গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পূর্বাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি কঞ্চিবাড়ীতে একটি নতুন উপজেলা প্রতিষ্ঠা। এ দাবিকে সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে কঞ্চিবাড়ী উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন কঞ্চিবাড়ী উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনোয়ার আলম সরকার।
তিনি বলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পূর্বাঞ্চলের সাতটি ইউনিয়নের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নানা অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার। উপজেলা সদর থেকে এসব ইউনিয়নের দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় নাগরিকদের সরকারি সেবা পেতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। ফলে কঞ্চিবাড়ীতে একটি নতুন উপজেলা গঠনের দাবি এখন সময়ের প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান উপজেলা সদর এক প্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় পূর্বাঞ্চলের মানুষকে উপজেলা কার্যালয়ের বিভিন্ন সেবা নিতে প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এতে সময় ও অর্থের অপচয় হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। নতুন উপজেলা বাস্তবায়িত হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমবে এবং উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, কঞ্চিবাড়ী সাতটি ইউনিয়নের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, যেখানে শিক্ষা, যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত একটি অবকাঠামো বিদ্যমান। এখানে ধুবনী কঞ্চিবাড়ী ডিগ্রি কলেজসহ তিনটি ডিগ্রি কলেজ, তিনটি মহিলা কলেজ, দুইটি উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান ও পাঁচটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া পাঁচপীর ও শোভাগঞ্জসহ কয়েকটি বড় বাজার থাকায় এটি অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।
যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকেও কঞ্চিবাড়ী অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। গাইবান্ধা জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো, তিস্তা সেতুর কারণে পূর্বাঞ্চলের ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে সংযোগ মজবুত হয়েছে। ফলে নতুন উপজেলা প্রতিষ্ঠিত হলে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হবে এবং উন্নয়ন কার্যক্রম গতিশীল হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামানিক মাহমুদ, কঞ্চিবাড়ী উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মুকুল, কমিটির সহ-সভাপতি ও কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনজু মিয়া, সহ-সভাপতি ও শান্তিরাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম মিজানুর খোকন, সহ-সাধারন সম্পাদক ও চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী মোস্তফা মাসুম, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি বদরুল আমিন, তিস্তা ব্রীজ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সভাপতি আ ব ম শরীয়ত উল্লাহ, শিক্ষা পর্যবেক্ষক সোসাইটির চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম, ধুবনী কঞ্চিবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুব আলম, কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির সাজ্জাদুর রহমান সাজু, প্যানেল চেয়ারম্যান তাজরুল ইসলাম প্রমুখ।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত উপজেলার অন্তর্ভুক্ত হরিপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়ন নদীভাঙনপ্রবণ এবং কুড়িগ্রাম ও জামালপুর জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা। উপজেলা সদর থেকে এত দূরবর্তী এলাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো কঠিন, ফলে অনেক সময় অপরাধ দমন করা সম্ভব হয় না। কঞ্চিবাড়ীতে উপজেলা বাস্তবায়িত হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হবে এবং সাধারণ মানুষ দ্রুত আইনি সহায়তা পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা শিগগিরই কঞ্চিবাড়ী উপজেলায় বাস্তবায়নের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং সুন্দরগঞ্জের পূর্বাঞ্চলের মানুষকে উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
কেকে/এএম