শরীয়তপুরের জাজিরায় ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি কাঁচাবাজার দখলে নিয়ে দুই শতাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাক মাদবরের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জাজিরা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম।
তবে কাঁচাবাজার দখল করে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিকে নগর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক মাদবর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিকে নগর আনন্দ বাজারের একপাশে ১০/১২ বছর আগে নিজেদের ভিটিতে একটি আধাপাকা কাঁচাবাজার গড়ে তোলেন ওই এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মজিবর বানিয়া। বাজারটিতে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে।
সেখানে মাছসহ দুই শতাধিক কাঁচামালের দোকান বসে। বিভিন্ন শাকসবজি ও তরিতরকারি চাষাবাদের জন্য বিখ্যাত বিকে নগর এলাকা। ওই এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ওই হাটে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন। প্রতি হাটে প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে খাজনা তুলতেন দোকান মালিক মজিবর বানিয়া।
কিছুদিন আগে এক বিএনপি নেতার দায়ের করা মারামারি মামলায় জেলে যান মজিবর বানিয়া। এ সুযোগে বিকে নগর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক মাদবর দলবল নিয়ে কাঁচাবাজারটি দখল করে বলে অভিযোগ ওঠে।
গত একসপ্তাহ যাবৎ বাজারটি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে দুই শতাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা তুলছেন রাজ্জাক মাদবর ও তার লোকজন।
এ বিষয়ে মজিবর বানিয়ার ছেলে সামিউল ইসলাম জাজিরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
সামিউল ইসলাম বলেন, বাজার ও বাজারের পাশে আমার বাপ-চাচাদের ৬ একর ২৯ শতাংশ জমি রয়েছে। বাজারের একপাশে আমাদের ক্রয়কৃত ১৬ শতাংশ জমিতে আমার বাবা ১০/১২ বছর আগে আধাপাকা একটি কাঁচাবাজার নির্মাণ করেন। সেখানে সপ্তাহে দুদিন হাট বসে। প্রতি হাটে আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খাজনা তুলতাম। কিছুদিন আগে এক বিএনপি নেতার দায়ের করা মারামারির মিথ্যা মামলায় আমার বাবা জেলে যান।
এ সুযোগে আব্দুর রাজ্জাক মাদবর ও তার লোকজন অন্যায়ভাবে আমাদের কাঁচাবাজারসহ অনেক জমি দখল করে নেয়।
রাজ্জাক মাদবর সরকার পতনের আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। এখন তিনি বিএনপি নেতা বনে গেছেন। তারা এখন জোরপূর্বক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছেন। বাজারে খাজনা তুলতে গেলে আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। প্রশাসনের কাছে আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁচাবাজারটি কয়েক বছর আগে মজিবর বানিয়া নির্মাণ করেছেন। এতেদিন ব্যবসায়ীরা মজিবর বানিয়াকেই খাজনা দিতেন। এখন রাজ্জাক মাদবরের লোকজন খাজনা তুলছেন।
বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রিপন বেপারী, চুন্নু মিয়া, কাঁচামাল ব্যবসায়ী সোবাহান মাঝি, পান ব্যবসায়ী তারা মিয়াসহ অনেক ব্যবসায়ী বলেন, এই কাঁচাবাজারটি মজিবর বানিয়া নির্মাণ করেছে। এতদিন আমরা তাকেই খাজনা দিতাম। গত এক সপ্তাহ যাবত রাজ্জাক মাদবর, মজিবর মাদবরের লোকজন খাজনা তুলছে। এখন থেকে তারাই নাকি খাজনা তুলবে। এটা নাকি তাদের জায়গা। তাই আমরা বাধ্য হয়ে তাদের খাজনা দিচ্ছি।
রাজ্জাক মাদবর নিজেকে বিকে নগর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বলে দাবি করেছেন।
তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কাঁচাবাজারের এই জায়গা আমাদের। ৪০ বছর আগে থেকে এই জায়গা আমরা ভোগ দখলে ছিলাম। দেড়-দুই বছর আগে মজিবর বানিয়া গং জোর করে আমাদের ১৬ বিঘা জমি দখল করে। এতদিন আমরা এলাকায় থাকতে পারি নাই। ৫ আগস্টের পরে আমরা এলাকায় আসি এবং আমাদের কিছু জায়গা দখল করি। বাকি জায়গা এখনও আমরা দখল করতে পারি নাই। আমাদের দলিলপত্র সবই আছে।
জাজিরা উপজেলা বিএনপির সভাপতি বজলুর রশিদ শিকদার বলেন, ৫ আগস্টের পর বিকেনগর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক মাদবর ওই কমিটির একজন সদস্য। আমি শুনেছি বিকে নগর আনন্দ বাজারে রাজ্জাক মাদবরের সঙ্গে মজিবর বানিয়ার জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। অবৈধভাবে কাঁচাবাজার দখল করে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। রাজ্জাক মাদবরের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, বিকে নগর আনন্দ বাজারে কাঁচাবাজার দখলের একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেকে/এএস