নন। তার সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। কমিটির বাইরে কেউ যদি সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি ও কোনো অপরাধ করলে তার দায়ভার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বহন করবে না। সরকারি অর্থ আত্মসাতের সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রমাণ সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনি প্রদক্ষপ নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

নাফিউল আজম জুয়েল ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের ব্যানারে নিজেকে একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে দাবি করেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে "খোলা কাগজ" ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী ছাত্র ও সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিশ্ববিদ্যালয়টির জুলাই ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত দুই শিক্ষার্থী, সাকেব হাসান ও তালহা রায়েন জানান, "নাফিউল আজম জুয়েল নামে আমরা কাউকে চিনি না। আমাদের আন্দোলনে এ নামে কোনো সমন্বয়কও ছিলেন না।"

তারা আরও জানান, ওয়াসিফ তাজওয়ার ও ফয়সাল আশিক-ই জুলাই ছাত্র আন্দোলনে আমাদের ভার্সিটির নেতৃত্ব দিয়েছেন।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ওয়াসিফ তাজওয়ার ও ফয়সাল আশিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফয়সাল আশিক "খোলা কাগজ" কে বলেন, "নাফিউল আজম জুয়েল নামে কাউকে আমরা চিনি না। আমাদের আন্দোলনে এ নামে কোনো সমন্বয়কও ছিলেন না।"

ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের ব্যানারে নাম কেন ও একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করেছেন এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে নাফিউল আজম জুয়েল বলেন, ভাই পাশেই মাহফিল। ভাইব্রাদার দিয়েছে। আমার বাড়ীর পাশেই মাহফিল। এখানে নাম দিতে পারে না? আরে ভাই ওটা যে নাম দিছে আমি জানি-ই না। আন্দোলন তো আমরা ভার্সিটি কেন্দ্রিক-ই করছি। তো ওখানে লিখছে যে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনির্ভাসিটির (সমন্বয়ক)। ভার্সিটির ট্যাগ লাগাইছে ওইটা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ছাত্রদলের এক সদস্য জানান, জুয়েলকে খুব কাছ থেকেই আমি দেখেছি। হঠাৎ তার আর্থিক ও সামাজিক পরিবর্তনে হতবাক হয়েছি। কয়েকজন নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন সময় উপহার ও অর্থ দিয়ে সাহায্যের কথাও শুনেছি।

রাজনীতির সাথে কত বছর ধরে জড়িত আছেন? এবং জানতে পেরেছি বিভিন্ন সময় আপনি দলীয় নেতাদের কে উপহার দেন এটার বিষয়ে আপনার মতামত কি? জবাবে জুয়েল বলেন, আমার ব্যবসা ছিল ফোনের। আমার বিজনেস ফোনের। উপহার দেই বলতে যে রেটে কিনি সেই রেটেই দেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলছেন স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার পতনের পর এলাকায় আপনি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? জবাবে তিনি বলেন, আমি নিজেও এগুলোর পক্ষপাতী না। স্বৈরাচারী কে পতন করে যদি আমি নিজেই স্বৈরাচারের মতো আচরণ করি। বিষয় টা কেমন না। আমি অত্যান্ত মানবিক। নিজে না খেয়ে মানুষরে খাওয়ানোর চেষ্টা করি। আর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যারা তাদের নাম প্রকাশ করা প্রয়োজন। আর কারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেটা আমি জানি।

সবশেষ জানতে চাই, দলীয় এবং সমন্বয়ক এক সাথে দুইটা পরিচয় বহন করা যায় কিনা? জবাবে তিনি আরও বলেন, শোনেন আপনাদের না ডিপ নলেজটা অনেকটা কম। রাজীবপুরে যারা সমন্বয়ক পরিচয় দেয় তাদের ভূমিকা আর আমার ভূমিকার মধ্যে পার্থক্য কি? বলতে পারবেন? তারা যা করছে আমিও করছি। তারাও ছাত্র আমিও ছাত্র। তাদেরও কমিটি নাই আমারও কমিটি নাই। সবাই কি সমন্বয়ক? আমি সমন্বয়ক পদধারী কেউ না৷ কোথাও আপনি যদি দেখেন লাস্ট ইউনিয়নে একটা কমিটি হইছে। সেদিন আমাকে সরিয়ে দেওয়ার পর কোথায়ও আমি বলি নাই আমি সমন্বয়ক। আমি রাজনীতি করি ক্লাস ৯ম ১০ম শ্রেণী থেকে। ২০১৪ সালে মামলা তে ১৪ বার হাজিরা দিছি। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে। আমি কোনো সমন্বয়ক না আমি একজন ছাত্র। আর আমার পদ হচ্ছে আমি জাতীয়তাবাদের সৈনিক। আমি মোহনগঞ্জের মানুষের কাছে হিসেব দিতে রাজি আছি। এখানে অনেক পরিশ্রম করছি। নিজের পকেটের টাকাও তো খরচ হইছে।

ছাত্রদল নেতা নাফিউল আজম জুয়েল বিষয়ে রাজীবপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোখলেছুর রহমান ও সদস্য সচিব নাজমুল মাহমুদ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

অবৈধ বালু উত্তোলনে বাধা এলাকাবাসীর, ফাঁকা গুলি চালায় ইজারাদার
ইজতেমা ময়দানে লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়
কামরাঙ্গীরচরে রেস্তোরাঁ উদ্বোধনে বাধার মুখে অপু বিশ্বাস
বাঞ্ছারামপুরে নতুন ভোটার তালিকা নিবন্ধনে ইউপি সচিবদের বানিজ্য
ব্যাংকের ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের সহায়তার উদ্যোগ

সর্বাধিক পঠিত

কুবি শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে লিখিত অভিযোগ
আক্কেলপুরে নারী ফুটবল ম্যাচের আগে ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু, ডাক্তারের নামের পাশে ভুয়া পদবি
রংপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু
আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি আল ফারুক ও আল মাসুদ সাধারণ সম্পাদক

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