কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিএনপির দুইগ্রুপের সংঘর্ষে উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি সেলিম উদ্দিন ভূঁইয়া (৫০) নিহতের ঘটনায় বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়াকে প্রধান আসামি করে ৭৯জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) নিহত সেলিম ভূঁইয়ার বড় ভাই আব্দুর রহিম বাদি হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় এ হত্যা মামলা দায়ে করেন। হত্যাকান্ডের ঘটনায় শনিবার দিবাগত রাতে ৩ যুবদল নেতাকে আটক করে পুলিশ।
আটকৃতরা হলেন উপজেলার বটতলী ইউনিয়ন যুবদল নেতা কাশীপুর গ্রামের ফারুক হোসেন, নাঙ্গলকোট পৌরসভার গোত্রশাল গ্রামের আফসার ও একই গ্রামের মোহাম্মদ হেলাল। প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে সংঘর্ষের ঘটনায় আটকৃতদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ হওয়ায় রবিবার বিকালে তাদেরকে কুমিল্লার আদালতে প্রেরণ করে থানা পুলিশ।
রবিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে বিকাল ৩টায় স্থানীয় দায়েমছাতি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে সেলিম ভূঁইয়াকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে, শনিবার দুপুরে উপজেলার বাঙ্গড্ডা বাদশাহ মিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ মাঠে বাঙ্গড্ডা ইউনিয়ন যুবদলের আয়োজনে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার জনসভা চলা কালে ওই এলাকায় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে বাঙ্গড্ডা বাজার অতিক্রম করার সময় সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া গ্রুপের সাথে বাঙ্গড্ডা পশ্চিম বাজারে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষে গুরুতর আহত সেলিম ভূঁইয়াকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া কিছুই জানেন না দাবি করলেও অপর গ্রুপের নেতা সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া বলেন কাকৈরতলায় তার সমাবেশে যাওয়ার পথে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার উপস্থিতিতে তার নেতাকর্মীদের উপর এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হত্যা মামলায় অপর অভিযুক্তরা হলেন, নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপি সাবেক নির্বাহী সদস্য কামাল হোসেন মজুমদার, পৌর যুবদল যুগ্ম আহবায়ক মহিন প্রকাশ স্কেরাফ মহিন, উপজেলা যুবদল আহবায়ক মনিরুল ইসলাম, সদস্য সচিব কামরুজ্জামান টিটু, যুগ্ম আহবায়ক মোদাচ্ছের হোসেন লিটন, আবদুল মমিন, পৌরসভা যুবদল আহবায়ক নুরুল আফসার সজল, সদস্য সচিব কামাল হোসেন, পৌরসভা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদল যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ, উপজেলা ছাত্রদল নেতা আলী হোসেন টিপু, কিনারা গ্রামের আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, বাঙ্গড্ডা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন, শাহ নেওয়াজ, উপজেলা যুবদল সদস্য ফারুক হোসেন কুতুব, ফারুক মোল্লা, নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবদল সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ কমিশনার, বাঙ্গড্ডা গ্রামের সোহাগ, জহির, বাঙ্গড্ডা ইউনিয়ন বিএনপি সাবেক সদস্য সচিব আব্দুল মতিন, সাবেক আহবায়ক শাহ আলম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান, পৌরসভা ছাত্রদল নেতা আব্দুল্লাহ পারভেজ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ, হরিপুর গ্রামের পারভেজ, জামাল হোসেন, উপজেলা যুবদল সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকন, পৌরসভা যুবদল যুগ্ম আহবায়ক নুর মোহাম্মদ ডলি, বেতাগাঁও গ্রামের ইকবাল, পৌরসভা যুবদল সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী সেলিম, বেতাগাঁও গ্রামের আলমগীর, মাধবপুর গ্রামের আনোয়ার মাহমুদ মিলন, শালুকিয়া গ্রামের রাসেল মাহমুদ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সহজলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রহিম সুজন, উপজেলা যুবদল সদস্য মোবারক হোসেন ও অজ্ঞাত আরো ৪০ জন।
নাঙ্গলকোট থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক বলেন, বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় রবিবার দুপুরে ৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করে নিহতের ভাই আব্দুর রহিম। মামলার ৩ আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
কেকে/ এমএস