উদীয়মান সংক্রামক রোগ (ইমার্জিং রোগ) মোকাবেলা করতে উন্নত জৈব নিরাপত্তা মডেল এবং নতুন সেরোটাইপ শনাক্তের মাধ্যমে ভ্যাকসিন উদ্ভাবন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন ঘানায় নিযুক্ত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সিনিয়র অ্যানিমেল প্রোডাকশন অ্যান্ড হেলথ অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামছুদ্দিন।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ভেটেরিনারি এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (বিএসভিইআর)-এর আয়োজনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ৩১তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ২ দিনব্যাপি সম্মেলনে বাকৃবি ছাড়াও দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ছয়টি প্রতিষ্ঠানসহ দেশি বিদেশি মোট ৫শ’র অধিক গবেষক ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমান বাংলাদেশে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্ষুরা, লাম্পি ও এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো বিভিন্ন উদীয়মান সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবাণুর জিন ও সেরোটাইপ পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে প্রাণীর মৃত্যুহার বৃদ্ধি, উৎপাদন এবং প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। ফলে যা জীবের খাদ্যচক্রে পরিবর্তন আনছে। গবাদিপশু থেকেই ৬০ শতাংশের বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়। এটি প্রতিরোধে গবাদিপশুর খাদ্য পরিবর্তন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিপাক শক্তি বৃদ্ধি ও প্রাণী নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
ড শামছুদ্দিন আরো বলেন, পরিবেশ দূষণ ও অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধির ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এ থেকে উত্তরণের জন্য পরিবেশবান্ধব কৃষি , নিরাপদ খাদ্য নীতি বাস্তবায়ন এবং কৃষকদের জন্য ভর্তুকি ও সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
এই সম্মেলনে ভেটেরিনারি পেশা ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য বাকৃবির নয়জন প্রাক্তন শিক্ষক এবং একজনকে বার্ষিক লেকচার সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। সম্মাননা প্রাপ্ত শিক্ষককগণ হলেন- প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোতাহার হোসেন মন্ডল, সার্জারী ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল হক, ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মঈনুদ্দীন, প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রিয় মোহন দাস ও অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল বাকী, এনাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম ও অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ এবং মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ ও অধ্যাপক ড. মোনজ মোহন সেন। এছাড়াও মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড মো মোস্তাফিজুর রহমানকে বার্ষিক লেকচার সম্মাননা দেওয়া হয়।
বিএসভিইআরের সভাপতি ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বাহানুর রহমান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, ফ্লেমিং ফান্ড কান্ট্রি গ্রান্ট টু বাংলাদেশের টিম লিডার অধ্যাপক ড. শাহ মনির হোসাইন এবং ইন্টার এগ্রো বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ কে এম খশরুজ্জামান।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএসভিইআরের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সুকুমার সাহা, ৩১তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন আয়োজক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ উদ্দীন ভূঞা এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোছা. মিনারা খাতুনসহ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী গবেষকগণ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, দেশের বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতিটি পেশার দায়িত্বও বেড়েছে। গুণগত মানের দিকে নজর রেখে সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিজ্ঞানের যে গবেষণালব্ধ জ্ঞান সরাসরি কৃষকের মাঠে প্রয়োগ করা যায়, সেগুলো যেন কেবল বইয়ের পাতায় বন্দী না থাকুক। যত দ্রুত মাঠ পর্যায়ে খামারিদের কাছে পৌঁছে যাবে, তবেই গবেষণার সাফল্য অর্জিত হবে। আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষার প্রচলিত কাঠামো ও কারিকুলাম সময়ের সাথে পরিবর্তন করা প্রয়োজন, যেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা যায়। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বিএসভিইআর নিঃসন্দেহে একটি মহতী উদ্যোগ, যথেষ্ট সময় ও অর্থ ব্যয় করে এত সুন্দর আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, সারা বিশ্বেই প্রতিনিয়ত নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এজন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। গতানুগতিক পড়াশোনা, গবেষণা করলে আর চলবে না। সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা ও গবেষণার দিকে মনোযোগী হতে হবে। শুধু প্রাণিজ উৎপাদনের দিকে নজর দিলেই হবে, উৎপাদনের পাশাপাশি প্রাণি স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে কোনো লাভ হবে না। এ বছরের সম্মেলনটি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী। একজন ভেটেরিনারি গ্রাজুয়েট সবসময় সরকারি চাকরির পেছনে না ছুটে অন্য চাকরির মাধ্যমে যেন নিজের জীবনকে আলোকিত করতে পারবে, সেজন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথমবারের মতো উদ্যোক্তা সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে।
কেকে/এএম