বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন লালমনিরহাট এর প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু বলেছেন,আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। যিনি আসল নেতা তিনি মানুষের দুঃখ কষ্টে সব-সময় পাশে থাকেন। আজকে দুঃখের সময় যদি পাঁশে না দাঁড়ায় তাদের মঙ্গলের জন্য চিন্তা না করি তাহলে ঐ আওয়ামীলীগের মত একই অবস্থা হবে আমাদের।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের ব্যাবস্থপনায়,সরল খাঁ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা এবং তিস্তা মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবীতে ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ৪৮ ঘন্টাব্যাপী তিস্তা চরে অবস্থান কর্মসূচীর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন।
আসাদুল হাবীব দুলু বলেন, এক সময়ের তিস্তা ছিল আমাদের প্রাণ, তীরের মানুষজনের এক সময় গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু,মুখে ছিল ভাওইয়া গান। অর্থবৈভব আর প্রাকৃতিক প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ ছিল। তিস্তা বর্তমানে আমাদের দুঃখের কারন। কিন্তু বর্তমানে সেই তিস্তার কারনে এখনকার মানুষ বর্ষায় যেমন বন্যা-নদীভাঙনে নিঃস্ব হয় তেমনি শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে নদী এখন ধু ধু বালুচর। নদী যে এখন কোথায় চলে গেছে তার কোন ঠিকানা নাই।
আত্নীয় নাই,কবরস্থান নাই,গ্রাম নাই,মসজিদ মন্দির নাই,আমাদের আগের কোন চিহ্ন পর্যন্ত নাই। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা অনিবার্য মরুকরণের দিকে ধাবিত হবো একসময়। তাই তিস্তা নদী ও এর অববাহিকার মানুষকে রক্ষায় পানির ন্যায্য হিস্যা এবং মহাপরিকল্পনা দিয়েছি সরকারের কাছে দাবী করিতেছি এজন্য "জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই"এই তিস্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হউক। আমি চাই এই অঞ্চলের সন্তান হিসেবে এই তিস্তা নদী শাষন করতে চাই। একটি নদী শাষন হয়ে গেলে যারা নদী অববাহিকায় নেই তারা বলে আমাদের কি লাভ। তাদেরও অনেক লাভ আছে। আমি আপনাদের জন্য শৈশব কৈশব যৌবন সবসময় আপনাদের সামনে কাটিয়েছি দির্ঘদিন লড়াই সংগ্রাম করেছি মানুষের জন্য যে কারণে আমি সব সময় ভাবি আমার এলাকার মানুষের জন্য কি করা উচিত কি উচিত ছিল না।
এজন্য তিনি আগামি ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ৪৮ ঘন্টা তিস্তা নদীর ন্যায্য হিস্যা এবং মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবীতের চরে অবস্থান কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করতে আহবান জানান।
প্রস্তুতিমূলক সভায় সারপুকুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রবিউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অন্যদের বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও আদিতমারী কালীগঞ্জ আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী রোকন উদ্দিন বাবুল, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, আদিতমারী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আমিনুল ইসলাম, সদস্য সচিব ও দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালেকুজ্জামান প্রমাণিক উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হবি, যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিরুল ইসলাম মানিক ও উপজেলা যুবদলের আহবায়ক ইদ্রিস আলী প্রমুখ।
