পানিসম্পদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান বলেন, চলতি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা চুড়ান্ত প্রস্তুত করা হবে। ইতোপূর্বে চায়নার সাথে যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা চুক্তি হয়েছিল তা টেকসই হতো না তাই পরিকল্পনায় কী থাকবে কী থাকবে না এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং আপনাদের মতামত নিয়ে আবারো ‘পাওয়ার চায়না’ এ প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করব।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে তিস্তা নিয়ে করণীয় শীর্ষক গণশুনানী কাউনিয়ার তিস্তা সেতু পাড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ গণশুনানিতে তিস্তা পাড়ের মানুষ তাদের দুঃখ-দূদর্শার কথা দুই উপদেষ্টাগণকে জানিয়েছেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া।
এ সময় সৈয়দা রিজওয়ান হাসান জানান, এ অঞ্চলের ৪৫ কিলোমিটার নদী ভাঙন এলাকা, তারমধ্যে ২২ কিলোমিটার বেশি নদী ভাঙন প্রবণ এলাকা তাই মার্চ মাসের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করে নদী ভাঙন রোধে কাজ শুরু করার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি।
তিনি বলেন, তিস্তা কোন দেশের একক নদী না। কেউ যদি মনে করে তিস্তা কারো একক নদী তা হবে তাদের ভুল ধারনা। কেউ যদি আমাদের বন্ধু হয় তা হলে বর্ষাকালে পানি ছাড়ার আগে কেন আমাদের জানান না।
তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আপনাদের অনেক প্রত্যশা, কিন্ত আমাদের কাছে তেমন অর্থ নেই, তবু তিস্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া বলেন, বিগত সরকার প্রধান বলে গেছেন আমরা যা ভারতকে দিয়েছি ভারত তা চিরকাল মনে রাখবে, কিন্ত ভারত মনে রাখার মতো এদেশকে কিছুই দিইনি। আমরা ভারতকে চাপ দিয়ে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায় করব। তিস্তা যেন এ এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়।
তিনি বলেন, তিস্তার চরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হবে, ফসলের ন্যায্য মূল্য যাতে কৃষকেরা পায় সে জন্য এ এলাকায় কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ, তিস্তা নদীতে আরো একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। উত্তরাঞ্চলে কৃষি শিল্পের বিপ্লব ঘটানো হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ভারত পানি আটকিয়ে তিস্তা মরুভূমিতে রুপান্তর করে। নদী হওয়ার কথা আর্শিবাদ সে তিস্তা নদী হয়েছে আমাদের অভিশাপ। আমরা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করছি। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে। চলতি সালের ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. রবিউল ফয়সালের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব একেএম তারিকুল আলম, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি, আলহাজ্ব এমদাদুল ভরসা, একে এম মমিনুল হক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিদুল হক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. আতিক মোজাহিদ, আবু সাঈদ লিয়ন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা পাড়ের মানুষ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে নানা কর্মসূচী পালন করে আসলেও বিগত সরকারের আমলে তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণ তিস্তা শুকিয়ে কঙ্কাল সার ধু-ধু বালুচরে পরিনত হয়েছে। তিস্তার ভাঙনে শতশত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব ভূমিহীনে পরিনত হয়েছে। বন্যা, খড়াসহ নানা দুর্যোগে পতিত হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ।
গণশুনানিতে এলাকার বাসিন্দারা বলেন, আমরা ত্রান চাই না, মিথ্যা আশ্বাস শুনতে চাই না, আমরা দল বুঝি না, নেতা বুঝি না, আমরা পরিকল্পিত তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন চাই।
তারা বলেন, দল যার যার তিস্তা সবার, তিস্তা ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদী। রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার ১২টি উপজেলার ৪৪ ইউনিয়ন মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। এ নদীর সাথে ২২টি নদী যুক্ত। সেই নদী সাধারণ মানুষের মরণফাঁদে পরিনতি হয়েছে। এ নদী শাসননের মাধ্যমে ১১৫ কিলোমিটার নদীর গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ ভাঙন প্রতিরোধ, বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হ্রাস, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী খনন, নদী প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ও নদী পুনরুদ্ধার, চ্যানেল ড্রেজিং-এর মাধ্যমে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, খননকৃত মাটি ভরাট স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল, পাওয়ার প্লান্ট ও স্যাটেলাইট টাউন সেচ কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন, শুস্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ নিশ্চিতকরণ প্রকল্প এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দাবি জানান।
কেকে/এমএস