সরস্বতি পুজা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশে প্রায় তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী দইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মেলায় বাহারি ও স্বাদের দইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন দই বিক্রেতারা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বিশাল দই মেলা।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ মুজিব সড়ক ও তাড়াশ বাজারে নানাভাবে পসরা সাজিয়ে বিক্রি হচ্ছে এ দই।
মেলায় ক্ষীরসা দই, শাহী দই, টক দই, শ্রীপুরী দইসহ বাহারি নাম ও স্বাদের দই কিনতে ভিড় করেন ক্রেতারা। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা এই মেলা আগামী দিনে আরো প্রসারিত হবে এমনটাই প্রত্যাশা দই প্রেমীদের।
জানা যায়, প্রতি বছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে সরস্বতী পূজার দিন শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলার শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় রবিবার সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়কে বসে দইয়ের মেলা।
অপরদিকে চলনবিল অধ্যুষিত জেলার তাড়াশের তৎকালীন জমিদার পরম বৈঞ্চব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। এলাকায় জনশ্রতি আছে জমিদার রাজা রায় বাহাদুর নিজেও দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। তাই জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করতেন। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সম্মুখে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে দিনব্যাপী দই মেলার প্রচলন শুরু করেন।
সুস্বাদু দইয়ের পরিবেশক রনি মিষ্টান্ন ভান্ডারের রনজিত ঘোষ বলেন, আজ ১৫ মণ দই নিয়ে এসেছি। দইয়ের চাহিদা থাকায় দুপুরের মধ্যেই শেষ হবে তিনি আশাবাদি। তবে দুধের দাম, জ্বালানি, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে।
বেলকুচি উপজেলার রাজাপুরের সুশান্ত ও রনজিত ঘোষ বলেন, জেলায় রাজাপুর, এনায়েতপুরের দইয়ের একটা সুনাম রয়েছে। তাই আমাদের দইয়ের চাহিদা বেশি। মেলা এক দিনব্যাপী হওয়ায় কোনো ঘোষের দই অবিক্রিত থাকে না। বরং ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে আমরা হিসিম খাচ্ছি।
শহরের মুজিব সড়কস্থ দই কিনতে আসা সঞ্জয় সাহা বলেন, সরস্বতী পূজার দিন শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলার শুরু হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বসেছে দই মেলা। এ মেলা উপলক্ষে আত্মীয় স্বজনদের জন্য দই কিনে থাকি। এই দিনে পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে দই চিড়া মুড়ির আয়োজন করে থাকি।
মেলায় দই কিনতে আসা সুরজিত সাহা বলেন, প্রতি বছর সকালে এই মেলা থেকে দই কিনি। স্বরস্বতি পূজা উপলক্ষে বাড়িতে অনেক অতিথি এসেছে। তাদের আপ্যায়নের জন্য দই কিনছি।
দই কিনতে আসা দীপক কর বলেন, সরস্বতি পূজা উপলক্ষে বোন ও জামাইসহ অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছে। এখানকার দই খুব সুস্বাদু। প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ কেজি দই কিনে থাকি। তবে এবার একটু দাম বেশি হলেও চাহিদাও অনেক বেশি।
জুনায়েত আহমেদ সবুজ বলেন, শহরের মুজিব সড়কস্থ দই কিনতে এসেছি। প্রতিবছর আমরা এই দই কিনে থাকি। এখানকার দইগুলো অনেক স্বাদ হয়। এই কারণে এখানে দই কিনতে ভিড় করেন ক্রেতারা। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে এই দই মেলা।
সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু বলেন, প্রায় তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শীত মৌসুমের মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এ দই মেলা বসে থাকে। সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশে আনন্দের মধ্য দিয়ে এ দই মেলার উৎসব হচ্ছে।
কেকে/ এমএস