বাংলাদেশের সংস্কার ছিল জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী প্রধান লক্ষ্য-একটি বিচারহীনতা, দুর্নীতি ও বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন। তরুণদের আন্দোলনের হাত ধরে অর্জিত এই নতুন অধ্যায়, ‘বাংলাদেশ ২.০’-এর সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ এবং সুস্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা।
জলবায়ুর পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ, মানসিক অবসাদ, খাদ্যে ভেজালসহ নানা চ্যালেঞ্জ আমাদের সুস্থতার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে, স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্বকে তুলে ধরতে এবং একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অঙ্গীকারে ঢাকার হাতিরঝিলে ৬০০ জন দৌড়বিদ একসঙ্গে ছুটেছেন-বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে।
দেশের প্রথম নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি), প্রতিবছরের মত এবারও ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রেখে বাংলাদেশ সংস্কারের লক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ঢাকার হাতিরঝিলে আয়োজন করে বিওয়াইএলসি রানিং উইথ পারপাস ২০২৫।
কিংডম অব নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, বাংলাদেশ-এর সহযোগীতায়, ‘বিওয়াইএলসি রানিং উইথ পারপাস ২০২৫: ট্রান্সফর্ম ইওর হেলথ, ট্রান্সফর্ম বাংলাদেশ’ ৭.৫ কিলোমিটার দৌঁড়ের এই আয়োজনে, সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে আগত ৬০০ জন দৌড়বিদ অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিল বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি পেশার মানুষ। যারা একত্রিত হয়ে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া ও দেশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো পালনের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম্ব্যাসি অব দ্য কিংডম অব দ্য নেডারল্যান্ডস ইন বাংলাদেশ এর ডেপুটি হেড অব মিশন খেইস ঔডস্ট্রা বলেন, ‘আমি জেন-জি না হলেও এমন একটি দেশে বর্তমানে আছি যেখানের জেন-জি’রা গত আগস্টে তাদের দাবিগুলো আদায় করতে পেরেছে। আমি যতবারই বাংলাদেশে আসি ততবারই একটি চমৎকার দেশের বিকাশ দেখতে পাই। সকালের রোদে হাতিরঝিল লেকের চারপাশে দৌঁড়ালে আপনি অনুভব করতে পারবেন প্রাণচঞ্চল উদ্দীপনা, এক সুস্থ ও আশাবাদী জনগোষ্ঠীর স্পন্দন। এটি সত্যিই চমৎকার। আমি আশা করি এই মঞ্চ তরুণ ও জেন-জি প্রজন্মের উদ্যমে ভরে উঠবে, যারা একটি সুস্থ ও উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ করবে।’
বিওয়াইএলসি রান ২০২৫ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারপারসন ইজাজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের অগ্রগতির প্রতিশ্রুতি আমাদের পরিবর্তনশীল চেতনার প্রতিফলন। তবে প্রকৃত উন্নয়ন শুরু হয় ব্যক্তিগত সুস্থতা থেকে। সুদৃঢ় স্বাস্থ্য ছাড়া, সামষ্টিক স্বপ্ন এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা আমাদের নাগালের বাইরেই থেকে যায়। এই বোধ থেকেই আমাদের এবারের প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়েছে: ‘ট্রান্সফর্ম ইওর হেলথ, ট্রান্সফর্ম বাংলাদেশ’। কারণ কেবল যখন আমরা আমাদের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিই, তখনই আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণ এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনা উন্মুক্ত করি।
অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকসুদ জাহেদী বলেন, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গঠনে যুবসমাজই মূল চালিকা শক্তি। আমরা এমন একটি পরিবেশ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেখানে তারা বিকশিত হতে পারে, নেতৃত্ব দিতে পারে এবং নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই গড়ে নিতে পারে। উদ্যোক্তা নীতির মাধ্যমে আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্টার্টআপগুলোর সহায়তা এবং দক্ষতা ও অর্থবহ সুযোগের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়তে কাজ করছি।’
দেশব্যাপী চলমান তারুণ্যের উৎসবের প্রতিপাদ্য ‘দেশ বদলাও, পৃথিবী বদলাও’ সংযুক্ত করে তিনি বলেন ‘যুবসমাজের ক্ষমতায়ন যে কেবল দেশকে নয়, বিশ্বকে বদলে দেওয়ার শক্তি রাখে।’
বিওয়াইএলসি-এর নির্বাহী পরিচালক তাহসিনাহ আহামেদ সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল দৌড়বিদ, বিশেষ অতিথি এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে আয়োজনটি শেষ করেন।
এ দৌড়ের আয়োজনটি বাংলাদেশ সরকারের তারুণ্যের উৎসব ২০২৫ এর একটি অংশ এবং আয়োজনে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয় পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। এই আয়োজনে ফুড ও মেডিকেল পার্টনার হিসেবে ছিল জনপ্রিয় ফুড চেইন ইন্ডালজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ও শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রাভা হেলখ। এছাড়াও নিরাপত্তা সহযোগী হিসেবে এলিট ফোর্স, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, হাতিরঝিল থানা। এই আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগীতা করেছে।
প্রসঙ্গত, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে, বিওয়াইএলসি দেশের বাংলা, ইংরেজি ও মাদ্রাসা মাধ্যমের তরুণদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে তাদের নেতৃত্ব বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণদের সরকারি, বেসরকারি ও নাগরিক খাতে দক্ষভাবে কাজ করার উপযোগী করে তোলাই তাদের লক্ষ্য। বিগত পনেরো বছরে, বিওয়াইএলসি প্রায় ৭৫০০-এর বেশি তরুণকে নেতৃত্ব বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং ৩৭০০-এরও বেশি তরুণকে পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।
কেকে/এজে