একাডেমিক ডিসিপ্লিন হিসেবে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাংবাদিকতা বিভাগের যাত্রা খুব বেশি দিনের নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬২ সালে ডিপ্লোমা কোর্সের মাধ্যমে সাংবাদিকতা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একুশ শতকে এসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাংবাদিকতা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ‘জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ’ নামে ২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বিভাগটি কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে বিভাগটি আজ একযুগ পূর্ণ করছে। ১৩তম বর্ষে পা রাখছে। গ্র্যাজুয়েটরা সদর্পে বিচরণ করছে মিডিয়া হাউসগুলোতে। ইতোমধ্যে কিছু শিক্ষার্থী দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও নোঙ্গর ফেলেছে। উচ্চশিক্ষা অর্জন করছে। তবে শুরুর জার্নিটা ছিল একেবারেই ঢাল-তলোয়ারহীন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. জাহানগীর কবিরের নেতৃত্বে এবং বিভাগের বর্তমান প্রধান রফিকুজ্জামানকে নিয়ে বিভাগের যাত্রা। বর্তমানে বিভাগে নিয়মিত শিক্ষকের পাশাপাশি রয়েছেন একঝাঁক খণ্ডকালীন শিক্ষক। মিডিয়ার দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং খ্যাতনামা প্রফেশনালরা হাতে-কলমে পাঠদান করে থাকেন। প্রায় প্রতিটি মিডিয়া হাউজের অভিজ্ঞ সংবাদকর্মীরা এখানে ক্লাস নেন, কর্মশালা পরিচালনা করেন এবং সেমিনানে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকেন।
এ পর্যন্ত ২৪টি ব্যাচের গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। শতাধিক গ্র্যাজুয়েট দেশের প্রথমসারির সবকটি গণমাধ্যমে অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করছেন। এর মধ্যে উল্লেযোগ্য হচ্ছে এনটিভি, যমুনা টেলিভিশন, সময় টিভি, চ্যানেল আই, চ্যানেল ২৪, মাছরাঙা, নিউজ ২৪, ডিবিসি, নাগরিক টিভি, দেশ টিভি, এসএ টিভি, আমার দেশ, কালবেলা, দেশ রূপান্তর, মানবজমিন, কালের কণ্ঠ, খোলা কাগজ, বণিক বার্তা, সময়ের আলো, ঢাকা ট্রিবিউন, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, জনকণ্ঠ, জাগো নিউজ। এছাড়া প্রথম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী তুরস্কের একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন এবং আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্বের নামিদামি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত আছেন।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এমনিতেই অত্যন্ত কম খরচে পড়ানো হয়। তবে অন্যান্য বিভাগের তুলনায় সাংবাদিকতা কোর্সের টিউশিন আরো কম। বলা যায়, সর্বনিম্ন খরচে সর্বোচ্চ সেবা। লক্ষ্য হচ্ছে দক্ষ ও নৈতিকতায় সমৃদ্ধ সংবাদকর্মী তৈরি। এজন্য শিক্ষার্থীদের একাডেমিক বিদ্যার সঙ্গে প্রায়োগিক দক্ষতায় সমৃদ্ধ বিভাগে রয়েছে একটি কম্পিউটার ল্যাব, একটি স্টুডিও। এছাড়া শিগগিরই আরো একটি স্টুডিও যুক্ত হতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ ও চাকরি পাওয়া এবং দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে বিভাগের শিক্ষকরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে থাকেন।
মানারাতের সাংবাদিকতা বিভাগ কেবল পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে রয়েছে বিভাগের চমৎকার সম্পর্ক। দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক ও প্রকাশক ড. মাহমুদুর রহমান, দৈনিক নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, মানব জমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, খ্যাতনামা কবি ও সাহিত্যিক এবং যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, এসএ টিভির প্রধান অপারেটিং অফিসার (সিওও) ও ঘুড্ডি চলচ্চিত্রের পরিচালক প্রয়াত সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকি, রয়টার্সের বেস্ট ক্যামেরাম্যান খেতাবপ্রাপ্ত ফটো সাংবাদিক রফিকুর রহমান, সাংবাদিক, কবি, অনুবাদক, গবেষক এরশাদ মজুমদার, বিখ্যাত ফটোগ্রাফার রফিকুল ইসলাম, সারগাম সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন বিভিন্ন সময়ে বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দক্ষতা বিনিময় করেছেন। এছাড়া ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার বহু অভিজ্ঞ সাংবাদিক বিভাগের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছেন।
সাংবাদিকতা বিভাগই মানারাতের একমাত্র বিভাগ, যেটি বছরজুড়ে নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে সরগরম ও প্রাণবন্ত করে রাখে। সেমিনার, কর্মশালা, ভর্তা-ভাত, হাঁস পার্টি, খেলাধুলা, আউটডোর শুটিং, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, প্রতি সেমিস্টারে একটি করে এক দিনের শিক্ষাসফর, বছর শেষে লং ট্যুর ছাড়াও রয়েছে নানা কর্মকাণ্ড। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ বিভাগ নিয়মিত মিডিয়া অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে থাকে। ২৯ নভেম্বর ২০২৪ (শুক্রবার) আশুলিয়ায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ এমআইইউ মিডিয়া অলিম্পিয়াড।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্লোগান হচ্ছে ‘আ সেন্টার অব একাডেমিক অ্যান্ড মোরাল এক্সিলেন্স’। অর্থাৎ মানারাত তার শিক্ষার্থীদের শুধু একাডেমিক পাঠদানই করে না; নৈতিক জ্ঞানেও সমৃদ্ধ করে। এ লক্ষ্যকে হৃদয়ে ধারণ করে বিভাগের একদল দক্ষ ও বন্ধু ভাবাপন্ন শিক্ষক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। লক্ষ্য একটিই। মানারাতের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকেই বের হবে একেকজন দক্ষ ও সৎ কলমসৈনিক। এরাই হবে মিডিয়া ইন্ড্রাস্ট্রির আলোকবর্তিকা।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক,
ডিপার্টমেন্ট অব জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ,
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
কেকে/এএম