শরিয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা কাজিকান্দি গ্রাম। এই অজপাড়াগাঁয়ে দুই সপ্তাহ ধরে চলছে লন্ডন প্রবাসী মো. ইমামুল হক সরদার (এনামুল) ও নাছিমা মোল্লা দম্পতির বড় মেয়ে ডা. সরদার এনি আক্তারের বিয়ের উৎসব। বিয়ের সকল প্রস্তুতি শেষে এবার বর আসার পালা। বরের জন্য গ্রামবাসীর অধীর অপেক্ষায়। অবশেষে বর আসলেন হেলিকপ্টার চড়ে। তখন উল্লাসে ফেটে পড়েন উৎসুক গ্রামবাসী।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ছিল শরিয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কাজিকান্দি গ্রামের মো. ইমামুল হক সরদার (এনামুল) ও নাছিমা মোল্লা দম্পতির বড় মেয়ে ডা. সরদার এনি আক্তারের সাথে চট্টগ্রামের চকবাজার থানার কাপাসগোলা এলাকার আকবর শাহ লেনের আক্তার ফারুক ভূঁইয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ আল নাঈম ভূঁইয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান।
কনে ড. এনির পরিবার লন্ডন প্রবাসী আর বর চার্টার অ্যাকাউন্টেন্ট আব্দুল্লাহ আল নাঈম ভূইয়া অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।
মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে গত ২১ জানুয়ারি লন্ডন থেকে স্বপরিবারে ঢাকা আসেন মো. ইমামুল হক সরদার (এনামুল)। এরপর ওইদিন তিনি স্বপরিবারে হেলিকপ্টার যোগে গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুর সদর উপজেলার কাজী কান্দী গ্রামে আসেন। এরপর থেকে শুরু হয় মেয়ের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে গত দুই সপ্তাহ যাবৎ নাচ-গানসহ নানা আয়োজনে এলাকা মাতিয়ে রাখেন লন্ডন প্রবাসী এনামুল সরদার।
৬ ফেব্রুয়ারি ছিল কনে ডা. এনির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। এদিন কনের পরিবারের সকল সদস্য ও এলাকাবাসী শতাধিক গাড়ি ও মোটরসাইকেল বহর নিয়ে বাজনা বাজিয়ে বিনোদপুর ইউনিয়নের প্রতিটি সড়কে শোডাউন করা হয়। এ সময় এলাকাবাসী নেচেগেয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে।
লন্ডন প্রবাসী এনামুল তার পুরো পরিবারাকে গ্রামের মানুষের সাথে পরিচিতি করার জন্য এ ব্যতিক্রম আয়োজন করেছেন। এ যেন এক অন্যরকম গায়ে হলুদের দৃশ্য। এমন রাজসিক গায়ে হলুদের ঘটনা ঘটনা শরিয়তপুর জেলায় এই প্রথম। গায়ে হলুদের এমন দৃশ্য দেখতে দীর্ঘ পথজুড়ে ছিল হাজারো উৎসুক নারী-পুরুষ ও শিশুর ভিড়।
মেয়ের বিয়েতে দেড় কোটি টাকা খরচ করেছেন লন্ডন প্রবাসী এনামুল। বিয়ের দিন ৭০টি গরু দিয়ে এলাকাবাসীকে আপ্যায়ন করান তিনি। অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে লন্ডন প্রবাসী ইমামুল হক সরদার (এনামুল) বলেন, আমার পুরো পরিবার দীর্ঘদিন যাবৎ লন্ডন প্রবাসী। আমার দুই ছেলে দুই মেয়ে। ছেলে মেয়েরা লন্ডনেই বড় হয়েছে। আমাদের গ্রামে তেমন একটা আসা হয় না। আমার ইচ্ছা ছিল মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে গ্রামবাসীর সাথে আমরা পুরো পরিবার পরিচিত হব।
এছাড়া আমার সখ ছিল মেয়েকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন হেলিকপ্টার দিয়ে এসে নিয়ে যাবে। তাই মেয়ের বিয়ে একটু ব্যতিক্রমভাবে আয়োজন করেছি। বর হেলিপ্টার চড়ে এসে আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে। আমার মনের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। এতে আমি ও আমার পরিবার খুশি।
বরের বড় বোন আমেরিকা প্রবাসী ফারজানা ভূঁইয়া বলেন, আমার একমাত্র ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল নাঈম ভূইয়ার বিয়ে উপলক্ষে আমি আমেরিকা থেকে দেশে এসেছি। আমার বাবা বেঁচে নেই তাই ছোট ভাইয়ের বিয়ের আয়োজন আমিই করেছি। আমাদের ইচ্ছা ছিল ছোট ভাইয়ের জন্য হেলিকপ্টারে করে বউ আনব। এ কারণে আমরা বউ নিতে হেলিকপ্টার নিয়ে এসেছি। চট্টগ্রাম থেকে এই প্রথম শরিয়তপুরে এসে আমাদের ভাল লাগছে। শরিয়তপুরবাসীর আতিথেয়তায় আমরা মুগ্ধ। সব মিলিয়ে আমরা আনন্দিত।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হুমায়ুন মোল্লা বলেন, এনামুল সরদার পরিবার নিয়ে লন্ডনে বসবাস করেন। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে পরিবার নিয়ে গত দুই সপ্তাহ আগে গ্রামে এসেছেন। তিনি এলাকাবাসীর সাথে পরিচিত হতে মেয়ের বিয়েতে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করেছেন। নাচগানসহ নানা আয়োজনে দুই সপ্তাহ যাবত পুরো গ্রাম মাতিয়ে রেখেছেন। গায়ে হলুদের দিন গাড়ি বহর নিয়ে বাজনা বাজিয়ে পুরো ইউনিয়ন ঘুরেছেন। মেয়ের বিয়েতে পাঁচ হাজারের বেশি গ্রামবাসীকে আপ্যায়ন করেছেন। বর হেলিকপ্টারে এসে কনে নিয়ে গেছেন। বিয়েতে এরকম আয়োজন আমাদের বিনোদনপুর ইউনিয়নে এই প্রথম।
কেকে/এএম