সাতক্ষীরায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ জেলায় আপেল, বিলাতি, বলসুন্দরী, বাউকুল ও নারকেলকুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির কুল উৎপাদন হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত কুল রাজধানী ও চট্টগ্রামসহ সারা দেশে চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে আপেল কুলের চাহিদাটা ব্যাপক।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে ১৬০ থেকে ১৬৫ কোটি টাকার কুলের বাজার রয়েছে সাতক্ষীরায়। প্রতিবছর বাড়ছে কুল চাষের আবাদ।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষে সাতক্ষীরার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। প্রতিবছরই আবাদ বাড়ছে।
চলতি মৌসুমে জেলায় ৮৪১ হেক্টর জমিতে কুল চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে কলারোয়া উপজেলায় ৪৭০ হেক্টর, তালায় ১৬৫ হেক্টর, সদরে ১১২ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৪৫ হেক্টর, শ্যামনগরে ২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ২০ হেক্টর এবং দেবহাটায় ৪ হেক্টর। যা গেল মৌসুমে তুলনায় ৬০ হেক্টর পরিমাণ বেড়েছে। গেল বছর জেলায় ৭৮০ হেক্টর জমিতে ফসলটি চাষ হয়েছিল। তিনি বলেন, সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া কুল চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
বিশেষ করে বেলে দো-আশ মাটি এ ফসলটি বেশ ভালো হয়। তিনি বলেন, বাগানের পাশাপাশি মাছের ঘেরের বেড়িবাঁধেও বিভিন্ন প্রকার কুল চাষ হচ্ছে এ জেলায়।
জেলার কলরোয়া উপজেলার কোমরপুর গ্রামের কুল চাষি জহুরুল ইসলাম লাল্টু জানান, চলতি মৌসুমে ১১ বিঘা পরিমাণ জমির বাগানে কুল চাষ করেছেন।
আপেল, বলসুন্দরী ও বাউকুল প্রজাতের কুল চাষ করেন তিনি। কুল বাগান সেচ, পরিচর্যা, সার-কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি দিয়ে এ পর্যন্ত ২ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। কৃষক জহুরুল ইসলাম জানান, গেল দুই সপ্তাহ আগে স্থানীয় ব্যাপারীর কাছে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকায় তার কুল বাগান বিক্রি করেছেন। এতে তার প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা লাভ হয়েছে। গত মৌসুমে একই পরিমাণ জমিতে কুল চাষ ৭ লাখ টাকার ওপরে লাভ হয়। কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি গত ৯/১০ বছর যাবৎ তার নিজস্ব জমিতে কুল চাষ করেন। তিনি বলেন, মাত্র চার থেকে সাড়ে চার মাসের ফফল হিসেবে কুল চাষ খুবই লাভজনক। তার গ্রামের বহু কৃষকই এখন কুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
জেলার তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ি গ্রামের কুল চাষি পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস জানান, ১০ থেকে ১২ বছর যাবৎ কুল চাষ করছেন। চলতি মৌসুমে ৪ বিঘা পরিমাণ জমির বাগানে নারকেল কুল, থাই আপেল কুল, বলসুন্দরী, টক কুল চাষ করেছেন। এ বছর প্রতিটি গাছে কুলের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিঘাতে ১০০ থেকে ১২০ মন পর্যন্ত উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন এই কৃষক। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৪ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছেন তার বাগান থেকে। প্রতিদিন ব্যাপারীরা তার বাগান থেকে কুল নিয়ে যাচ্ছে পাইকারিতে। ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।
কৃষক পাঞ্জাব আলী জানান, বাগানে এখনো পর্যন্ত যে পরিমাণ কুল দেখা যাচ্ছে তাতে আরো অন্তত ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা বিক্রি হতে পারে বলে আশা করছেন। এতে সব ধরনের খরচ তুলেও অন্তত ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় হবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা সদরের সুলতানপুর বড় বাজারের ফল বিক্রি আড়তদার মতিয়ার রহমান জানান, তার আড়তে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ বিভিন্ন প্রকার কুল কেনাবেচা হচ্ছে। এর মধ্যে থাই আপেল, বলসুন্দরী, মিষ্টি বিলাতি ও বাউকুল উল্লেখযোগ্য।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাইকাররা তার আড়ত থেকে কুল নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রতি মণ কুল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা দরে।
কেকে/এএস