“আরে লুসি, তোকে তো চিনতেই পারছি না! চেহারাটাও অনেক বদলে গেছে। সাথে তোর সন্তানরাও দেখছি বড় হয়ে গেছে!”
দীর্ঘ ২৪ বছর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) পনর্মিলনীতে ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা একে অপরকে হঠাৎ দেখে এমনই আবেগজড়িত কণ্ঠে ডেকে হাস্যরসে মেতে উঠেন। দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে তারা দেশের স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ। কেউ খেলনা বাঁশি বাজাচ্ছেন, কেউ বা আনন্দে নেচে যাচ্ছেন। দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে শীত কমে যাওয়ায় অতিথি হলুদ পাখির আসর জমেছে সবুজ ক্যাম্পাসে।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইসমত আরা বেগম (লুসি) জানান, দীর্ঘ ২৪ বছর পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে অনেক ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে যেন নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছি। অনেক বন্ধুকে চিনতে পর্যন্ত সমস্যা হচ্ছে! খুব ইচ্ছা করছে বন্ধুদের সঙ্গে আবার নদীর জলে জলকেলিতে মেতে উঠি। আমবাগান, লিচুবাগান আর নারকেলবাগান চষে বেড়াই। পড়ন্ত বিকালের কফির আড্ডায় মেতে উঠি—একদম সেই পুরোনো দিনের মতো! নিঃসন্দেহে এটি অত্যন্ত সুন্দর একটি আয়োজন। বন্ধুরা মিলে আনন্দ করছি, আর আমাদের বাচ্চারাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, পুরস্কার জিতছে। তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণাও পাচ্ছে।
শিশুদের খেলাধুলা, লটারি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় পুনর্মিলনীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পায়রা অবমুক্তকরণ ও বেলুন উড়ানোর মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিকতা উদ্বোধন করেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া। এর আগে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে সদ্যসদের রেজিস্ট্রেশন, কুপন বিক্রি এবং দূর থেকে আগত সদস্যদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়।
উদ্বোধনের পর বাদ্যযন্ত্রসহ একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন চত্বর থেকে শুরু হয়ে কৃষি করিডোর হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে এসে শেষ হয়। এরপর সেখানে ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্মৃতি ও বিস্মৃতির সোপান অনুষ্ঠিত হয়।
বাকৃবির প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তাহসিন ফারজানা বলেন, ১৯৯৬ সালের অক্টোবর মাসে আমরা প্রথম ক্লাস করতে এসেছিলাম। এত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে যে সবার চামড়ায় ভাঁজ পড়ে গেছে! কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব অটুট রয়ে গেছে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা একসাথে থাকতে চাই। আমরা চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদরা কৃষিকে বিশ্ব রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলুক। কৃষি জ্ঞান ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে—এই আমার প্রত্যাশা।
প্রকৌশলী এজাউল ইসলাম জানান, আজকের এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। দীর্ঘ সময় পর আমরা ক্যাম্পাসে এসেছি, অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। এই পুনর্মিলনীর মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে সর্ম্পক দৃঢ় হওয়ার পাশাপাশি যোগাযোগ বাড়বে।
কেকে/এএম