চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাসকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা ইক্তাজুল রহমানের বিরুদ্ধে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে জীবননগর হাসপাতাল চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এই ঘটনায় চরম আতংক বিরাজ করছে চিকিৎসক নার্সদের মধ্যে। চিকিৎসা সেবা দিতে এবং পরিবার নিয়ে চরম হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে মনে করেন তারা৷ ইক্তাজুল রহমান জীবননগর পৌর যুবদল আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
জানা গেছে, একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হিসাব-নিকাশকে কেন্দ্র করে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে বিষয়টি ইতোমধ্যেই এই যুবদলের পক্ষ থেকে মীমাংসা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসকের ওপরে হামলার ঘটনায় চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, 'প্রতিনিয়ত হাসপাতালের স্টাফদের ওপর হুমকি-ধমকি, অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়। আবারও চিকিৎসকের ওপরে হামলা হলো। কয়েকদিন আগে জরুরি বিভাগে ডা. রাশেদকে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল। তিনি ভয়ে সাহস করে কিছু বলতে পারেননি। এসব মিলিয়ে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। মানুষের সেবা দিতে এসে যদি নিজেরাই হামলার শিকার হই, তাহলে চাকরি করা কষ্টকর হয়ে যাবে।'
আহত চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস জানান, স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার শেষে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টাফ কোয়ার্টারে ফিরছিলেন তিনি। রাত ১১টা ৩৭ মিনিটে হাসপাতাল চত্বরে পৌঁছালে মোটরসাইকেল থেকে নেমে তাকে মারধর শুরু করেন জীবননগর পৌর যুবদলের ১ নম্বর সদস্য ইকতার রহমান। বিদেশি টর্চলাইট দিয়ে উপর্যুপরি তার মুখে আঘাত করেন ওই যুবদল নেতা। এতে তার মুখে রক্তজমাট বেধে ও ফুলে আহত হন তিনি।
ডা. জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস আরও জানান, বিষয়টি তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিএনপির নেতাদের জানিয়েছেন। তারা কী ধরণের ব্যবস্থা নেয়, সেটা দেখা তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত পৌর যুবদল নেতা ইক্তাজুল রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,ডাক্তার সাহেবের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে অনাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। ‘বিষয়টি স্থানীয়ভাবে বসে মীমাংসা করার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আমার কোনো শেয়ার নেই। ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। গতকাল প্রতিষ্ঠানের হিসাব-নিকাশ চলছিল। আমি জানতাম না। পরে জিজ্ঞাসা করলে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর বলেন, তুমি চলে আসতে পারতে। এ নিয়ে মূলত এই ঘটনাটি ঘটেছে।
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মকবুল হাসান বলেন, হামলার বিষয়ে মৌখিকভাবে জেনেছি। আমরা এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জীবননগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন হোসেন বিশ্বাস বলেন, আমি ঘটনাটি জেনেছি। এখন পর্যন্ত মামলা বা অভিযোগ পায়নি। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, হামলার বিষয়টি জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন। আমি ঘটনাটি চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) অবহিত করেছি। আর এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই চিকিৎসককে জীবননগর থানায় একটি অভিযোগ করতে বলা হয়েছে।
কেকে/এআর