চার বছর আগে শুরু করা একটি স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। গুরুদাসপুর উপজেলা চত্বরে স্মৃতির মিনারটি নির্মাণের জন্য দুই দফায় নাটোর জেলা পরিষদ ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। সেই টাকায় কাজ শুরু করা গেলেও শেষ করা যায়নি।
শুরুর বছর অর্ধেক কাজ করার পর সটকে পড়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেসময় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে স্মৃতিসৌধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগও উঠেছিল। দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকায় রোদ-বৃষ্টিতে নির্মাণাধীন স্মৃতিসৌধটি নষ্টের উপক্রম হয়েছ।
নাটোর জেলা পরিষদের দেওয়া তথ্য বলছে, তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের অনুকূলে স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় নাটোর জেলা পরিষদ। ২০২১ সালের শেষের দিকে জেলা পরিষদের টেন্ডারে নির্মাণ কাজটি পায় নাটোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ‘পূর্বাঞ্চল ট্রেড।’ সেসময় ২০২১-২২ অর্থ বছরে প্রথম বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০ লাখ টাকা। সেই টাকায় স্মৃতিসৌধটির অর্ধেক নির্মাণ করা হয়।পরের ২০২২-২৩ অর্থ বছরে স্থানীয় সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর অনুকূলে আরো ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাটোর সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম শিমুলের আত্মীয় হওয়ার সুবাদে প্রভাবখাটিয়ে স্মৃতিসৌধ নির্মাণে অনিয়ম করেন ঠিকাদার। সেসময় প্রথম বরাদ্দের ২০ লাখ টাকায় দায়সারা কাজ করে সরে পড়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরের বছরের ৫ লাখ টাকার কাজ আর শুরু হয়নি।
তবে নাম প্রকাশ না করার সত্তে নাটোরের কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানায়, কাগজে কলমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ‘পূর্বাঞ্চল ট্রেডের’ নাম ব্যবহার করা হলেও কাজটি করেছে নাটোরের মেসার্স হাসিব মোটরস নামের অন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
পূর্বাঞ্চল ট্রেডের স্বত্বাধিকারী মো. তুহিন ও নাটোরের ঠিকাদার বিদ্যুৎ হোসেন বলেন, কাগজে কলমে স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পূর্বাঞ্চল ট্রেডের নামে হলেও কাজটি তারা করেননি। কাজটি করেছেন নাটোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসিব মোটরস।
মেসার্স হাসিব মোটরসের স্বত্বাধিকারী মো. হাসিব মোবাইল ফোন না ধরায় এ ব্যাপারে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গুরুদাসপুর উপজেলা প্রশাসন বলছে, পুরোনো স্মৃতিসৌধটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু হয় প্রায় চার বছর আগে। এই চার বছরে কৃত্তিম স্মৃতিসৌধ বানিয়ে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। স্মৃতিসৌধ না থাকায় সবশেষ গত বিজয় দিবসে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শহিদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।
গুরুদাসপুরের সাবেক কমান্ডার দুদু সরদার, ছাবের আলীসহ অন্তত দশজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও গুরুদাসপুরে একটি স্মৃতিসৌধ তারা পাননি। বছর বিশেক আগে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সামনে ছোট পরিসরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছিল। সেখানেই চলছিল শ্রদ্ধা নিবেদন। ওই স্মৃতিসৌধটি নাজুক হয়ে পড়ায় সেটি ভেঙে বড় বরাদ্দে নতুন একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। অথচ একটি স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। এখন শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হচ্ছে শহিদ মিনারে। বিষয়টি তাদের ব্যথিত করে। হৃদয়ে দাগ কাটে। স্মৃতিসৌধটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি তাদের।
নাটোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শামীম ভূইয়া বলেন, জেলা পরিষদের উদ্যোগ এবং অর্থায়নে ২০২১-২২ অর্থ বছরে গুরুদাসপুর উপজেলা চত্বরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছিল। কী কারণে কাজটি থেমে আছে তা তিনি জানেন না। তবে বর্তমানে নির্মাণাধীন স্মৃতিসৌধটির কাজ শুরু করার আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের।
নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন মোবাইল ফোন না ধরায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের ব্যাপারে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কেকে/এএস