প্রধান অতিথি দুলু বলেন, এই নদী সঠিকভাবে শাষন হয়ে গেলে এই জেলা কেন গোটা রংপুর বিভাগের চেহারা পরিবর্তন হবে। গড়ে ওঠবে শিল্প কলকারখানা আত্নকর্মসংস্থানের পদ সৃষ্টি হবে। আর সেখানে কাজ করবে হাজার,হাজার বেকার যুবক। তাদের দুঃখ দুর্দশা মুছে যাবে। যাতে করে আর কোন মানুষের বসতভিটা, বাড়িঘরের ক্ষতি না হয় মানুষ যাতে কার হারানো জমি ফিরে পায় এবং তিস্তা একটি সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন করতে পারে। সরকার এমন কিছু দেয়না যা আন্দোলনের মাধ্যমে দাবী আদায় করে নিতে হয়। এখন থেকে আপনারা আমার সঙ্গে আন্দোলনের আওয়াজ তুলবেন দেখবেন বাংলাদেশের যে প্রান্তে যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা সে দাবী মানতে বাধ্য হবে। সে কারনে আমি সবাইকে সংগঠিত হতে বলি। এটা কোন ব্যাক্তির বা গোষ্ঠীর, ধর্মের এবং গ্রামের দাবী নয়,এটা গোটা রংপুর অঞ্চলের জনগনের দাবী। জাগে বাহে অর্থাৎ সবাইকে জেগে উঠতে আহবান করছি। এখানে সবাইকে জাগাইতে বলতেছি জেগে উঠছি আমরা রংপুরের মানুষ আমাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে । সে কারণে আমি এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমি আশা করি জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন অনেক লাঞ্ছনায় ভুগছেন দুটো দিন কোন কষ্ট নয়। যদি আমরা ৪৮ ঘন্টা লাগাতার তিস্তা অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করি এটি শুধু বাংলাদেশের নয় সারা বিশ্বের গণমাধ্যম প্রচার করবে যে তিস্তা পাড়ের হাজার হাজার লোকজন দাঁড়িয়েছে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তখনই যেকোনো সরকার তাৎক্ষণিক দাবি মানতে বাধ্য হবে এবং যতদিন এই দাবি আদায় না হবে ততদিন আন্দোলনের সাথে থাকবো এবং নেতৃত্বে দিয়ে যাব। এই জনপদের মানুষের কোন কর্ম নাই তারা কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালায়। যদি মানুষের বিপদ-আপদে কষ্ট যন্ত্রণায় আমরা যদি পাশে না দাঁড়াই আমরা কোনদিন নেতা হতে পারি না। সেই হলো নেতৃত্ব যে মানুষের পাশে দাঁড়ায় আমি আশা করি আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন আন্দোলনে আমাদের চলমান থাকবে হতাশ হওয়ার কোন কিছু নাই। যেমন আমরা শেখ হাসিনা শেখ হাসিনাকে নামিয়েছি ইনশাল্লাহ আমরা তিস্তা মজা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব। একসময় দিন থাকে আবার রাত থাকে আমরা রাতের অন্ধকারে কাটিয়েছি পেরিয়ে দিনের আলোয় আমরা সবাই আলোকিত হয়েছি। কি কি অন্ধকার নিমজ্জিত ছিল আমরা ১৭ টি বছর রাজপথে অন্যায় জেল জুলুম দুর্নীতি ঘুষের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে হাজার,হাজার মানুষের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে যে স্বৈরশাসক হাসিনার পতন হয়েছে। যার কারনে বাংলাদেশ তখন আলোকিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এখন আমরা মুক্তভাবে কথা বলতে পারি, স্বাধীনভাবে বিচলন করতে পারি, মানুষের সঙ্গে মিশতে পারি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি। একটি স্বৈরশাসক দীর্ঘদিন শাসন করে যে ক্ষতি করল মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল দিনের ভোট রাতে হয়েছে আবার ডাবিং নির্বাচন করে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। মানুষের ভোট দেয়ার কোন পরিবেশ ছিল না এটির জন্য আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছিলাম। বাংলাদেশে লক্ষ কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। যা আপনারা প্রতিদিন টেলিভিশন প্রচারের মাধ্যমে দেখছেন। বাংলাদেশে কোন আইন বলে আইন আইনের শাসন ছিল না বিচার ব্যবস্থা ছিল না। একটা দেশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এই শেখ হাসিনার জন্য গোটা বাংলাদেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিক আমরা একইভাবে মনে করি বর্তমানে ঠিক তিস্তা সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিগত দিনে এই জেলায় তিনজন মন্ত্রী ছিল তারা কোন উন্নয়ন করে নাই তারা শুধু দুর্নীতি মহা উৎসবে মেতে উঠেছিল। তিস্তা পরিকল্পনা জন্য কোন কাজ করেনি করেছে তারা ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি। তাই এই তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে শরিক হতে তিনি আহবান করেন।
শেষের প্রধান অতিথি খুনিয়া গাছ মাঠে আরেকটি জনসভায় যোগ দেন।
কেকে/এআর