মাগুরায় শালিখার লোকালয়ে দুটি মুখপোড়া হনুমান দেখা গেছে। যাদের একটি পূর্ণবয়স্ক এবং অন্যটি অপেক্ষাকৃত ছোট। দলচ্যুত হয়ে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা। সরেজমিনে দেখা যায়, কখনো উঁচু গাছে, কখনো লোকালয়ে, কখনো আবার উঠে পড়ছে কারো বাসা-বাড়ির ছাদ বা টিনের চালের ওপর।
গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যপ্রাণী দুটি শালিখার বিভিন্ন এলাকায় বিচরণ করছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো মানুষের ওপর আক্রমণ করে নাই প্রাণী দুটি। হনুমান দুটিকে দেখতে ঘটনাস্থলে ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক জনতা।
হনুমানগুলো যেখানে যাচ্ছে তার পিছু পিছু ছুটছে ছোট বড়সহ বিভিন্ন বয়সি মানুষ। মাঝে মাঝে প্রাণীগুলোকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ছেন তারা।
এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছে হনুমান দুটি। ফলে প্রাণভয়ে বারবার স্থান পরিবর্তন করছে ক্ষুধার্ত এ বন্যপ্রাণী দুটি। মানুষের দেওয়া পাউরুটি, কলা, বিস্কুট, কেক গাছের পাতা খেয়ে কোনো রকমে জীবন বাঁচছে তাদের।
মুখপোড়া হনুমান মূলত প্রাইমেট প্রজাতির একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। গাছের পাতা খেয়ে জীবনধারণ করায় এদের পাতা বানরও বলা হয়। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, চীন, ভারত এবং মিয়ানমারে এদের দেখতে পাওয়া যায়।
এদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল হচ্ছে ক্রান্তিয় ও নিরক্ষীয় শুষ্ক বনভূমি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, শিল্পায়ন ও কৃষিক্ষেত্রের সম্প্রসারণের ফলে বনভূমির পরিমাণ হ্রাসের কারণে এদের অস্তিত্ব বর্তমান সংকটের মুখে পড়েছে। যার দরুন পুরো বিশ্বে স্তন্যপায়ী এই প্রাণীগুলো আজ বিপন্ন বলে বিবেচিত।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুসারে হনুমান দুটিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ পূর্বক যথা স্থানে অবমুক্তকরণ করলে জনসাধারণের নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
আড়পাড়া ইউনিয়নের কুমারকোটা গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, আজ তিন-চার দিন ধরে হনুমান দুটি আমাদের এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রতিদিন বিকাল হলেই সাইফুলের কনফেকশনারির দোকানের সামনে এলে স্থনীয়া এদের পাউরুটি ও কেক খেতে দেয়।
শ্রী ইন্দ্রনীল গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সংগঠক শ্রী ইন্দ্রনীল বলেন, আমাদের এলাকায় সাধারণত বৃহত্তর যশোরের মনিরামপুর ও কেশবপুর থেকে হনুমানগুলো আসে।
মূলত আবাসস্থল বিপর্যায় ও খাদ্য সংকটে এরা লোকালয়ে আসে। যেহেতু হনুমান একটি বন্যপ্রাণী তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে জনসাধারণের উৎপাত থেকে রক্ষা করে প্রাণী দুটিকে যথাস্থানে অবমুক্তকরণ করতে সংশ্লিষ্ট সব দফতরের ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।
বন্যপ্রাণী দুটি রক্ষার্থে কোনো ব্যবস্থা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শালিখা উপজেলা বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, বন্যপ্রাণী রক্ষার্থে আমাদের দফতর থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না এবং তাদের কোনো খাবারও দেওয়া হয় না তবে যে এলাকায় দেখা যায় সেই এলাকার লোকগুলো যেন বন্যপ্রাণীদের উৎপাত না করে সে ব্যাপারে জনসাধারণকে সচেতন করা হয়।
কেকে/এএস